পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়ে আদিবা ইসলাম। এ বছরই প্রথম স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। ভর্তির পরদিনই ছিল প্রথম স্কুল। এজন্য আদিবা সকালে মায়ের সঙ্গে বের হয়। মায়ের হাত ধরেই যাচ্ছিল স্কুলে। কিন্তু হঠাৎ মায়ের হাত ছেড়ে দৌড় দেয় রাস্তা পার হওয়ার জন্য। এমন সময়ে একটি অটোরিকশা এসে চাপা দেয় তাকে। গুরুতর আহত হয় আদিবা। হাসপাতালে নেওয়ার পার চিকিৎসক জানান, মেয়েটি বেঁচে নেই।
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া বাজারের এক মাদ্রাসার সামনের সড়কে গতকাল সোমবার এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্বজনরা জানিয়েছেন, আদিবা ইসলাম নাগেরপাড়া ইউনিয়নের রাণীসার এলাকার বোরহান উদ্দিন ও মাহমুদা বেগম দম্পতির ছোট মেয়ে। নাগেরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়েছিলে তাকে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাণীসার গ্রামের বোরহান উদ্দিন ঢাকায় ভূমি মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন। চার সন্তান নিয়ে স্ত্রী মাহমুদা আক্তার নাগেরপাড়া বাজারে ভাড়াবাসায় থাকেন। ভর্তির পর মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো নাগেরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল সে। মায়ের হাত ধরেই হাঁটছিল আদিবা।
সকাল ১০টার দিকে স্কুলে থেকে আনুমানিক ৩০০ মিটার দূরে থাকতেই মায়ের হাত ছেড়ে দৌড় দেয়। এ সময় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা তাকে চাপা দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা আদিবাকে উদ্ধার করে গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দুর্ঘটনার পর অটোরিকশা চালক পালিয়ে যান। পুলিশ অটোরিকশাটি জব্দ করেছে।
আদিবার মা মাহমুদা বেগম বলেন, “হাত ধরেই স্কুলে নিয়ে যাচ্ছিলাম। গতকালই তাকে স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। হঠাৎ করেই আমার হাত ছেড়ে দিয়ে রাস্তা পার হতে দৌড় দিয়েছিল। মুহূর্তের মধ্যেই অটোরিকশাটি আদিবাকে চাপা দেয়।”
নাগেরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর কবির বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনায় আমাদের স্কুলের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। গতকালই স্কুলে এসে মেয়েটিকে তার মা ভর্তি করেছিলেন। আজ সে প্রথম স্কুলে আসছিল।”
আদিবার বড় ভাই ইমরান হোসেন বলেন, “আমরা চার ভাইবোন। বাবা ঢাকায় চাকরি করেন। মায়ের সঙ্গে আমরা সবাই গ্রামে থাকি। আদিবা আমাদের সবার চোখের মণি ছিল। আজ ছিল তার জীবনের প্রথম স্কুল। সে এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে, ভাবতে পারিনি।”
গোসাইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুষ্পেন দেবনাথ বলেন, অটোরিকশার নিচে চাপা পড়ে আদিবা নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। চালক পালিয়ে গেলেও অটোরিকশাটি জব্দ করা হয়েছে। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে।