সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত চলমান আন্দোলনে সঙ্গে থাকার ঘোষণা দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চের নতুন সমন্বয়কারী নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এ কথা জানান।
তিনি বলেন, “যে বাঁধার বিন্দাচল ছিল, যে ভয়ের পাহাড় ছিল, যে ভয়ের চাঁদর ছিল- ওগুলো চলে গেছে। যেভাবে লড়াই করছে শিক্ষার্থীরা, যেভাবে লড়াই করছে শিক্ষকরা, গুণীজন, মুরুব্বীরা, আইনজীবীরা, সাংবাদিকরা… সবাই যেরকম করে নেমেছে, তাতে এই সরকারের মৃত্যুঘণ্টা বেজেছে।
‘‘আমরা আগেই বলেছি, এই পরিস্থিতি ওরা (সরকার) গায়ের জোরে মোকাবেলা করতে পারবেন না। বাংলাদেশের টোটাল ফোর্স নামানো হয়েছে মুভমেন্ট যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে। থামাতে তো পারেননি। সরকার সব রকম নির্যাতন করবার পরেও পারেনি এই আন্দোলন বন্ধ করতে। এই আন্দোলন বাড়ছে, আন্দোলন আরও বাড়বে। গণতন্ত্রমঞ্চ তার সাথে শুরু থেকে ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত এই সরকারের পরাজয় না হয়।”
বুধবার পুরানা পল্টনে সমাবেশ করতে না দেওয়ার প্রতিবাদে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে ঢাকার তোপখানা রোড়ে নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকে গণতন্ত্র মঞ্চ।
মঞ্চের নতুন সমন্বয়কারী মান্না বলেন, ‘‘আমরা শুরু থেকে বলেছি, তোমরা অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছ, নির্বাচন করছ না। অতএব নির্বাচন না করে ক্ষমতায় থাকতে গেলে আরও বল প্রয়োগেই তোমাকে ক্ষমতায় থাকতে হবে। একদম চূড়ান্ত নিষ্ঠুরতা-হত্যাকারীর জায়গায় পৌঁছাবার আগেই ক্ষমতা থেকে চলে যাও।
“আমাদের আজকে একই আবেদন, এখনও হয়ত সময় আছে… আমি বলছি, এখনও হয়ত সময় আছে পদত্যাগ কর। তারপরে দেশ কীভাবে চলবে সেটা এদেশের জনগণ বুঝবে। তোমরা জনগণের দুশমনে পরিণত হয়েছো, তোমরা জনগণের জন্য কিছু করতে পারবে না। বোধ-বুদ্ধি যদি এখনও থাকে তাহলে জনগণের কথা শুনে, দেয়ালের কথা শুনে পদত্যাগ করেন। যত তাড়াতাড়ি পদত্যাগ করবেন ততই ভালো।”
অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহারের দাবি জানান মান্না।
‘এটা এখন কেবল কোটা আন্দোলনে নেই’ উল্লেখ করে মান্না বলেন, “এই আন্দোলন কেবলমাত্র কোটার আন্দোলন নয়, এটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। এই আন্দোলন এখন সরাসরি এসব হত্যার বিচার চায়, ওই সমস্ত মন্ত্রী যারা গুলির নির্দেশ দিয়েছেন, উস্কে দিয়েছেন ছাত্রলীগকে তাদের পদত্যাগ চায় দল থেকে এবং সরকার থেকে। খোদ প্রধানমন্ত্রী সমস্ত হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে যাতে জনগণের কাছে ক্ষমা চান সেজন্য তারা (শিক্ষার্থীরা) দাবি করেছে। এগুলো মানতে হবে।
“খারাপ লাগে শুনতে। এতো বড় নেত্রী…বাপরে বাপ। বাঘে গুরুতে একসাথে পানি খায়…তিনি এরকম করবেন। কিন্তু ইতিহাস এমন তার চাইতে বড় বড় মানুষের এই কাজগুলো করতে হয়েছে। আমি বলব, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেন। যেভাবে রাজনৈতিক নেতাদের নির্যাতন করছেন এই নির্যাতন বন্ধ করেন। অবিলম্বে তাদেরকে মুক্তি দেন। এটা যদি না করে তাহলে শেষ পর্যন্ত কী হবে সেটা আপনারাও দেখবেন।”
‘সংকটের সমাধান সরকারের পদত্যাগ’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “আজকে বাংলাদেশে এরকম একটি হত্যাযজ্ঞ চালানোর পরে এই লাশের কারবালায় দাঁড়িয়ে এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর কোনও অধিকার নেই… এই কথা এখন বাংলার ঘরে ঘরে প্রতিধ্বনি হচ্ছে। দেখেছেন তাদের (সরকার) রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখান করে সারাদেশের মানুষ লাল কাপড়ে, লাল ফিতায়, ফেইসবুক লাল প্রতীকে ভরে দিয়েছে। এই যে গণ অনাস্থা এটা জনগণের এই সরকারের প্রতি চূড়ান্ত অনাস্থা জানিয়েছে।
“এই অবস্থা আর চলতে পারে না। আমরা সরকারকে বলি, এটা একটা রাজনৈতিক সংকট। রাজনৈতিক সংকটের রাজনৈতিক সমাধান করতে হবে। সমাধান হচ্ছে পদত্যাগ করুন এবং অন্তবর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। রাজনৈতিকভাবে আলাপ-আলোচনা করে সেটা ঠিক করতে পারব এবং দেশে গণতান্ত্রিক সরকার… একমাত্র ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, এদেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবেই।”
সংবাদ সম্মেলনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম ও জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বক্তব্য রাখেন।