এক দেশ থেকে অন্য দেশে জীবিকার সন্ধানে যেয়ে থাকে মানুষ। কিন্তু লস অ্যাঞ্জেলেসের শহর সান্তা মোনিকার ভিভিয়ান রবিনসন সেই তালিকার নন। তিনি দেশে ছেড়ে অন্যত্র কাজ করেছেন নিজের শখ পূরনের জন্য। আর সেই শখ তার পূরন হয়েছে। জীবনের সপ্তম অলিম্পিক দেখতে এখন তিনি প্যারিসে।
৬৬ বছর বয়সী ভিভিয়ান এখন প্যারিসের নতুন আকর্ষণ। অলিম্পিকের শহরের রাস্তায় পুরো একটি কিউরিও শপ নিয়ে হাঁটছেন যেন। ১৯৮৪ লস অ্যাঞ্জেলেস তার প্রথম অলিম্পিক। সেই থেকে সাত অলিম্পিক দেখছেন ভিভিয়ান।
সব আসরের ক্লিপ, পিন, কিউরিউ, ছবি, ক্যাপ বা অন্য স্মরনীকা এবং অবশ্যই পতাকা নিয়ে ঘুরছেন প্যারিসের রাস্তায়। তার ক্যাপে লাগানো আছে বিস্তর পিন ও ক্লিপ। ক্যাপ ও জামায় নানা রংয়ের সেই সব স্মরনীকার জন্য তার দিকে মানুষের আকর্ষণও হচ্ছে বেশ। সবাই ছবি তুলছেন, হাসি মুখে তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।
বলা হচ্ছিল অলিম্পিকে আসতে ভিভিয়ানের বাড়তি উপার্জনের কথা। এই প্যারিসে আসার খরচ যোগাতে ভিভিয়ান ইতালির ভেনিসে গিয়েছেন। সেখানে নেকলেস বানিয়ে দর্শনার্থী-পর্যটকদের কাছে বিক্রী করতেন। করেছেন দুটো চাকরি। সব কিছুই প্যারিস অলিম্পিকে আসার জন্য।
ভিভিয়ান যে সফল হয়েছেন বলাই যায়। প্যারিস অলিম্পিকের মোট ৩৮ ইভেন্টের টিকিট কিনেছেন তিনি। জিমন্যাসটিকস ইভেন্টের গ্যালারীতে গিয়ে টম ক্রুজ, লেডি গাগা ও স্নুপ ডগদের দেখে উচ্ব্বসিত হয়েছেন। তার কাছে মনে হয়েছে পয়সা উসুল।
অবশ্য আক্ষেপের জায়গাও আছে। ১৬০০ ডলার দিয়ে অলিম্পিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের টিকিট কিনেছিলেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সঠিক সময়ে প্রবেশ করতে পারেননি স্টেডিয়ামে। তাই উদ্বোধন দেখতে হয় স্টেডিয়ামের বাইরে একটি বড় স্ক্রীনে। অবশ্য এ নিয়ে আক্ষেপ নেই ভিভিয়ানের। জীবনে কিছু পেতে হলে কিছু খোয়াতে হয় – এই মন্ত্র তিনি বিশ্বাস করেন।
ভিভিয়ানের অলিম্পিক প্রীতি শুরু হয় শখ থেকেই। তার মা ১৯৮৪ অলিম্পিকে অ্যাথলেটদের দোভাষী হিসেবে কাজ করেছেন। ওই সময় অ্যাথলেটদের কাছ থেকে অলিম্পিক স্মরনীয়কা পিন ও ক্লিপ পেতেন। সেসব দিতেন ভিভিয়ানকে। ভিভিয়ানের ওই জিনিসগুলো এতই ভালো লাগে নিজে সংগ্রহ করা শুরু করেন পরের অলিম্পিক গুলোতে।
১৯৯৬ আটলান্টা অলিম্পিকে অ্যাথলেটদের জন্য নেকলেস বানিয়ে নিয়ে যেতেন ভিভিয়ান। এর পরিবর্তে অর্থ নিতেন না, অ্যাথলেটদের থেকে পিন ও ক্লিক সংগ্রহ করতে তিনি। এবার যেমন আইফেল টাওয়ারের ক্লিপ, অলিম্পিকের এয়ার রিং, ব্রেসলেট শোভা পাচ্ছে তার কানে-হাতে ও ক্যাপে।
আটলান্টা, সিডনি, অ্যাথেন্স, রিও, লন্ডন ও প্যারিস অলিম্পিক দেখা ভিভিয়ান থামতে নারাজ। এই আসর শেষ হলে ঝাঁপিয়ে পড়বেন ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকের জন্য। যেখান থেকে শুরু হয়েছিল তার অলিম্পিক দেখার শখ। অবশ্য সুসংবাদ এই যে ওই আসর তার দেশেই।