Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

সমুদ্রের উচ্চতা বাড়তে থাকলে আমরা সবাই ডুবে মরব : গুতেরেস

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জগুলো। ছবি: বিবিসি।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জগুলো। ছবি: বিবিসি।
[publishpress_authors_box]

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, বড় বড় পরিবেশ দূষণকারী দেশগুলোকে অবিলম্বে কার্বন নির্গমন কমাতে হবে। আর নয়তো অচিরেই বিশ্বব্যাপী জলবায়ু বিপর্যয় নেমে আসবে।

দ্বীপরাষ্ট্র টোঙ্গায় প্যাসিফিক আইল্যান্ড ফোরামের নেতাদের সভায় তিনি বিবিসিকে বলেন, “প্রশান্ত মহাসাগর আজ বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সঙ্গে ব্যাপক অবিচার হয়েছে। আর এই কারণেই আমি আজ এখানে এসেছি।

“ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো জলবায়ু পরিবর্তনে কোনও ভূমিকা না রাখলেও তাদেরকেই বেশি ভুগতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীজুড়ে সাধারণত যা ঘটে, তা এখানে বহুগুণে হয়।”

তবে ক্রমাগত সমুদ্রের উচ্চতা বাড়তে থাকলে তা আমাদের সবাইকেই ডোবাবে বলেও ফোরামের বক্তৃতায় তিনি সতর্ক করেন।

জাতিসংঘ সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়ে দুটি পৃথক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলো কীভাবে সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার হুমকিতে রয়েছে তা দেখানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশও একই ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জলবায়ু পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, অঞ্চলটি সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা, উচ্চতা এবং অ্যাসিড বৃদ্ধির কারণে চরম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। বেশি বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণের কারণে সমুদ্রের পানিতে অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে চলেছে।

ফোরামের বক্তৃতায় গুতেরেস বলেন, “কারণটি পরিষ্কার— জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর মাধ্যমে অত্যধিকহারে উৎপন্ন গ্রিনহাউস গ্যাস আমাদের গ্রহকে পোড়াচ্ছে। যার ফলে সমুদ্রও অনেক বেশিও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।”

প্রতিবেদন অনুসারে, গত ৩০ বছরে বিশ্বজুড়ে সমুদ্রের উচ্চতা গড়ে ৯.৪ সেন্টিমিটার (৩.৭ ইঞ্চি) বেড়েছে। কিন্তু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তা ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বেশি বেড়েছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব এবার দ্বিতীয়বারের মতো প্যাসিফিক আইল্যান্ড ফোরামের নেতাদের সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। বার্ষিক এই সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সহ ১৮টি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের নেতারা অংশগ্রহণ করেন।

এবারের সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে টোঙ্গায় ব্যাপক আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্পও আঘাত হানে। এই আকস্মিক বন্যা ও ভূমিকম্প অঞ্চলটি কতটা ঝুঁকিতে রয়েছে তা তুলে ধরে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস টোঙ্গার পার্লামেন্টের স্পিকার লর্ড ফাতাফেহি ফাকাফানুয়ার সঙ্গে।

সম্মেলনে বৃহত্তম আঞ্চলিক জলবায়ু তহবিল দাতা এবং কার্বন নির্গমনকারী অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে কথা উঠে। এই বছরের শুরুর দিকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ বলেছিলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার আহ্বান সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া ২০৫০ সালের পর পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলন এবং ব্যবহার বাড়াবে।

অস্ট্রেলিয়ার মতো আঞ্চলিক নির্গমনকারীদের জন্য তার কী বার্তা রয়েছে জানতে চাইলে গুতেরেস বিবিসিকে বলেন, “বড় দূষণকারীদের দায়িত্বও বেশি। তারা যদি সেই দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে প্যারিস চুক্তিতে (২০১৫) বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধির যে সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে তা লঙ্ঘিত হবে।

প্যারিস চুক্তিতে এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার অবশ্যই ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে এবং ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে রাখার চেষ্টার কথা বলা হয়।

গুতেরেস বলেন, “গ্রীনল্যান্ড ও পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার বরফের চাইগুলোকে অক্ষত রাখতে চাইলে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।

“এর মানে ২০১৯ সালের তুলনায় বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৩ শতাংশ এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে ৬০ মতাংশ কমাতে হবে।” অথচ গত বছর বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন উল্টো ১ শতাংশ বেড়েছে।

গুতেরেস বলেন, ”জি-টোয়েন্টির দেশগুলো বিশ্বের মোর্ট কার্বন নির্গমনের ৮০ শতাংশে জন্য দায়ী। তাই তাদের দায়িত্বও বেশি। তাদেরকে অবিলম্বে কার্বন নির্গমন কমানোর নিশ্চয়তা দিতে হবে।”

জি-টোয়েন্টি এবং সেইসঙ্গে যেসব কোম্পানি সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমন করে তাদের উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বর্তমান প্রবণতা থামানোর জন্য তাদের একটি স্পষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। এবার তাদের নিজেদেরকে ‘যথেষ্ট হয়েছে আর না’ বলার সময় এসেছে।”

তথ্যসূত্র : বিবিসি

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত