সংক্ষিপ্ত স্কোর : দ্বিতীয় দিন শেষে
ভারত ১ম ইনিংস : ৩৭৬/ ১০ (অশ্বিন ১১৩, জাদেজা ৮৬; হাসান ৫/৮৩, তাসকিন ৩/৫৫)। বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ১৪৯/১০ (সাকিব ৩২, মিরাজ ২৭, লিটন ২০; বুমরাহ ৪/৫০)। ভারত ২য় ইনিংস : ৮১/৩ (গিল ৩৩*, পান্ত ১২*; তাসকিন ১/১৭, নাহিদ ১/১২, মিরাজ ১/১৬)।
ম্যাচ : ভারত ৩০৮ রানে এগিয়ে।
ভারতের ৩৬৭ রানের জবাবে বাংলাদেশের ১৪৯। চেন্নাই টেস্টে স্টেডিয়ামের উইকেট দ্বিতীয় দিন খুব কঠিন ছিল না। বাংলাদেশ ব্যাটাররাই কঠিন করেছেন। উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার অভ্যাস বাংলাদেশের জন্য দিনটিতে হতাশা বাড়িয়ে গেল।
দিনের শুরুতে ও শেষে ভারতের প্রথম ও দ্বিতীয় ইনিংসের রান বাঁধনহারা হতে দেননি বোলাররা। তাসকিন-হাসান-নাহিদ-মিরাজরা ভারতের দুই ইনিংসেই ভালো করেছেন। অথচ ব্যাটাররা বোলারদের পরিশ্রমের প্রতিদান দিতে পারেননি।
আগের দিন ৬ উইকেটে ৩৩৯ রানে শেষ করে ভারত। দ্বিতীয় দিন এই রানের সঙ্গে মাত্র ৩৭ রান যোগ করতে পেরেছিল তারা। তাসকিনের তিন ও হাসানের এক শিকারে ভারতকে থামতে হয় ৩৭৬ রানে। ভারতের মাটিতে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন হাসান।
দিনের শেষদিকে দ্বিতীয় ইনিংসে ঝড়ো শুরু করেছিল ভারত। কিন্তু নাহিদ রানা, তাসকিন ও মিরাজ তিন উইকেট নিয়ে ভারতের রানের লাগাম ধরেছেন। শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেটে ৮১ রানে ভারত দ্বিতীয় দিন শেষ করে। ৩৩ রানে অপরাজিত আছেন শুভমান গিল ও ১২ রানে ঋষভ পান্ত। ভারতের লিড ৩০৮ রানের।
ভারতের দুই ইনিংসেই বাংলাদেশ পেসারদের কৃতিত্ব দিতে হবে। কিন্তু ব্যাটাররা বরাবরের মতো হতাশ করেছেন। মুমিনুল হকের আউটটাকেই সামনে টানা যায়। উইকেটে এসেছেন মাত্রই। একটু জড়তা থাকবে। তাই বলে এমন গা ছাড়া ভাব নিয়ে ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটারের বেশি গতির বল ফেস করা যায় না।
ফলাফল যা হওয়ার তাই হলো। প্রথম বলেই আকাশ দ্বীপের ইনসুইংগারে বোল্ড হন মুমিনুল। গা ছাড়া ভাবে আউট হওয়ার তালিকায় ওপেনার সাদমান ইসলামের নামও তোলা যায়। ব্যাটাররা ব্যাট দিয়েই বল ফেস করবেন, এটাই নিয়ম। কিন্তু জাসপ্রিত বুমরাহর অফস্ট্যাম্পের বলে ছেড়ে দিতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হলেন সাদমান।
সবচেয়ে বাজে আউট হয়েছেন সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস দুজনেই। ৪০ রানে ৫ উইকেট হারানো দলকে কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন একসঙ্গে। উইকেটে সেট হয়ে বেশ স্বচ্ছন্দেই রান তুলছিলেন। অথচ ইচ্ছাকৃত বিপজ্জনক শট খেলার লোভ সামলাতে পারেননি।
রবীন্দ্র জাদেজার অফস্ট্যাম্পের বল সুইপ করে খেলতে গিয়ে লং লেগে ক্যাচ তুলেছেন লিটন। ২০ রানের ইনিংস শেষ হওয়ার সঙ্গে ৫১ রানের জুটিও থামে। দুই ওভার পর সাকিব পরিস্থিতি বুঝে খেলতে ব্যর্থ হন। সোজা ব্যাটে না খেলে রিভার্স সুইপ করেন জাদেজাকে। বল ব্যাটের নিচের কানায় লেগে তার বুট ছুঁয়ে আকাশে উঠে যায়। পান্ত সহজ ক্যাচ নিয়ে ৩২ রান করা সাকিবকে ফেরান।
সাকিব এমনিতে সুইপও খেলেন কম। কিন্তু চেন্নাই টেস্টে নিজের উইকেট ছুঁড়ে দিলেন রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে। এই চার ব্যাটারের উইকেট ছুঁড়ে আসায় সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ১৪৯ এর বেশি করতে পারেনি। জাকির হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তদের উইকেটে সেট হয়ে আউট হওয়াটাও কম হতাশার নয়।
শেষদিকে ২৭ রানে অপরাজিত থাকা মেহেদি হাসান মিরাজ বোলারদের নিয়ে ছোট ছোট জুটি গড়েন। হাসান মাহমুদকে (৯) নিয়ে ২০, তাসকিন আহমেদকে (১১) নিয়ে ১৮ ও শেষ উইকেটে নাহিদ রানাকে (১১) নিয়ে ১৯ রানের ছোট জুটিগুলোতে কোনরকমে দেড়শ রানের কাছে যেতে পেরেছে বাংলাদেশ।
তখনও ফলোঅনের এড়াতে প্রয়োজনীয় ১৭৭ রানের চেয়ে ২৮ রান দূরে ছিল সফরকারীরা। কিন্তু এই সুযোগ না নিয়ে রোহিত দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে যান। চেন্নাইতে টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে চাননি ভারত অধিনায়ক। বাংলাদেশকেই ফেলবেন সেই অগ্নিপরীক্ষায়।
চেন্নাই টেস্টে বাংলাদেশ বোলারদের আগুনে বোলিংয়ের তেজ রং হারিয়েছে ব্যাটারদের ব্যর্থতায়। সঙ্গে বাংলাদেশকেও পিছিয়ে দিয়েছে অনেক।