Beta
মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫
আন্দোলনকারীদের প্রতি আইনমন্ত্রী

‘সরকার কোটা সংস্কারের পক্ষে, আলোচনায় আসুন’

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে সাংবাদিকদের সামনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে সাংবাদিকদের সামনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
[publishpress_authors_box]

আদালতের মাধ্যমে দাবি আদায়ের আশ্বাস দিয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সহিংস কর্মসূচি ছেড়ে আলোচনায় আসার আহ্বান জানিয়েছে সরকার।

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ডাকে বৃহস্পতিবার সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার মধ্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদ ভবনে সাংবাদিকদের সামনে এসে আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে বলেন, সরকারও কোটা সংস্কারের পক্ষে।

কোটা পুনর্বহালে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে যে আপিলের আবেদন হয়েছে, তার শুনানি এগিয়ে আনতে রবিবার আবেদন করা হবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

গত মঙ্গলবার ছয়জন নিহত হওয়াসহ সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের কথাও আইনমন্ত্রী জানান।

এরপর তিনি বলেন, “আজকে েথকে আন্দোলন করার আর কোনও প্রয়োজন নাই। আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনাদের পিতৃতুল্য নাগরিক হিসাবে আহ্বান জানাচ্ছি, অনুরোধ করছি, সহিংসতা বন্ধ করেন, আন্দোলন প্রত্যাহার বা স্থগিত করেন।”

আইনমন্ত্রীর প্রস্তাবের বিষয়ে আন্দোলনকারীদের কোনও সাড়া দেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অনেকে আলোচনায় বসার সম্ভাবনা নাকচ করে সোশাল মিডিয়ায় বক্তব্য দিচ্ছেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল করে গত মাসে হাইকোর্টের রায়ের পর ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে এই আন্দোলন এমাসের শুরুতেই শুরু হয়।

গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীরা আক্রান্ত হওয়ার পরদিন বুধবার দেশজুড়ে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে, তাতে ছয়জন নিহত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়।

এরপরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে আসার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ নিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভাষণে তিনি আন্দোলনকারীদের আদালতের রায় না আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি হতাহতের ঘটনায় সমবেদনা এবং নিহতদের পরিবারকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান উপেক্ষা করে আন্দোলনকারীরা বৃহস্পতিবার সারাদেশ অবরোধের ঘোষণা দেয়। তাতে ঢাকায় ব্যাপক সংঘাতে কয়েকজন প্রাণ হারান।

এই পরিস্থিতিতে আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে সংসদ ভবনে সাংবাদিকদের সামনে আসেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তার সঙ্গে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

আন্দোলনকারীরা আলোচনায় বসতে আগ্রহী- একথা জেনেছেন জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, “আন্দোলনের পাশাপাশি তারা আলাপ আলোচনায় আগ্রহী। আমরা তাদের এই আলাপ-আলোচনার প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই।

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের এই প্রস্তাবকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাদের এই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আমাকে (আইনমন্ত্রী) ও শিক্ষামন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা তাদের সাথে বসব।”

কখন আলোচনা হবে- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা এটাও বলতে চাই, তারা যখনই বসতে রাজি হবে। যদি আজকে হয়, তাহলে আজকেই বসতে রাজি আছি।”

আলোচনায় বসার এই উদ্যোগ নিতে দেরি হলো কি না- এমন প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, “আজকে তারা প্রস্তাব দিয়েছে, আমরা আলোচনা করতে রাজি হয়েছি। দেরি কোথায় হলো?”

ঢাকার বাড্ডা-রামপুরা এলাকায় বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ব্র্যাকসহ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে।

সংঘাত-হতাহতের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, “গতকাল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বিচার বিভাগীয় তদন্তের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই প্রেক্ষিতে আমরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খন্দকার দিলীরুজ্জামানকে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি তৈরি করেছি। এই প্রস্তাব মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। আমার বিশ্বাস, প্রধান বিচারপতি বিষয়টি দেখবেন।”

পরে এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, বিচারপতি দিলীরুজ্জামান নেতৃত্বাধীন এক সদস্যের এই তদন্ত কমিশন আগামী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।

কোটা পুনর্বহালের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার যে আপিলের আবেদন করেছে, আপিল বিভাগে তার শুনানির দিন আগামী ৭ আগস্ট নির্ধারিত রয়েছে।

তা এগিয়ে আনতে আবেদন করা হবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, “সেই মামলার শুনানি এগিয়ে আনার জন্য ব্যবস্থা নিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছি। আগামী রবিবার তিনি আপিল বিভাগে আবেদন করবেন, যাতে মামলাটির শুনানির তারিখ তারা এগিয়ে আনেন।”

সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা নিয়ে সরকার কোন অবস্থানে রয়েছে- সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, ২০১৮ প্রধানমন্ত্রীই কোটা বাতিল করেছিলেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা রিট আবেদন দায়ের করে। এরপর আদালত যখন রায় দিয়েছে, তখন এই আন্দোলন শুরু হয়।

“উচ্চ আদালতে যখন এই মামলার শুনানি শুরু হবে, সরকার পক্ষ অবশ্যই একটা প্রস্তাব দেবে। এবং আমার মনে আমরা যেহেতু কোটা সংস্কারের পক্ষে, সংস্কারের পক্ষে প্রস্তাব দিব। আপনারা বলতে পারেন আমরা কোটা সংস্কারের পক্ষে।”

সরকার কোটা সংস্কার করেনি কেন- সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “যেহেতু এক পক্ষ আদালতে গেছে, আদালত সিদ্ধান্ত নিলেই আমরা করতে পারি।

“বাংলাদেশে আইনের শাসন রয়েছে। আদালত যতক্ষণ পর্যন্ত তা শেষ না করে, ততক্ষণ নির্বাহী বিভাগ কোনও সিদ্ধান্ত নেয় না।”

আইনমন্ত্রীর কথা বলার আগেই আন্দোলনকারীদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা আসে।

তাতে এই পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায়ী করে বলা হয়, “উদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরির দায় একমাত্র এবং শুধু সরকারের৷ ছাত্ররা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনই করে যাচ্ছিল।

“শর্তহীনভাবে এক দফা দাবি আদায়, হল ক্যাম্পাস খোলা, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস, ক্যাম্পাস থেকে সকল বাহিনী প্রত্যাহার, খুনি ও হামলাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।”

“প্রতিদিন আন্দোলনের শক্তি দ্বিগুণ হবে। এবিষয়ে কোনও প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই। শিগগিরই আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসছে,” বলা হয় টেলিগ্রামে।

এর আগে আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন কর্মসূচি এই টেলিগ্রাম চ্যানেলেই দেওয়া হতো। তবে নতুন কর্মসূচির বিষয়ে আন্দোলনকারীদের কোনও মুখপাত্রের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আলোচনার প্রস্তাব নিয়েও তাদের কোনও বক্তব্য আসেনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত