রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি নির্ধারণ হয় যেখানে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সেটাই সংসদ, যা এক কক্ষবিশিষ্ট। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচনের মাধ্যমে এই সংসদ গঠিত হয়। নির্বাচিত সদস্যরা আইন প্রণয়নের কাজটি করেন, আর তার ভিত্তিতে চলে শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের কাজ। আবার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সরকার গঠিত হয়। নিচের শিরোনামে ক্লিক করে বিস্তারিত পড়ুন।
সংসদ নির্বাচন কখন হয়?
একটি সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে যদি মেয়াদ পূর্ণ করার আগে কোনো কারণে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সংসদ ভেঙে দেওয়া কিংবা স্থগিত করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। আবার দৈব-দুর্বিপাকের কারণে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভবপর না হলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।
নির্বাচন কীভাবে হয়?
সংসদে মোট আসন সংখ্যা ৩৫০। এর মধ্যে সাধারণ আসন ৩০০টি। গোটা দেশকে ভৌগোলিক, প্রশাসনিক ও জনঘনত্বের মানদণ্ডে এই ৩০০ আসনে ভাগ করা হয়েছে। সেখানে ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে আইনসভায় প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। বাকি ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। সাধারণ আসনে জয়ী রাজনৈতিক দলগুলোর আসন সংখ্যার অনুপাতে নারী আসনগুলো বণ্টিত হয়।
ভোট দিতে পারে কারা?
বাংলাদেশের নাগরিকদের বয়স ১৮ বছর হলে ভোটার হওয়ার যোগ্যতা অর্জিত হয়। তবে ভোট দিতে হলে নাম ওঠাতে হয় ভোটার তালিকায় । আদালত কাউকে পাগল বলে ঘোষণা দিলে কিংবা ১৯৭২ সালের দালাল আইনে দণ্ডিতরা ভোট দেওয়ার জন্য অযোগ্য বিবেচিত হয়।
প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা কী?
সাধারণভাবে বয়স ২৫ বছর হলে যে কোনো নাগরিক বা ভোটার সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারে। তবে আদালত কর্তৃক পাগল কিংবা দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তি প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য। দালাল আইনে সাজাপ্রাপ্ত কিংবা ফৌজদারি আইনে ২ বছরের বেশি মেয়াদে দণ্ডিত কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারে না। তবে ফৌজদারি আইনে সাজা ভোগের পাঁচ বছর পর নির্বাচন করা যায়। রাষ্ট্রীয় লাভজনক কোনো পদে থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া যায় না। সরকারি চাকরি ছাড়ার তিন বছর পর ভোটে অংশ নেওয়া যায়। ব্যাংকে ঋণ খেলাপি কিংবা বিদ্যুৎ-পানি-টেলিফোনের মতো পরিষেবার বিল খেলাপিরাও নির্বাচনে অযোগ্য।
বিদেশে নাগরিকত্ব নিলে কি প্রার্থী হওয়া যায়?
বাংলাদেশে নাগরিকদের জন্য দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের সুযোগ থাকলেও এমন ক্ষেত্রে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে- কেউ অন্য রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে ভোট করতে হলে তাকে সেই নাগরিকত্ব বর্জন করে আসতে হবে।
প্রার্থী হতে কি দলের দরকার?
এক সময় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ অবারিত ছিল। তবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের পর ২০০৮ সাল থেকে শুধু নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় পরিচয়ে ভোটে অংশ নিতে পারে। নানা মানদণ্ডের ভিত্তিতে কমিশন দলকে নিবন্ধন দেয়। তাদের জন্য নির্বাচনী প্রতীক সংরক্ষিত থাকে। নিবন্ধন না থাকলে রাজনৈতিক কাজ চালাতে পারলেও ভোটে অংশ নেওয়া যায় না।
ব্যক্তি প্রার্থী হয় কী উপায়ে?
দলের বাইরে কোনো ব্যক্তি প্রার্থী হতে চাইলে তাকে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের এক শতাংশের সমর্থন সূচক স্বাক্ষর রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হয়। এই প্রার্থীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী বলা হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য কিছু প্রতীক ইসির বরাদ্দ থাকে। সেখান থেকে তাদের পছন্দ অনুযায়ী কিংবা লটারি করে প্রতীক দেওয়া হয়।
ভোটের আয়োজন কীভাবে হয়?
নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটের আয়োজন হয়। তবে এক্ষেত্রে কমিশন সহায়তা নেয় সরকারি প্রশাসনের। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে, সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হল নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা। আবার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকে ইসির সঙ্গে আলোচনা ছাড়া প্রশাসনে কোনো বদলি করা যাবে না। ভোট নির্বিঘ্ন করতে বেসমারিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তও নিতে পারে ইসি।
ভোট দেওয়া হয় কীভাবে?
এক সময় কাগজের ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ হত বাংলাদেশে। ২০১০ সালে প্রথম ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) যুক্ত হয় ভোট গ্রহণে, তবে তা স্থানীয় নির্বাচনে। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়েছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সম্পূর্ণ ভোটগ্রহণ হবে কাগজের ব্যালটে।
ভোটের ফলে কী হয়?
ভোটের মধ্য দিয়ে ৩০০ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। তা সরকার গঠনের নির্ণায়ক ভূমিকাও পালন করে। সংসদের অর্ধেকের বেশি কিংবা অন্তত ১৫১ আসনে কোনো দল জয়ী হলে সেই দলটি সরকার গঠন করেন। নারীদের সংরক্ষিত ৫০ আসন সরকার গঠনের সময় বিবেচনায় আসে না। যদি কোনো দল অর্ধেকের বেশি আসন না পায়, তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে রাষ্ট্রপতি সরকার গঠন করতে বলতে পারে, সেক্ষেত্রে সেই দলকে অন্য কারও সঙ্গে জোট করে সম্মিলিতভাবে ১৫১ আসনের সীমারেখায় পৌঁছতে হবে। কোনো দল সরকার গঠনের পর যদি তাদের প্রধানমন্ত্রী সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হন, তবে রাষ্ট্রপতি বিকল্প কাউকে সুযোগ দিতে পারেন সংসদে আস্থা প্রমাণের জন্য, তবে তেমন কাউকে না পেলে সংসদ ভেঙে দিতে পারবেন, তখন আবার নতুন করে নির্বাচন করতে হবে।