২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নারায়ণগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের ‘মিষ্টি মেয়ে’ বলে খ্যাত কবরী। একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। ‘মিয়াভাই’ খ্যাত এই নায়ক ঢাকা-১৭ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে আগ্রহের কমতি নেই তারকাদের। আবার নির্বাচনী প্রচারাভিযানেও সরব পদচারণা থাকে রুপালী পর্দার তারকাদের। পিছিয়ে থাকেন না টেলিভিশন জগতের তারকারাও। তবে এবারের দ্বাদশ সংসদের প্রচারণায় সেই অর্থে দেখা মিলছে না মিডিয়া-জগতের তারকাদের। সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন দৌড়ে পিছিয়ে থাকায় নির্বাচনের প্রচারে তাদের আগ্রহ কমতির দিকে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালে। সেবারের নির্বাচনী প্রচারণায় ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল, মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, চিত্রনায়ক রিয়াজ, ফেরদৌস, অভিনেতা জাহিদ হাসান, মাহ্ফুজ আনাম, শহীদুল আলম সাচ্চু, চিত্রনায়িকা অরুণা বিশ্বাস, নূতন, শমী কায়সার, রোকেয়া প্রাচী, বিজরী বরকত উল্লাহ, তারিন জাহান, তানভীন সুইটি, আজমেরী বাঁধন, শামীমা তুষ্টি, চলচ্চিত্র অভিনেতা সাইমন সাদিক, কণ্ঠশিল্পী এস ডি রুবেলের সরব প্রচারণায় সরগরম ছিল নির্বাচন।
প্রায় শতাধিক অভিনয়শিল্পী প্রায় প্রতিদিন যেতেন বিভিন্ন এমপি প্রার্থীদের জনসংযোগে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচার উপকমিটির সঙ্গে মিলে প্রচারণার নিত্যনতুন কৌশলেও ছিল তাদের সরব উপস্থিতি। একাদশের নির্বাচনে তারকাদের নিয়ে নির্বাচনে ভোট চাওয়ার পৃথক টেলিভিশন বিজ্ঞাপনও তৈরি করা হয়। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি নিয়ে শিল্পীরা গানও বাধেন। সরকারের করা উন্নয়নের বিষয়ে পকেট সাইজ পুস্তিকাও প্রচার করা হয়। তবে এবারের নির্বাচন প্রচার প্রচারণায় মাঠে দেখা মিলছে কম তারকাদের।
একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত এমপি অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। যদিও তিনি তার মেয়াদ পুরো করতে পারেননি। দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে চলতি বছরের ১৫ মে তিনি মারা যান।
একাদশের সংসদে সংসদ সদস্য হিসেবে ছিলেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী আসাদুজ্জামান নূর। আসাদুজ্জামান নূর নীলফামারী-২ আসন ২০০১, ২০০৮ ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য ছিলেন।
এছাড়া মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন সংগীতশিল্পী মমতাজ নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৯ সালে সংরক্ষিত নারী আসনের মধ্য দিয়ে সংসদে যাওয়ার সুযোগ পান। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।
একাদশের সংসদে ছিলেন আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী সূর্বণা মোস্তফা। সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন।
একাদশের সংসদে মনোনয়ন কেনার দৌড়েও ছিলেন একঝাক তারকা। তালিকায় ছিলেন অভিনেত্রী তারানা হালিম, শমী কায়সার, চিত্রনায়ক শাকিল খান, মনোয়ার হোসেন ডিপজল, রোকেয়া প্রাচী, জ্যোতিকা জ্যোতি, সিদ্দিকুর রহমানসহ আরো অনেকেই।
এবারের দ্বাদশ সংসদের মনোননয়ন কেনার দৌড়েও ছিলেন অনেক তারকা। চলচ্চিত্র-টেলিভিশনের যেসব তারকা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন রোকেয়া প্রাচী, চিত্রনায়ক ফেরদৌস, নায়ক মাসুম পারভেজ রুবেল, শাকিল খান, চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি, ‘ম্যাডাম ফুলি’ খ্যাত চিত্রনায়িকা সামসুন নাহার সিমলা, অভিনেত্রী শমী কায়সার, অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান, কণ্ঠশিল্পী এসডি রুবেল উল্লেখযোগ্য।
যদিও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন মিলেছে কেবল অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর, ফেরদৌস আহমেদ এবং জনপ্রিয় বাংলা লোকগানের সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম। নায়ক ফেরদৌস এবারই প্রথম নৌকার টিকিট পেলেন।
ফেনী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইএর সহসভাপতি ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সার। যদিও শেষ পর্যন্ত মনোনয়নের প্রাপ্তির নাম তুলতে পারেননি এই তারকা। সকাল সন্ধ্যার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এবার নির্বাচনী জনসংযোগে যাচ্ছি, তবে কম। আওয়ামী লীগের প্রচার উপকমিটির সদস্য হিসেবে ‘কনটেন্ট’ টিমে ভূমিকা রাখছি।’