কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাত সহিংসতার পর শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি ছাত্রাবাসগুলো খালি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।
বুধবার উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হলগুলো খালি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটও। এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট মঙ্গলবারই শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ এবং হল খালি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে মঙ্গলবার দেশজুড়ে সংঘাতে ছয়জন নিহত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) মঙ্গলবারই সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল।
তবে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকার এভাবে বন্ধ করতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছিল। পাশাপাশি ইউজিসির এমন সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
এই প্রেক্ষাপটে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সর্বোচ্চ ফোরাম সিন্ডিকেটে জরুরি সভায় বসে; যদিও সরকারের সিদ্ধান্তই সভাগুলোতে পাস হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা সাধারণত প্রশাসন ভবনে হলেও বুধবার জরুরি এই সভায় সিন্ডিকেট সদস্যরা বসেছিলেন উপাচার্যের বাড়িতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ভিসিকে প্রেসার দিচ্ছে, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে একটা পজিশন নিয়ে ক্যাম্পাস বন্ধ করতে হবে। তবে এতে ভিসিসহ আরও কিছু শিক্ষক এতে রাজি ছিলেন না।”
সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে আলোচনা শুরু হয়েছিল চলমান আন্দোলনে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের বিষয়ে বলা হয়, “উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩ এর আর্টিকেল ২৪(এল) ধারার ক্ষমতাবলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং একাডেমিক পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো।”
শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, পরবর্তীতে হল খোলার পর মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষার্থীদের হলে তোলা হবে। বহিরাগত কাউকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও অবস্থান না করার নির্দেশ দেওয়া হলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে সিন্ডিকেট সভায়।
পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা ব্যবস্থার ‘যৌক্তিক’ সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।
এদিকে অনেক শিক্ষার্থী সকাল থেকে হল ছাড়তে শুরু করেন। এক নারী শিক্ষার্থী ব্যাগ নিয়ে হল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা নিরাপদ। কিন্তু বাসা থেকে টেনশন করছে। তাই চলে যাচ্ছি।”
তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ এখনও ক্যাম্পাসে রয়েছে।
দুপুর ২টায় টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল কর্মসূচি ঘোষিত আছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র।
এদিকে দুপুরের আগে শহিদুল্লাহ হকের দিক থেকে শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল টিএসসিতে আসতে চাইলে পুলিশ দুটি সাউন্ড গ্রেনেড ফাটিয়ে তাদের হটিয়ে দেয়।
ক্যাম্পাসজুড়ে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে নামানো বিজিবি সদস্যরাও রয়েছে ক্যাম্পাসে। একটি জলকামান ও একটি সাঁজোয়া যানও দেখা যাচ্ছে টিএসসিতে।
পৌনে ১টার দিকে আন্দোলনকারী একদল শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাড়ির সামনে এসে অবস্থান নেয়। সেখানে এক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের হল থেকে বের করে দিয়ে এখানে পুনরায় ছাত্রলীগকে আনতে চায়। আমরা কোনও ষড়যন্ত্র মানতে রাজি না।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণার পাশাপাশি ১৯টি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের বিকাল ৪টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে।
সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে সেখানেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছে।