Beta
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫

বিয়ে-জন্মদিনে গান-বাজনার খরচ কত?

band-dol-music
[publishpress_authors_box]

সামনেই এইচএসসি পড়ুয়া মিতুয়ার জন্মদিন। তার ইচ্ছা ১৭তম জন্মদিনটি বন্ধুদের নিয়ে হুলুস্থুল করে কাটাবে, জন্মদিন জমে উঠবে গানে গানে। 

এই তো ক’দিন আগেই পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদে কার যেন জন্মদিনে খুব গান বাজনা হচ্ছিলো! কোত্থেকে যেন একটা ব্যান্ড পুরো সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি বাংলা-হিন্দি আর ইংরেজি জনপ্রিয় গানগুলো খুব জমিয়ে গাইলো। বাদ গেলোনা ‘কে-পপ’ও। 

এমন কিছু কি মিতুয়ার জন্মদিনেও হতে পারেনা? কিন্তু তার তো চেনা নেই এমন কোন ব্যান্ড! 

বাবাকে বলতেই তার চোখ কপালে। তবু একমাত্র কন্যা যেহেতু, আশফাক সাহেব অফিসের কলিগদের কাছে খোঁজ লাগালেন। জানতে চাইলেন, খরচ ও আয়োজন সম্পর্কে।

পাঠক, উপরের গল্পটি কাল্পনিক হলেও এমন পরিস্থিতি ঘটছে প্রায়ই। 

শুধু কি জন্মদিন? বিয়ে, বিবাহবার্ষিকী, বন্ধুদের পুনর্মিলনী- সবখানে চলতে পারে জমজমাট ব্যান্ডের গান। ওয়েস্টার্ন ইন্সট্রুমেন্টের সাথে লাইভ চলতে পারে রুপালি দিনের গান থেকে শুরু করে এমনকি হালের জনপ্রিয় সব গান। 

আর যে ব্যান্ডগুলো এমন ইভেন্টগুলোতে আসর মাতিয়ে রাখেন তাদের বলা হয় ‘খ্যাপের সেটআপ’। যারা এই ‘খ্যাপ’ গানবাজনা করেন, তাদের বেশিরভাগই কোন না কোন ব্যান্ড দলের সদস্য। সাধারণত অত্যন্ত দক্ষ মিউজিশিয়ান হয়ে থাকেন তারা। 

কিন্তু এমন একটা ‘সেটআপ’ ভাড়া করলে কেমন খরচ হতে পারে সে ব্যাপারেই একটু ধারণা নেওয়া যাক।

এ বিষয়ে আমরা কথা বলছিলাম ঢাকা শহরের ব্যস্ত মিউজিশিয়ান এবং মিউজিক প্রডিউসার আইনাস তাজওয়ারের সঙ্গে। ঢাকা শহরের আনাচেকানাচে ‘খ্যাপ সেটআপ’ নিয়ে গান গাওয়ার দারুণ সব অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। বেশিরভাগই গায়ে হলুদ এবং অল্প কিছু জন্মদিনের। 

তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম এমন ইভেন্টগুলোতে বাজাতে তারা কেমন সম্মানী নিয়ে থাকেন?

প্রশ্নের খুব খোলামেলা জবাব দিলেন আইনাস। বললেন, “এ ধরনের অনুষ্ঠানগুলোতে শ্রোতারা ৬০-৭০ দশকের সাড়া জাগানো গানগুলো থেকে শুরু করে হালের জনপ্রিয় গান, সবই শুনতে চান। ফলে স্টেজে চটজলদি যে কোন গান বাজিয়ে দেওয়ার মতো দক্ষ মিউজিশিয়ান আমাদের দরকার হয়। ফলে প্রতি মিউজিশিয়ানকে আমাদের সেটআপে সম্মানী দিতে হয় ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা।”

