পাকিস্তানের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে এক স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দেশটিতে এবার বিশেষ কিছু করতে চান। অধিনায়কের সেই স্বপ্নের পক্ষে বাজি ধরার লোক তখন একটিও পাওয়া যেত না। খোদ শান্তই এতটা ভেবেছিলেন কি! হয়তো না। অথচ সিরিজ শেষে আজ শান্তর স্বপ্ন সত্যি হলো।
পাকিস্তানে বিশেষ কিছুই করছে বাংলাদেশ। শুধু বিশেষ বললে শান্তদের এই কীর্তির ওজনকে কম করা হয়। ইতিহাসে প্রথমবার পাকিস্তানকে টেস্ট সিরিজে হারানোর আনন্দটা এখন এক রেকর্ড। রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টে ৬ উইকেটে জিতে স্বাগতিকদের ২-০ তে হোয়াইটওয়াশ করেছেন শান্তরা।
পাকিস্তানে দেওয়া ১৮৫ রানের লক্ষ্য ৬ উইকেট হাতে রেখে অতিক্রম করে বাংলাদেশ। অপরাজিত ছিলেন ২২ রান করা মুশফিকুর রহিম ও ২১ রান করা সাকিব আল হাসান।
এই অর্জনে বিদেশের মাটিতে তৃতীয়বার টেস্ট সিরিজ জয়ের কীর্তি এসেছে। ২০০৯ সালে উইন্ডিজে, ২০২১ সালে জিম্বাবুয়েতে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার পাকিস্তানে এবং অবিশ্বাস্য ভাবে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে এই জয় বিদেশে বাংলাদেশের অষ্টম টেস্ট জয়। নিজেদের ইতিহাসে ২১তম টেস্ট জয়। মোট ১৪৪ টেস্ট খেলে ১৮ ড্র ও ১০৫ হারের বিপরীতে ২১টি টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের সঙ্গে এ জয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে আট থেকে সপ্তম অবস্থানে উঠেছে বাংলাদেশ। ৬ ম্যাচে ৩টি করে জয় ও হারে শান্তদের পয়েন্ট এখন ৩৩। দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে পয়েন্ট এগিয়ে থাকলেও প্লেয়িং পারসেন্টেজে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। প্রোটিয়াদের পারসেন্টেজ ৩৮.৮৯, বাংলাদেশের ৩৫.০০। পাকিস্তান ৬ ম্যাচ থেকে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে আটে।
লাঞ্চের পরই ফিরলেন শান্ত
বিরতি সবসময়ই ধারাবাহিকতায় ছেদ টানে। তেমনই এক ছেদ বাধা পড়ল বাংলাদেশের এগিয়ে চলায়। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের পঞ্চম দিন লাঞ্চ বিরতির পর ফিরলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
দলীয় ১২২ রানে থেকে লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ। শান্ত ছিলেন ৩৬ রানে অপরাজিত। ক্রিজে ফিরে দুই রান যোগ করেছেন কেবল। সালমান আলি আগার বলে ডিফেন্স করেছিলেন। অথচ সফট হ্যান্ডে খেলতে না পারায় বল তার ব্যাটে লেগে চলে যায় শর্ট লেগে দাঁড়ানো ফিল্ডারের হাতে। ৩৮ রানে ফেরেন শান্ত।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশ ৩ উইকেটে ১৩৫ রান তুলেছে। মুমিনুল ২৪ ও মুশফিকুর রহিম ৪ রানে অপরাজিত। জয়ের জন্য আর ৫০ রান চাই বাংলাদেশের।
শান্ত-মুমিনুলের ব্যাটে জয় দেখছে বাংলাদেশ
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের পঞ্চম দিন বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে পারেনি পাকিস্তান। উল্টো কঠিন সময়ে মাথায় ঠান্ডা রেখে জয়ের দিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হকের ব্যাটে দৃপ্ত পদেই এগিয়ে চলছে সফরকারীরা।
জয় থেকে আর ৬৬ রান দূরে বাংলাদেশ। শান্ত-মুমিনুলের ৫২ রানের জুটিতে পাকিস্তানকে ঐতিহাসিক হোয়াইটওয়াশ করার স্বপ্নটা সত্যি হতে চলেছে। টেস্টের পঞ্চম দিন লাঞ্চ বিরতি পর্যন্ত বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ১২২। শান্ত ৬৮ বলে ৩৩ ও মুমিনুল ৪৬ বলে ২০ রানে অপরাজিত।
