বৃষ্টির বাগড়া এখন বাংলাদেশের জন্য বিরক্তির কারণ। সেই বিরক্তি ছড়িয়ে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের চতুর্থ দিন শেষদিকের খেলা কেড়ে নিল বৃষ্টি। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় বন্ধ হওয়ার পর খেলা আর শুরু করতে পারেননি আম্পায়াররা। বৃষ্টির হওয়ার শঙ্কা আছে টেস্টের পঞ্চম দিনেও। তবে বাংলাদেশ বৃষ্টির বাধা ছপিয়ে তাকিয়ে টেস্ট জয়ে।
প্রবল বজ্রপাত ও বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বিনা উইকেটে ৪২ রান করেছিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক হোয়াইটওয়াশ উপহার দিয়ে সিরিজ জিততে আর ১৪৩ রান দরকার বাংলাদেশের।
পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৭২ রানে অলআউট হলে বাংলাদেশের জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৮৫ রান। চতুর্থ দিন সফরকারীদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর আগেড রাওয়ালপিন্ডির আকাশ কালো করে দেয় মেঘ। তাই পাকিস্তান পেসারদের সামাল দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছিল জাকির হাসান ও সাদমান ইসলামের জন্য।
আবহাওয়ার ঝড়ের আগে পাকিস্তান পেসারদের ওপর ঝড় তোলেন জাকির হাসান। তার কাউন্টার অ্যাটাকে নতুন বল সামলানোর ভয় জয় করে বাংলাদেশ। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত অসাধারণ খেলছিলেন জাকির। এই বাঁহাতি মাত্র ২৩ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় করেছেন অপরাজিত ছিলেন ৩১ রানে। সাদমান অপরাজিত ছিলেন ৯ রানে।
বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ না হলে বাংলাদেশের জয়ের টার্গেট আরও কমে আসতো। রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে আগেই পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম জয়ের ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ। এবার বিদেশের মাটিতে ২০০৯ সালের পর নিজেদের চেয়ে এগিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের হাতছানি বাংলাদেশের সামনে।
জয়ের জন্য ১৮৫ রান চাই বাংলাদেশের
বিদেশের মাটিতে আরেকটি সিরিজ জিততে খুব বড় চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে না বাংলাদেশকে। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট জিততে ১৮৫ রান চাই সফরকারীদের। পাকিস্তানকে তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭২ রানে অলআউট করে লিড দুইশো পার হতে দেননি বাংলাদেশ পেসাররা।
মীর হামজাকে শেষ উইকেট হিসেবে ৪ রানে ফিরিয়ে টেস্টে প্রথমবার ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন হাসান মাহমুদ। ৪৩ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। অপরপ্রান্তে অপরাজিত ছিলেন ৭১ বলে ৪৭ রান করা সালমান আলি আগা। এর আগে ২০০৯ সালে উইন্ডিজের মাটিতে ২-০ তে টেস্ট জিতেছিল বাংলাদেশ।
এছাড়া জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একাধিকবার অ্যাওয়ে টেস্ট সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। তবে নিজেদের চেয়ে র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজ জয়ের সাফল্য সেই ২০০৯ সালের পর আর দেখাতে পারেনি। এবার সেই কীর্তি গড়ার হাতছানি।
দুই পেসারের মধ্যে লড়াই চলছিল ৫ উইকেট নেওয়ার। দুজনের জন্যই যা টেস্টে প্রথম অভিজ্ঞতা। মাত্র ২ টেস্টে ৬ উইকেট পাওয়া রানা এর আগে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। সেরা বোলিং ছিল ৮৭ রানে ৩ উইকেট। এই ম্যাচে ৪ শিকার নিয়ে আগেই সেরা বোলিংয়ের কীর্তি গড়েছেন।
এদিকে রানার চেয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিজ্ঞ হাসানও খেলেছিলেন ২টি টেস্ট। আগের ম্যাচ দুটিতে হাসান নিয়েছিলেন ৯ উইকেট। সেরা বোলিং ফিগার ছিল ৬৫ রানে ৪ উইকেট। ম্যাচে সর্বোচ্চ ৬ উইকেট।
হাসানের জোড়া আঘাত
দুর্দান্ত বোলিং পরিবর্তন আর দারুণ ভাগ্যের সমর্থন। সব মিলিয়ে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের চতুর্থ দিন বাংলাদেশ উজ্জ্বল হয়ে থাকছে। লাঞ্চের পরপরই হাসান মাহমুদ বোলিংয়ে এসে জোড়া আঘাত দিলেন পাকিস্তানকে। তাতে ১৩৯ রানে ৮ উইকেট নেই পাকিস্তানের। লিড দাঁড়িয়েছে ১৫১ রান।
লাঞ্চের পর খুব ঠান্ডা মাথায় খেলছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সালমান আগা। রানের জন্য তাড়াহুড়ো ছিল না তাদের। নাহিদ রানার বল আয়ত্বে এনেছিলেন দুই ব্যাটারই। এমন সময় এই প্রান্ত থেকে নাহিদকে সরিয়ে হাসান মাহমুদকে আক্রমণে আনেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
প্রথম ওভারেই জোড়া আঘাত দিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান এই পেসার। রিজওয়ানকে দারুণ সেটআপে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত করেন। প্রথম চারটি বলের সবকটি দিয়েছেন ইনসুইংগার। পঞ্চম বলটি দিলেন আউট সুইং। আগের মতো ডিলেভারি হবে ভেবে ব্যাট চালিয়ে ভুল করেন রিজওয়ান।