কী কী ইন্সট্রুমেন্ট চলে এসব সেটাপে? এমন প্রশ্নের জবাবে বললেন “গিটার, বেইজ, কি-বোর্ড তো ম্যান্ডেটরি। তার সাথে চাহিদা অনুযায়ী ড্রামস অথবা অক্টোপ্যাড।”

কথা বলতে বলতেই হিসাব চলছিলো মাথায়। কণ্ঠশিল্পীসহ জনপ্রতি মিউজিশিয়ানকে যদি কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা (গিটার, বেইজ, কি-বোর্ড,ড্রামস/অক্টোপ্যাড, ভোকাল) করে দিতে হয় তাহলে সব মিলিয়ে সম্মানী দিতে হয় ১৫ হাজার টাকা। 

এরপর আইনাস আরও যুক্ত করলেন, “শহরের অভিজাত জায়গাগুলোতে সম্মানীর এই রেট কিছুটা বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা সম্মানী দিতে হতে পারে।”

তবে কৌতুহল জাগানিয়া তথ্যটি দিলেন সাউন্ড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এম অ্যান্ড এম (প্রাক্তন সাউন্ড মেশিন) এর সত্ত্বাধিকারী মো. পলাশ মুন্সী। পলাশের ভাষায়, “মেল (পুরুষ) ভোকালের রেট যদি ৩ হাজার টাকা হয়, তাইলে ফিমেইল ভোকালের খরচ অনেক সময় ২ হাজার টাকা বেশি দিতে হয়।”  

এ-তো গেলো ‘সেটআপ’ কিংবা শিল্পীদের মোট সম্মানী বাবদ খরচ। সাউন্ড সিস্টেমেরও যে একটা খরচ আছে ওটাই তো হিসাবে রাখতে হবে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পলাশ মুন্সী বলেন, “সাধারণত জন্মদিনের কিংবা বিয়ে, এইসব অনুষ্ঠানে দুই পেয়ারের সাউন্ড প্যাকেজের দরকার হয়। প্যাকেজে সাউন্ড ছাড়াও আরও থাকে দুইটা মনিটর, কয়েকটি কেবল, মাইক্রোফোন, বেইজ অ্যাম্প এবং ড্রামস সেট। লাইটিং সরঞ্জামসহ এই প্যাকেজের খরচ পড়বে ১৫ হাজার টাকা। আর লাইটিং ছাড়া পড়বে ১২ হাজার টাকা।”

তবে সাউন্ড দুই পেয়ারের বদলে চার পেয়ার হলে বেড়ে যাবে খরচ। বলেন পলাশ। 

তার ভাষায়, “চার পেয়ার সাউন্ড ভাড়া নিলে লাইটিং সরঞ্জামসহ এ প্যাকেজের ভাড়া পড়বে ২০ হাজার টাকা।” 

তিনি জানালেন, ফ্ল্যাট বাড়ির অনুষ্ঠানগুলোয় শব্দ দূষণ পরিহার করতে অনেকেই আজকাল স্বল্প সাউন্ড সিস্টেমে আয়োজন সারতে চান। সেক্ষেত্রে তিনি এক পেয়ার সাউন্ড ভাড়া নেওয়াই যুক্তিযুক্ত মনে করেন। আর এক্ষেত্রে প্যাকেজের খরচ পড়বে ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা।     

কিন্তু পাঠক, আপনি যদি একেবারেই এসব বাদ্য-বাজনা আর সাউন্ড সিস্টেমের হ্যাপায় না গিয়ে নিরিবিলি আয়োজন সাড়তে চান তবে? 

তবে আপনার বন্ধু, আত্মীয় আর পরিবারের সদস্যদের ওপরই ভরসা রাখুন। 

এদের মধ্য থেকেই খুঁজে নিন আপনার একদিনের জেমস, বাচ্চু, মিলা কিংবা বাপ্পী লাহিড়ি, অথবা শ্রেয়া ঘোষালদের।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত