Beta
সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

‘শৈল্পিক’ নয়, ফিরেছেন কাজের লিটন

Picture of শিহাব উদ্দিন

শিহাব উদ্দিন

মাথিশা পাথিরানাকে যখন পুল করে ছক্কা হাঁকালেন লিটন। তা দেখে উচ্ছাসে “ওহ” বলে উঠতে পারেন অনেকেই। লিটনের ব্যাট থেকে অমন শট এক সময় ছিল নিয়মিত ঘটনা। ছবির মতো সুন্দর শট খেলতে পারেন বলেই তাকে শৈল্পিক ব্যাটার বলা হয়। অনেকদিন পর এই শিল্পীর ব্যাটে রান ফিরেছে, কার্যকারিতা ফিরেছে। তার এই ফেরায় বাংলাদেশ দলও পৌঁছে গেছে জয়ের বন্দরে।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শনিবারের ম্যাচে ৩৮ বলে লিটনের ৩৬ রানের ইনিংসে খুব মুগ্ধ হওয়ার কিছু নেই। তবে ৯৪ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটির কার্যকরিতা শতভাগ। শুরুতে দুই উইকেট পড়ার পর লিটন যে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেননি এটাই ছিল বড় ব্যাপার। তার ফর্ম যা, তাকে নিয়ে বেশ ভয়েই ছিল সমর্থকরা। সৌভাগ্য যে ভুল শট খেলে তিনি আত্মহুতি দেননি।

লিটন যেমন খেললেন

একের পর বাউন্ডারির খোঁজ না করে ইনিংস বড় করেছেন লিটন। জুটির প্রয়োজনে তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে লড়াই করেছেন। সফলও হয়েছেন। অভিজ্ঞ ব্যাটারের মতো ইনিংস ধরে খেলে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। শুরুতে দুই ওপেনার ফিরে যাওয়ার পর তার কাছ থেকে সবাই এমন খেলাই প্রত্যাশা করেছিলেন।

বাহারি চার-ছক্কা মারতে গিয়ে লিটন আউটের ঝুঁকি বাড়াননি। বরং রানের খুব চাপ না দেখে বুঝে শুনে ইনিংস গড়ার দিকেই মনযোগী ছিলেন। এটা ছিল, শিল্পীর শ্রমিক হয়ে খুচরো রানা খোঁজার লড়াই। ইনিংসে প্রথম চার মেরেছেন ১১তম বলে। পাথিরানাকে মারা ছক্কাটি এসেছে ২২তম বলে। মোট ৩৮ বলের ইনিংসে চার দুটি আর ছক্কা একটি। অনেক দিন পর দলের প্রয়োজনটাই গুরুত্ব পেয়েছে লিটনের ব্যাটে।

আত্মবিশ্বাস ফেরানো ইনিংস

লিটনের সামর্থ্য নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। সন্দেহ করেন না বিশ্ব ক্রিকেটের তারকা বিশ্লেষকরাও। বরং সবাই লিটনকে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার হিসেবেই দেখেন। কিন্তু নামের সুবিচার লিটনকে খুব কমই করতে দেখা যায়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে টানা তিন বলে স্কুপ করার চেষ্টায় শেষে বোল্ড হওয়া দৃষ্টিকটু চিত্র এখনও এই ব্যাটারকে পোড়াবে।

বিশ্বকাপ শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সিরিজেও রান পাননি লিটন। তবে প্রধান নির্বাচকের ভরসা ছিল তার ওপর। দেশ ছাড়ার আগে গাজী আশরাফ ‍হোসেন বলেছিলেন, “লিটন হয়তো বড় ম্যাচেই রান করবেন।” তার কথাই সত্যি হয়েছে। লিটন রান করেছেন এবং দলের জয়ে ভূমিকাও রেখেছেন।

ম্যাচ শেষে তার ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছেন, “লিটন আজ দারুণ ব্যাট করেছে। সে ইনিংসটা গুছিয়ে দিয়েছে। আমরা জানি সে কয়েকটা সিরিজে রান পাচ্ছিল না। কিন্তু যে স্কিল সে আজ দেখিয়েছে, এটা দলের জয়ে দারুণ ভূমিকা রেখেছে। তার আত্মবিশ্বাসও ফিরবে এই ইনিংস দিয়ে।”

এভাবেও প্রশংসা পাচ্ছেন

লিটনের সহজাত শট ও সাবলীল ব্যাটিংয়ের প্রশংসা হয় চারদিকে। সেরকম ইনিংস দেখার মধ্যে যেন চোখে শান্তি লেগে থাকে। শিল্পীর আজ অন্যরকম লড়াকু ইনিংসেরও কম প্রশংসা হয়নি।

ম্যাচের ধারাভাষ্যকার পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার রমিজ রাজা যেন লিটনের এই লড়াইটা দারুন উপভোগ করেছেন। একবার তিনি বলেছেন, “দলের ইনিংস মেরামতের কাজটা চমৎকার করছেন লিটন। ম্যাচ জিততে হলে এমন ব্যাটিংই দরকার।” ম্যাচ শেষে এই পাকিস্তানি হৃদয় ও লিটনের ইনিংস দুটিকে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, “হৃদয় স্বতঃস্ফূর্ত ইনিংস খেলছিল। তখন অপরপ্রান্ত থেকে কাউকে ঠান্ডা মাথায় দায়িত্বশীল ইনিংস খেলতে হতো। লিটন আজ (শনিবার) সে দায়িত্ব নিয়েছে। বাংলাদেশের জয়ের পথে দুর্দান্ত একটি জুটি গড়েছে। এক প্রান্ত আগলে রেখে অপর ব্যাটারকে স্বচ্ছন্দে খেলার পথ করে দিয়েছে।”

প্রখ্যাত ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে বলেছেন, “লিটন দাশের ফর্মে ফেরা বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আমি সবসময়ই বলি, সাদা বলে লিটন বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার।”

পরিশেষে

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ জয়ের পার্শ্বনায়ক লিটন। হয়তো রিশাদ হোসেন ও হৃদয়ের পারফরম্যান্সে লিটনের কীর্তি ঢাকা পড়ে যাবে। কিন্তু সব কিছুর যেমন একটি কাঠামো দরকার, এই ব্যাটার বাংলাদেশের ইনিংসের সেই কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন। সেখানে তার শিল্পী রূপে আবির্ভাব নয়, কার্যকরী আবির্ভাব ঘটেছে এবং এই লিটনকেই বাংলাদেশ চায় সামনের ম্যাচগুলোতেও।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত