দুজনই ব্রাজিল জাতীয় দলের খেলোয়াড়। সমৃদ্ধ ক্লাব ফুটবলও। সবচেয়ে বেশি শিরোপা জেতা দানি আলভেস খেলেছেন বার্সেলোনা, সেভিয়া, পিএসজি, জুভেন্টাসের মত ক্লাবে। রবিনহো খেলেছেন রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার সিটি, এসি মিলানে।
নিয়তি দুজনকে মিলিয়েছে আরেকখানে। ধর্ষণের অভিযোগে জেলে যেতে হয়েছে দুজনকেই। তবে আইনের ফাঁদ আর ফাঁকটা দুজনের জন্য আলাদা। এতে সৌভাগ্যবান আলভেস আর দূর্ভাগা রবিনহো।
নাইটক্লাবে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ বছর ৬ মাসের জেল হয়েছিল আলভেসের। স্পেনে এক বছর কারাবাসের পর আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে গেছেন এই ব্রাজিলিয়ান। এজন্য আদালতে জামানত দিতে হয়েছে ১ মিলিয়ন ইউরো।
স্পেনের আইনটাই এরকম। যদিও এ নিয়ে সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। ‘‘আইনের সুবিধা ধোনিদের জন্য’’-এরকম স্লোগানে উত্তালও ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
রবিনহোরও টাকার কমতি নেই। তবে ব্রাজিলের আইনে সেই টাকা দিয়ে কোনও সুবিধা পাচ্ছেন না রবিনহো।
কোন অভিযোগে গ্রেপ্তার
২০১৩ সালে ইতালিতে এক নারীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের অভিযোগে ৯ বছরের জেল হয়েছিল রবিনহোর। রায় ঘোষণার আগে ইতালি ছেড়ে ব্রাজিলে চলে যান তিনি।
ইতালির সর্বোচ্চ আদালত ব্রাজিল সরকারকে আহ্বান জানান রবিনহোকে গ্রেপ্তার করে তাদের দেশে পাঠাতে।
ব্রাজিল সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি। এরপর অন্তত ব্রাজিলে ৯ বছরের সাজা কার্যকরের অনুরোধ করা হয়। ব্রাজিলের আদাললের সম্মতিতে পরে গ্রেপ্তার করা হয় রবিনহোকে।
ব্রাজিলের আইন কি বলে
ধর্ষণ মামলায় বেশ কড়া ব্রাজিলের আইন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে জামিনে থাকার কোন উপায় নেই। রবিনহোর বিরুদ্ধে অভিযোগ যেহেতু ইতালিতে প্রমাণিত, তাই গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি।
জেল থেকে মুক্তি পেতে আপাতত দুটি পথ খোলা তার জন্য। প্রথমে আপিল করতে হবে সুপিরিয়র কোর্ট অব জাস্টিসে। অথবা আপিল করতে পারবেন সুপ্রিম ফেডারেল কোর্টে । রবিনহো সবসময়ই বলে এসেছেন, ধর্ষণ করেননি তিনি। ইতালির নাইটক্লাবে যা হয়েছে, পুরোটা ছিল সম্মতিসূচক।
এটা প্রমাণ করতে পারলে আপিলে জিতবেন রবিনহো। সেক্ষেত্রে মুক্তি পেতে বাধা নেই। তবে আপিলে হেরে গেলে কি হবে?
আপিলে হারলে শাস্তির মেয়াদের অন্তত ৪০ শতাংশ সময় কাটাতে হবে জেলে। তারপর আবেদন করতে পারবেন জামিনের। তাই আপাতত রবিনহোর আইনজীবিদের লক্ষ্য আদালতে আপিলে জেতা। সেখানে হারলে অন্তত ৪ বছর জেল খাটতে হবে তাকে।
কারাগারে আছে ফুটবল মাঠ
সাও পাওলো রাজ্যের ট্রেমেম্ব শহরের ড. হোসে অগাস্তো সালগাদো কারাগারে এখন বন্দী রবিনহো। সাও পাওলোর কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার। ১৯৫৫ সালে চালু করা এই কারাগারে থাকতে পারেন ২৯৬ জন বন্দী। প্রতিটি সেলে একসঙ্গে থাকতে পারেন ছয়জন বন্দী । কারাগারটির সেলগুলো ৮ বর্গমিটারের।
এখানে আছে একটি ফুটবল মাঠ। কারাবন্দীদের মধ্যে চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করা হয় সেখানে। লাইব্রেরি, খেলার ঘর, গির্জা এবং সবজির বাগানও আছে এখানে।
পরিবারের সদস্যরা দেখা করতে পারেন প্রতি সপ্তাহের শনি ও রবিবার। সুযোগ-সুবিধা যাই থাক, জেল তো জেলই!