সরকার বাংলাদেশকে পুরোপুরি ভারতের কাছে জিম্মি করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্প্রতি ভারতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই দিনের সফর থেকে সরকার কী এনেছে, এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ঢাকার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি একথা বলেন। নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। যে সব চুক্তি ও সমঝোতা করা হচ্ছে, এর কোনওটাই বাংলাদেশের পক্ষে নয়। একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছে, তিনি আবার আমাদের ছবক দেন। আমরা নাকি চুক্তি আর সমঝোতার পার্থক্য বুঝি না।
“আমি শুধু বলতে চাই দেশের সঙ্গে বেঈমানী করবেন না। মানুষকে বোকা বানিয়ে, তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে এমন চুক্তি ও সমাঝোতা সই করবেন না যেগুলো জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে।”
সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “কী এনেছেন এবার ভারত থেকে? পানির কথা কোথাও নেই, যা আছে তা ভয়াবহ। বলা হচ্ছে, তিস্তাচুক্তির জন্য ভারত ভালো প্রস্তাব দিয়েছে, চীনও দিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেছেন, দুটোর মধ্যে দেখব কোনটা ভালো হয়। আবার এ-ও বলেছেন, ভারত যে প্রস্তাব দিয়েছে ভারতকে যদি কাজটা দেই, তাহলে পানির সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমরা তো সব বোকা মানুষ এই দেশে বাস করি? বাংলাদেশকে পুরোপুরি ভারতের কাছে জিম্মি করে দিচ্ছেন।”
এসময় তিনি কথা বলেন সীমান্ত হত্যা নিয়েও। বিএনপি মহাসচিব বলেন, “প্রতিদিন সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা করা হয়। পৃথিবীতে কোন বন্ধু দেশ আছে যেখানে সীমান্তে গুলি করে বন্ধু দেশের নাগরিকদের হত্যা করা হয়? এ জবাব দিতে হবে। সরকার আত্মরক্ষার্থে যেসব কথা বলেন, এসব বলে জনগণকে বোকা বানাতে পারবেন না।”
খালেদা জিয়াকে কেন বন্দী করে রেখেছেন, সরকারের কাছে এমন প্রশ্ন রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “কোনও সমস্যা যদি না থাকে তাহলে মুক্তি দেন। সেদিকে তো আপনারা যাচ্ছেন না। আমরা এ-ও বলেছি, আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমরা শুধু চাই, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আপনারা সমস্ত নির্বাচন ব্যবস্থা দখল করে নেবেন, সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করবেন না, সেটা আমরা হতে দেব না।”
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রকে আলাদা করে দেখা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বেলেন, “এই আন্দোলন শুধুমাত্র বিএনপির আন্দোলন হওয়া উচিত নয়। এই আন্দোলন সমগ্র দেশের মানুষের।”
সেখানে উপস্থিত গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “ভারতের সঙ্গে যত চুক্তি করেছে সবই দেশের স্বার্থবিরোধী। শুধুমাত্র তাই নয়; এসব দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ। গণতন্ত্রের প্রশ্নের এই সরকারকে আর ছাড় দেওয়া যাবে না। এই আন্দোলন শুধুমাত্র নয়াপল্টনে নয়; সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।”
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান আজিজ আহমেদ, পুলিশের সাবেক প্রধান বেনজীর আহমেদসহ আরও অনেকে আছেন। এরা সবাই শেখ হাসিনার প্রোডাক্ট। দুর্নীতিবাজদের আড়তদার শেখ হাসিনা। তাকে সরাতে হবে। তা না হলে দেশ রক্ষা করা যাবে না।”
গত শুক্রবার দিবাগত রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে অ্যাম্বুলেন্স ও জীবনরক্ষাকারী ওষুধ পেতে ইউনাইটেড হাসপাতালের সহযোগিতা চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “মৃত্যুর শঙ্কা থাকলেও এ হাসপাতাল এবং তাদের কোনও চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেব না। এটাই আমার প্রতিবাদ।”