স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ প্রথম যে জাতীয় পতাকা দেখেছিল তার নকশা করেছিলেন শিব নারায়ণ দাশ। একদিন আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তবে, মৃত্যুর পরও চোখের আলো নেভেনি তার। বরং এখন সেই চোখের আলোতেই পৃথিবী দেখবেন রংপুরের ২১ বছর বয়সী মশিউর রহমান এবং চাঁদপুরের ৩৫ বছরের আবুল কালাম।
শনিবার ঢাকার দুটি হাসপাতালে আলাদা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এই দুজনের চোখে বসেছে শিব নারায়ণ দাশের কর্নিয়া। সব ঠিক থাকলে চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে দেখতে পাবেন তারা।
কেবল চোখই নয়, নিজের দেহ দান করে গিয়েছেন জাতীয় পতাকার এই নকশাকার। ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হবে তার দেহ।
সেখানেই শনিবার হয়েছে মশিউর রহমানের চোখের অস্ত্রোপচার। আবুল কালামের অস্ত্রোপচার হয়েছে সন্ধানী চক্ষু হাসপাতালে।
সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি ও সন্ধানী আন্তর্জাতিক চক্ষু ব্যাংকের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী শিব নারায়ণ দাশের ছেলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সে অনুযায়ী সন্ধানী আন্তর্জাতিক চক্ষু ব্যাংকের একটি টিম শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় কর্নিয়া দুটি সংগ্রহ করে।
“আজ দু’জনের চোখে কর্নিয়া অপারেশেরন করা হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শিব নারায়ণ দাশ অবদান রেখেছিলেন, মৃত্যুর পরেও তিনি দুজন অন্ধ মানুষকে পৃথিবীর সুন্দর রং রূপ দেখার সুযোগ করে দিয়ে গেলেন।”
দেহদানের বিষয়ে জানতে চাইলে শিব নারায়ণের ছেলে অর্নব আদিত্য দাশ বলেন, “আমার বাবা সব সময় মানুষের জন্য কাজ করেছেন। যখন থেকে বুঝেছি দেহদান কাকে বলে, তখন থেকেই জানি বাবা দেহদান করতে চান।”
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “বাবার ইচ্ছা ছিল দুজন অন্ধ ব্যক্তি যেন চোখে দেখতে পারেন। তারই ধারাবাহিকতায় কর্নিয়া দান করা হয়েছে।”
তরুণ মশিউর রহমানের জন্মগতভাবেই দৃষ্টিশক্তি খুবই কম ছিল বলে জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষুবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাস।
তিনি বলেন, “অপারেশন ভালো হয়েছে। তার চোখে আলো ফুটতে কমপক্ষে চার থেকে ৬ সপ্তাহ লাগবে। এখন যদি সে তার স্বাভাবিক কাজটুকু করতে পারে তাতেই আমরা খুশি।”
বাংলাদেশের প্রথম পতাকায় সবুজের মাঝে লাল বৃত্তের মধ্যিখানে ছিল একটি হলুদ রঙের মানচিত্র। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে প্রথম ওড়ানো হয়েছিল এই পতাকা। বাতাসে উড়তে থাকা সেই পতাকা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা, স্বাধীন দেশের আকাশে পতাকা ওড়ানোর স্বপ্ন নিয়েই রোজ নতুন উদ্যোমে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তেন তারা।
ওই পতাকার নকশা যারা করেছিলেন, তাদের একজন সে সময়কার ছাত্রলীগ নেতা শিব নারায়ণ দাশ।
শুক্রবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।