Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার

‘যাই ঘটুক’ ইউনূস সরকারকে সমর্থনের অঙ্গীকার সেনাপ্রধানের

ইউনূস-সেনাপ্রধান
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
[publishpress_authors_box]

রাষ্ট্রের মূল সংস্কার কাজগুলো শেষ করতে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন বা যাই ঘটুক না কেন তিনি এ সমর্থন দিয়ে যাবেন।

আগামী ১৮ মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সেনাবাহিনী এই সমর্থন দেবে বলেও জানান তিনি।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ওয়াকার-উজ-জামান। সোমবার ঢাকায় সেনা সদরদপ্তরে বসে এ সাক্ষাৎকার দেন তিনি, যেটিকে ‘বিরল’ হিসেবে উল্লেখ করেছে বার্তাসংস্থাটি।

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, সরকার সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার একটি রূপরেখাও তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, “যাই ঘটুক না কেন আমি তার পাশে থাকব। যাতে তিনি তার মিশন সম্পন্ন করতে পারেন।”

ড. ইউনূসকে বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের অগ্রদূত হিসেবে উল্লেখ করেছে রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ড. ইউনূস ১৭ কোটি মানুষের দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করে বিচার বিভাগ, পুলিশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি রয়টার্সকে বলেন, সংস্কারের পর এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ ঘটা উচিৎ। তবে এর জন্য ধৈর্য ধরার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দেন তিনি।

সেনাপ্রধান বলেন, “আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে আমি বলব যে এই সময়সীমার মধ্যেই আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিৎ।”

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে প্রতি সপ্তাহেই বৈঠক করেন জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, “আমাদের মধ্যে সম্পর্ক খুব ভালো। আমি নিশ্চিত যে আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি তাহলে ব্যর্থ হওয়ার কোনও কারণ নেই।”

দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রচেষ্টায় সেনাবাহিনী সহযোগিতা করছে বলেও জানান তিনি।

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সোমবার রাজধানী ঢাকায় তার কার্যালয়ে রয়টার্সকে সাক্ষাতকার দেন। ছবি: রয়টার্স।

সাক্ষাতকারে সেনাবাহিনীর রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের প্রসঙ্গও উঠে আসে। এই প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, তার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাজনীতিতে কোনও হস্তক্ষেপ করবে না।

“আমি এমন কিছু করব না যা আমার প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর হবে। আমি একজন পেশাদার সৈনিক। আমি আমার সেনাবাহিনীকেও পেশাদার রাখতে চাই।”

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবিত সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেনাবাহিনীর ভেতরেও অন্যায়ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান সেনাপ্রধান।

এরই মধ্যে কয়েকজনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীতে কর্মরত কোনও সদস্য দোষী সাব্যস্ত হলে, আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”

কিছু সামরিক কর্মকর্তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে সরাসরি নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলোতে কাজ করার সময় নিয়মবহির্ভুত কাজ করে থাকতে পারেন বলেও মন্তব্য করেন সেনাপ্রধান।

এসময় সেনাবাহিনীকে সবসময় রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে তার ইচ্ছার কথাও বলেন তিনি। “সেটা কেবল তখনই সম্ভব হবে, যখন প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের মধ্যে ক্ষমতার কিছুটা ভারসাম্য থাকবে। সেক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি প্রেসিডেন্টের অধীনে রাখতে হবে”; যোগ করেন সেনাপ্রধান।

বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীগুলো বর্তমানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। আর এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থাকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হাতে। অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে এতে পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

সেনাপ্রধান বলেন, “সামগ্রিকভাবে সেনাবাহিনীকে কখনোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিৎ নয়। সৈনিকদেরকেও অবশ্যই রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত