প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ড্রয়ের পরই গৃহদাহের খবর আসছে বাংলাদেশ দলের ভেতর থেকে। সিনিয়র-জুনিয়রে বিভাজন! খোদ ব্রিটিশ কোচই টেনে দিয়েছেন এই বিভাজন রেখা!
দুই বছর আগে সর্বশেষ সাফে দুর্দান্ত এক বাংলাদেশকে দেখেছিল দক্ষিণ এশিয়া। গ্রুপ পর্ব থেকে ফাইনাল- সাবিনাদের কাছে পাত্তাই পায়নি কোনও দল। প্রথমবার ভারতকে হারানোর সুখস্মৃতি যেমন ছিল, তেমনি প্রথমবার সাফের শিরোপা জিতে নজর কেড়েছিলেন সাবিনা খাতুন, মারিয়া মান্দারা।
দুই বছরে অনেক বদলেছে জাতীয় নারী দল। এবার সাফ ফুটবলে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সেই চিরচেনা বাংলাদেশকে। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে হারতে হারতে কোনও রকমে ড্র করে টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে যাওয়া অবস্থা তৈরী হয়েছে সাবিনাদের। কেন এমন দুরবস্থা? কারণ দলের ভেতর বিভাজন। বাংলাদেশের ব্র্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের পছন্দ জুনিয়রদের। অপছন্দ সিনিয়রদের, তাদের মধ্যে তিনি খুঁজে বেড়াচ্ছেন সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের প্রভাব! আগের কোচের সঙ্গে মেয়েদের সম্পর্কটা ঠিক নিতে পারছেন না বাটলার। সেটা স্পষ্টভাবে না বললেও তিনি ঘুরিয়ে বলেছেন জুনিয়রদের প্রতি তার পক্ষপাতের কথা, “আমি চাই নতুন মেয়ে উঠে আসুক। কিন্তু এটা এখানকার অনেকেই চায় না।”
তবে গোলাম রব্বানী ছোটন না থাকলেও তার প্রভাব রয়েছে সিনিয়রদের মধ্যে। কারণ এই সিনিয়র ফুটবলারদের নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন তিনি। তাই সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকার, মারিয়া মান্দা, মাসুরা পারভীন, সানজিদা আক্তারদের সঙ্গে একটি গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাই সিনিয়ররা যে কোনও সমস্যায় শরণাপন্ন হন গোলাম রব্বানী ছোটনের। সাবিনাদের নিয়মিত কথা হয় সাবেক এই কোচের সঙ্গে।
২০ অক্টোবর পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতলেই সেমিফাইনাল, এমন সমীকরণের ম্যাচে একাদশে ব্রিটিশ কোচ রাখেননি দলের চার সিনিয়র খেলোয়াড় কৃষ্ণা রানী, মারিয়া মান্দা, মাসুরা পারভীন ও সানজিদা আক্তারদের। সিনিয়র ও জুনিয়র বিভাজনটা কোচই স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
তাই সিনিয়রের সঙ্গী হওয়া এক জুনিয়র রুমমেট পাকিস্তান ম্যাচের আগের ভীষণ ভয়ে ছিলেন। কারণ সিনিয়র খেলোয়াড়টি ফোনে কথা বলছিলেন কোচ ছোটনের সঙ্গে। এই দেখে জুনিয়র ফুটবলারটি শঙ্কায় পড়েছিলেন একাদশে জায়গা হারানোর। ফোনে তার বাবা ওই ফুটলারকে অভয় দিয়ে বলেন, “তুমি তোমার নিজের খেলাটা খেলবে। সিনিয়র, জুনিয়র গ্রুপিং নিয়ে তুমি ভাববে না। “
দলের সিনিয়রদের সঙ্গে যে জুনিয়রদের একটা দূরত্ব হয়ে গেছে, বিষয়টি স্পষ্ট হল আরেক সিনিয়র ফুটবলার মনিকা চাকমার কথায়। সোমবার হোটেল সোলটিতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “আসলে আমাদের হেড কোচ (পিটার বাটলার) মারিয়া, মাসুরা আপু, কৃষ্ণাদিকে পছন্দই করে না। তাদের নামাবেই না সে। আমরা সিনিয়র খেলোয়াড়েরা গিয়ে কথাও বলেছিলাম যে কেন নামাচ্ছেন না, কী কারণ, আমাদের টিমের স্বার্থের জন্য ওদের প্রয়োজন আছে। আমরা যদি জিততে চাই, তাহলে ওদের অবশ্যই প্রয়োজন আছে। এই কথাগুলো বলেছিলাম আমরা সিনিয়র কয়েকজন গিয়ে। এরপরও উনি মানেননি।”
মনিকাও সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনকে যে কতটা মিস করেন সেটাও পরে বলেন, “স্বপ্না আপু যেহেতু আগের সাফে ছিল, এবার নেই, আঁখি (খাতুন), ছোটন (গোলাম রব্বানী) স্যার এবং এবার যেহেতু (পাকিস্তানের বিপক্ষে) মাসুরা (পারভীন) আপু, মারিয়া (মান্দা), সানজিদা (আক্তার), কৃষ্ণা (রানী সরকার) ছিল না (সেরা একাদশে), ফলে আমাদের উপর একটু চাপ ছিল।”
সিনিয়রদের নিয়েই ভারতের বিপক্ষে একাদশ যেন কোচ গড়েন, সেটাই চাওয়া মনিকার, “প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারত খুবই শক্তিশালী। যদি এই ম্যাচে সিনিয়র খেলোয়াড় ২-৩ জন (বেশি) নামানো হয়, তাহলে ভালো একটা ফল পেতে পারি।”