৭৩ বলে ৪৩ রানে থামে তার ইনিংস। পরের বলেই বোলার মোহাম্মদ আলিকে প্রায় একাই রকম ডিলেভারিতে স্লিপে নাজমুলের ক্যাচ বানান।
চতুর্থ দিন এগিয়ে থেকে লাঞ্চে বাংলাদেশ
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে ব্যাকফুটে রেখে চতুর্থ দিন লাঞ্চ বিরতিতে গিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। নাহিদ রানার বোলিং তোপে স্বাগতিকরা দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৭ রান তুলতেই হারিয়েছে ৬ উইকেট। পাকিস্তানের লিড এখন ১২৯ রান।
ক্রিজে অপরাজিত আছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সালমান আলি আগা। একবার জীবন পাওয়া রিজওয়ান করেছেন ৫৩ বলে ৩৮ রান। সালমান ১৪ বলে করেছেন ৭ রান। দুজনের ৩৬ রানের জুটিতে এই সেশনের মাঝের বিপদ কাটিয়েছে পাকিস্তান।
তবে পাকিস্তান ব্যাটিং লাইনে এটাই শেষ স্বীকৃত জুটি। এরপর বোলাররা ক্রিজে আসবেন। এই জুটি ভাঙলে দ্রুত পাকিস্তানকে অলআউট করার সুযোগ থাকছে বাংলাদেশের সামনে।
সেশনে মোট ৪ উইকেট নিয়েছে বাংলাদেশ। তরুণ পেসার নাহিদ টানা তিন ওভারে তিন উইকেট নিয়ে কক্ষচ্যুত করেন পাকিস্তানকে। পাকিস্তানের সেরা তিন ব্যাটার শান মাসুদ, বাবর আজম ও সৌদ শাকিলের উইকেট নিয়েছেন রানা। অপর উইকেট নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ।
টেস্টের তৃতীয় দিন লাঞ্চের আগেই বাংলাদেশের ছয় ব্যাটারকে ফিরিয়েছিল পাকিস্তান। এবার বাংলাদেশ তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় উইকেট তুলে নিল লাঞ্চের আগে।
রানার তিন উইকেটে রাওয়ালপিন্ডিতে বাঘের গর্জন
রাওয়ালপিন্ডির পিচে ঝঢ় তুলেছেন নাহিদ রানা। পাকিস্তানের খুররম শাহজাদের জবাব দিচ্ছেন তিনি। টানা তিন ওভারে তিন উইকেট নিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছেন পাকিস্তান ব্যাটিং লাইন। শান মাসুদ ও বাবর আজকে ফেরানোর পর এবার সৌদ শাকিলকে সাজঘরে পাঠালেন।
এবার উইকেটের পেছনে ক্যাচ। রাউন্ড দ্যা উইকেট থেকে নাহিদের গুডলেন্থ থেকে এক্সট্রা বাউন্স করা ডিলেভারি সামলাতে পারেননি শাকিল। তার ব্যাট ছুঁয়ে বল চলে যায় লিটন দাসের গ্লাভসে।
সৌদ শাকিলকে হারিয়ে ৮৬ রানে ৬ উইকেটে পরিণত পাকিস্তান। মাত্র ৯৮ রানের লিড তাদের।
দুই ওভারে দুই উইকেট রানার
পুরোনো বল হাতে এই টেস্ট সিরিজে দারুণ করছেন নাহিদ রানা। তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ ক্লান্তে হলে তাকে বোলিংয়ে আনেন নাজমুল হোসেন শান্ত। অধিনায়কের আস্তার প্রতিদান দিয়েছেন এই তরুণ। পাকিস্তানের কিবপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে আবারও আস্থার প্রতিদান দিলেন রানা।
দুই ওভারে দুই উইকেট নিয়ে ব্যাকফুটে ঠেলে দিলেন পাকিস্তানকে। তুলে নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ দুই উইকেট। পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদ ও বাবর আজমকে ফেরালেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে। রানার ঝলকে ৬১ রানে উইকেট থেকে মুহূর্তেই ৭১ রানে ৫ উইকেটে পরিণত পাকিস্তান।
শুরুর উইকেট ছিল শান মাসুদের। বাঁহাতি ব্যাটার রানার অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে স্কায়ার কাট করতে গিয়ে লিটনের হাতে ক্যাচ দেন ৩৪ বলে ২৮ রান করে। এক ওভার পরর বাবর অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন ১৮ বলে ১১ রান করে।
বাবরকে ফেরানোর পরের বলেই মোহাম্মদ রিজওয়ানের উইকেটও নিতে পারতেন রানা। কিন্তু আগের ক্যাচ ধরা প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো সাদমান ইসলাম এবার বল তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হন।
তাসকিন এনে দিলেন প্রথম সাফল্য
পেসারদের কাজটা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। রাওয়ালপিন্ডির গরম ক্লান্ত করেছে তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদদের। এদিকে সূর্যের তাপে পিচের ময়েশ্চার চলে গিয়ে নতুন বলের সুইংও পাওয়া যাচ্ছিল না। নতুন বল হলেও বাংলাদেশ পেসারদের স্বাচ্ছন্দে সামলে চলেছিলেন সাইয়াম আইয়ুব ও শান মাসুদ।
তবে হতাশ হয়নি বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদকে একপ্রান্ত দিয়ে আক্রমণে রেখেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সেই তাসকিনই প্রথম সাফল্য এনে দিলেন। ব্যাটারের ভুলেই পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের চতুর্থ দিন প্রথম উইকেট পেল বাংলাদেশ।
তাসকিনের বলে সাইয়াম ড্রাইভ শট খেলতে গিয়ে ভুল করলেন। সরাসরি ক্যাচ তুলে দিলেন শান্তর হাতে। ৩৫ বলে ৩ চারে ২০ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নিলেন সাইয়াম। ২৩ রানে অপরাজিত থাকা শান মাসুদের সঙ্গে ৩৮ রানের জুটি গড়েছেন এই ওপেনার।