লাঞ্চের আগে প্রথম ঘন্টায় দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে ম্যাচে লড়াইয়ের ইঙ্গিত দেয় পাকিস্তান। শান্ত-মুমিনুল দুই নতুন ব্যাটারকে বেশ চাপেও রেখেছিল তারা। কিন্তু শুরুর নড়বড়ে সময়ে কোন বাজে শট খেলেননি দুজনে। ভালো বল দেখে খেলে ন্সায়ু চাপ সামলেছেন।
উইকেটে সেট হওয়ার পর শান্ত কিছু উচ্চাভিলাষী শট খেলেছেন। মোহাম্মদ আলি ও আবরার আহমেদের বলে উইকেট ছেড়ে বড় শট খেলার চেষ্টা করেছেন। সববারই আউট হওয়া থেকে বেঁচেছেন শান্ত। তবে মুমিনুল এমন ঝুঁকি নেননি। ম্যাচ শেষ করে আসার সংকল্প তার। অধিনায়ক শান্তও মুমিনুলের মতো সংকল্প রাখলে ৮ উইকেটের জয় পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সঙ্গে ২-০ তে সিরিজও।
ফিরলেন দুুই ওপেনার
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের পঞ্চম দিন ঘন্টা পার হতে বাংলাদেশের দুই ওপেনারকে সাজঘরে পাঠালো পাকিস্তান। জাকির হাসান ৪০ ও সাদমান ইসলাম ২৪ রানে থেমেছেন। দুই ওপেনারের বিদায়ে বাংলাদেশ ৭০ রানে হারালো ২ উইকেট। জয়ের জন্য ১১৫ রান প্রয়োজন বাংলাদেশের।
দিনের শুরু থেকে সাবধানী ছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। জাকির আগের দিনের মতো ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পথে হাঁটেননি। তবুও মীর হামজার একটি দুর্বোধ্য ডিলেভারিতে থামতে হয় জাকিরকে। অফস্ট্যাম্পের বলটি বাকি ডিলেভারির মতো ছিল না। একটু আইটসুইং হওয়ায় লাইন মিস করে বোল্ড হন জাকির।
এদিকে সাদমানের আউটটি ছিল পাকিস্তান বোলারদের পরিকল্পনার ফল। সাদমান ড্রাইভ করতে পছন্দ করেন। তাই এই ব্যাটারকে অন দি আপ ড্রাইভ খেলানোর প্রলোভন দেখান খুররম শাহজাদ। ফাঁদে পড়ে ড্রাইভ করেন সাদমান। ফলাফল মিড অফে সরাসরি শান মাসুদের হাতে ক্যাচ।
দুই ওপেনারের বিদায়ে উইকেটে আছেন ৪ রান করা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও ১ রান করা মুমিনুল হক।
বৃষ্টি নেই, ঠিক সময়েই শুরু পঞ্চম দিনের খেলা
বৃষ্টি ও বজ্রপাতে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের পঞ্চম দিন পুরোটাই ভেস্তে যাওয়ার পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু ভাগ্য আজ বাংলাদেশের সঙ্গে। তাই আকাশ মেঘলা থাকলেও রাওয়ালপিন্ডিতে বৃষ্টি হয়নি মঙ্গলবার। তাই যথা সময়ে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় টেস্টের পঞ্চম দিনের খেলা।
ম্যাচের চতুর্থ দিন শেষ সেশনের প্রায় পুরোটা সময় বৃষ্টিতে খেলা হয়নি। দিনশেষে সংবাদ সম্মেলনে হাসান মাহমুদ বলেছিলেন চতুর্থ দিনই টেস্ট জেতার চেষ্টা ছিল বাংলাদেশের। তবে হাসানদের ভয়ের কিছু নেই। পঞ্চম দিনে বৃষ্টির আশঙ্কা অনেকটাই কেটে গেছে।
১৮৫ রানের তাড়ায় নামা দুই বাংলাদেশ ওপেনার দিনের শুরুটাও ভালো করেছেন। এই সিরিজে প্রথমবার পঞ্চাশ রানের জুটি গড়েছেন দুজনে। জাকির হাসান অপটরাজিত ৩৬ রানে আর সাদমান ইসলাম ব্যাট করছেন ১৬ রানে। তাদের ব্যাটে বাংলাদেশের স্কোর ৫৪। ইতিহাস গড়া জয়ের জন্য আর ১৩১ রান চাই।
এর আগে সোমবার পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি শহরের আবহাওয়া পূর্বাভাসে মঙ্গলবার ভোরের দিকে বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। পুরো দিনে ৮৩ ভাগ বৃষ্টি হতে পারে। দিনের সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বৃষ্টি থামার পূর্বাভাসও দেওয়া হয়েছে। আবার বেলা ১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হতে পারে।
ভাগ্যের সহায় পঞ্চম দিন এমন কিছু হয়নি। এবার বিদেশের মাটিতে আরেকটি সিরিজ জয় ও পাকিস্তানকে প্রথমবার হোয়াইটওয়াশের অপেক্ষা বাংলাদেশের।
