কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস (এসঅ্যান্ডপি)।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি তাদের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে, সেই বিবেচনায় ঋণমান কমানো হয়েছে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস বাংলাদেশের ঋণমান ‘বিবি মাইনাস’ থেকে কমিয়ে ‘বি প্লাস’ করেছে।
মাঝারি মাপের মাথাপিছু আয় এবং সে তুলনায় রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর নিম্ন সক্ষমতা ও উচ্চ সুদ ব্যয়ের কারণে বাজেট ব্যয়ে সীমাবন্ধতা থাকায় বাংলাদেশকে ‘বি প্লাস’ রেটিং দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করছে বলে এসঅ্যান্ডপি মনে করে।
এসঅ্যান্ডপি বলেছে, এই ঋণমান অবনমনের মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির বহিঃখাত ধারাবাহিকভাবে চাপের মুখে আছে।
বিশেষ করে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার কথাও গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে।
এসঅ্যান্ডপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বাহ্যিক তারল্য দুর্বল হচ্ছে, যার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ধারাবাহিক পতনে।
গত মে মাসে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার ব্যাপক দরপতন করা হয়েছে।
চলতি বছরের জুন মাসের শেষে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার; এই রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো যেতে পারে।
এসঅ্যান্ডপি কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বাংলাদেশে সহিংস পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বলা হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। এতে ২০০ জনেরও বেশি মারা গেছেন বলে জানা গেছে।
চলতি জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে সৃষ্ট সহিংসতার রাশ টানতে সরকার যে কারফিউ জারি করে ইন্টারনেট বন্ধ রেখেছিল, তার প্রভাবে দেশের রিজার্ভ আরও কমবে বলে মনে করছে এসঅ্যান্ডপি। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রপ্তানি আয় কমে যেতে পারে।
এসঅ্যান্ডপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ‘সংঘাতময়’ রাজনৈতিক পরিবেশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে।
বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ক্রমাগত কমার বিষয়ে দৃষ্টিপাত করে সংস্থাটি বলেছে, অবকাঠামোগত সংকট ও আমলাতান্ত্রিক অদক্ষতার কারণে এমনটি হতে পারে।