Beta
শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪

র‍্যাব হেফাজতে নারী আসামির মৃত্যু, বিচার চান স্বামী

ss-Bhoirab-Upazila-health-complex-11--180524
Picture of আঞ্চলিক প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ

আঞ্চলিক প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পুত্রবধু হত্যা মামলায় আটক সুরাইয়া খাতুন (৫২) নামের এক আসামির র‌্যাবের হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে এ ঘটনার বিচার চেয়েছেন তার স্বামী আজিজুল ইসলাম (৬০)।

ভৈরব ক্যাম্পের র‍্যাব বলছে, শুক্রবার (১৭ মে) সকাল ৬টার দিকে সুরাইয়া খাতুন বুকে চিনচিন ব্যথার কথা জানালে ১৫ মিনিটের মধ্যে তাকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।

আর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলছেন, শুক্রবার সকাল ৭টায় র‍্যাব সদস্যরা সুরাইয়া খাতুন নামের এক নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাকে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে।

এ ঘটনার ১২ ঘণ্টা পর জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহানের উপস্থিতিতে হাসপাতালে পড়ে থাকা মরদেহের সুরতাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সুরাইয়া খাতুন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বরুনাকান্দি গ্রামের আজিজুল ইসলামের স্ত্রী। সুরাইয়া তার পুত্রবধু রেখা আক্তার (২০) হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।

ওই মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, দেড় বছর আগে নান্দাইল উপজেলার চরবেতাগৈর ইউনিয়নের চরভেলামারি গ্রামের কৃষক হাসিম উদ্দিনের মেয়ে রেখা আক্তারের সঙ্গে তাইজুল ইসলাম লিমনের (২৩) বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে লিমন দুই লাখ টাকা যৌতুকের জন্য রেখাকে চাপ দিতে থাকে। এরপর অটোরিকশা কিনতে রেখার পরিবার লিমনকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেয়। তবে সে অটোরিকশা কেনেনি। পরে আরও এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে তা দিতে অস্বীকার করে রেখার পরিবার। এরই মধ্যে রেখা অন্তঃসত্বা হয়ে পড়ে।

অভিযোগে বলা হয়, গত ২৬ এপ্রিল রাতে রেখাকে যৌতুকের টাকার জন্য তার স্বামী, শ্বশুর ও শ্বাশুড়ি নির্যাতন করে আহত করে। তারপর রাতেই তাকে আহত অবস্থায় ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। এসময় রেখার স্বামী ও শ্বাশুড়ি হাসপাতালে মরদেহ রেখে পালিয়ে যায়। তবে শ্বশুর আজিজুল ইসলামকে হাসপাতালের কর্মচারীরা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। ওইদিন রেখার শ্বশুর বাড়ির লোকজন প্রচার করে রেখা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু ওইসময় চিকিৎসক জানান, রেখার গলায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে।

খবর পেয়ে রেখার পরিবারের লোকজন মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে ময়নাতদন্তের পর দাফন করে। তারপর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে অপমৃত্যু মামলা করেন।

এরপর গত ২ মে রেখার মা রমিছা বেগম ময়মনসিংহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে তিনজনকে (স্বামী, শ্বশুর ও শ্বাশুড়ি) অভিযুক্ত করে একটি হত্যা মামলা করে।

আদালতের বিচারক আমলে নিয়ে নান্দাইল থানার ওসিকে মামলাটি এফআইআর করে তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে গত ১৩ মে নান্দাইল থানায় মামলাটি নেওয়া হয়। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে নান্দাইল থানার এস আই নাজমুল হাসান।

এরপর গত বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাতে সুরাইয়া খাতুনকে ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার সামনে থেকে ও তার ছেলে তাইজুল ইসলাম লিমনকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে আটকের পর গভীর রাতে ভৈরব র‍্যাব ক্যাম্পে নেওয়া হয়।

আজিজুল ইসলাম বলেন, গত বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সন্ধ্যায় নান্দাইল মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসান খবর দিয়ে সুরাইয়া ও তাকে খবর দিয়ে থানায় নেয়। এরপর সাদা কাগজে দুজনের সই নিয়ে ১০ মিনিটে ঘুরিয়ে তাদের চলে যেতে বলেন। পরে তারা থানার গেইট দিয়ে বের হলে ৪ সদস্যের র‍্যাবের টিম দুজনের পথরোধ করে। এসময় আজিজুল ইসলাকে ছেড়ে দিয়ে তার সুরাইয়া খাতুনকে র‍্যাব ভৈরব ক্যাম্পে নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে কথা বলতে নান্দাইল মডেল থানার এসআই নাজমুল হাসানকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি তা ধরেননি।

আজিজুল ইসলাম বলেন, “থানা থেকে বের হলেই র‍্যাবের একটি দল আমাকে রেখে সুরাইয়াকে নিয়ে যায়। আমার স্ত্রী সুস্থ ছিল। র‍্যাবের নির্যাতনে ওর মৃত্যু হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।”  

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ বলেন, শুক্রবার (১৭ মে) সকাল ৭টায় র‍্যাব সদস্যরা সুরাইয়া খাতুন নামের এক নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাকে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক বিনিত দাস তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল বলেও জানান চিকিৎসক।

জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহান বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে র‍্যাব হেফাজতে থাকা নারী আসামি সুরাইয়া বেগমের মরদেহের সুরতাল রির্পোট তৈরি করা হয়। ময়নাতদন্ত রির্পোট আসার পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মোজাহারুল ইসলাম বলেন, “এখন কিছু বলা যাবে না। রিপোর্ট এলে সব জানতে পারবেন।”

র‍্যাব-১৪ সিপিসি-২ ভৈরব ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট ফাহিম বলেন, “সকাল ৬টার (শুক্রবার) দিকে বুকে চিনচিন ব্যথা অনুভব করছে বলে বিষয়টি আমাদের মহিলা সেন্ট্রিকে জানায় সুরাইয়া খাতুন। পরে আমরা ১৫ মিনিটের মধ্যে সুরাইয়া খাতুনকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।”

ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার (১৮ মে) দুপুর ২টায় সুরাইয়া খাতুনকে চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বরুনাকান্দি গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফণ করা হয়। জানাজার এক পর্যায়ে স্বামী আজিজুল ইসলামে দেখা গেলেও পরে আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত