সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা। মাঠে তার পারফরমেন্স প্রশ্নাতীত। এবার তিনি এলেন রাজনীতির মাঠে। ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে মাঠের পিচ ভালোভাবেই বুঝতে হয় তাকে, কিন্তু ভোটের মাঠের পিচ কতটা বুঝতে পারছেন তিনি? তা নিয়ে কথা বলেছেন সকাল সন্ধ্যার সঙ্গে।
সকাল সন্ধ্যা : নির্বাচনী প্রচারণায় তো আপনি একদম নতুন। নতুন যে কোনও কিছুতেই সবার একটু জড়তা থাকে। সেটা আপনি কতটুকু কাটিয়ে উঠলেন কিংবা পুরো ব্যাপারটা কেমন উপভোগ করছেন?
সাকিব আল হাসান : বক্তৃতা দেওয়া বাদে বাকি সব জড়তাই কেটে গেছে বলে আমার মনে হয়। শুধু বক্তৃতাতেই একটু জড়তা আছে। কারণ মঞ্চে যারা থাকেন তাদের পরিচয় নাম সব কিছু বলতে হয়, তাদের সম্বোধন করতে হয়। কিন্তু আমি সেটা ভালোভাবে বলতে পারি না। এর বাদে বাকি সবকিছু ঠিক আছে। এটাও হয়ে যাবে।
সকাল সন্ধ্যা : বক্তৃতাতেও আপনি একই কথা বারবার বলছেন…
সাকিব : হ্যাঁ, এটা হচ্ছে। তবে আস্তে আস্তে কেটে যাবে। কারণ এসবে তো আমার অভ্যাস ছিল না। আগে জীবনে কখনও বক্তৃতাই দেওয়া হয়নি। সময় আসলে মানুষকে তৈরি করে দেবে।
সকাল সন্ধ্যা : তিনটা আসনের জন্য আপনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। শেষমেষ মাগুরা-১ আসন থেকে আপনি নৌকার প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন। তাতে আপনি কতটুকু সন্তুষ্ট?
সাকিব : আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। নিজের এলাকা, নিজের বেড়ে ওঠার জায়গা। সুবাদে কাজ করার আগ্রহটা অনেক বেশি থাকবে। সবকিছুই মন থেকে আসবে সবসময়। অন্য জায়গায় মনোনয়ন পেলে হয়ত এই আগ্রহের ব্যাপারটা অতটা ভালো হত না।
সকাল সন্ধ্যা : নির্বাচনের খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলো যতটুকুই বুঝেছেন? মাঠের খেলা নাকি নির্বাচনের খেলা, কোনটা বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে করছেন?
সাকিব : ক্রিকেট খেলাটা যেহেতু ছোটবেলা থেকে শুরু করেছি, তা আমার রক্তের সঙ্গেই মিশে ছিল। রাজনীতি আমার পরিবারেই নাই, আগে পরে কেউ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। তাই মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগছে, তবে ইনশাআল্লাহ তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।
সকাল সন্ধ্যা : অনেকেই বলে, তরুণ প্রজন্ম এখন রাজনীতিবিমুখ। গতবার মাশরাফি বিন মর্তুজা এলেন, এবার আপনি। আপনাদের রাজনীতিতে আসা নতুন প্রজন্মকে কি রাজনীতিতে অনুপ্রাণিত করবে?
সাকিব : এই মুহূর্তে এটা বলা মুশকিল। পুরোটা নির্ভর করছে আমাদের পারফরমেন্সের ওপর। আমরা ভালো কিছু করলে, মানুষ সেটা দেখে অনুপ্রাণিত হতে পারে। তখন তরুণ প্রজন্ম রাজনীতিতে এলে নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে। আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি, তরুণদেরই রাজনীতিতে আসা উচিৎ। তারাই দেশটাকে ভবিষ্যতে পরিচালনা করবে। তরুণরা দেশের ভবিষ্যৎ-এসব কথা আমরা সবসময়ই বলে থাকি। তাই রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ যত বেশি থাকবে, ততই দেশের জন্য মঙ্গল।
সকাল সন্ধ্যা : যে কোনও নতুন শুরুর পেছনে একটা লক্ষ্য থাকে। আপনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারও নিশ্চয় সেরকম কোনো লক্ষ্য নিয়ে শুরু হচ্ছে। ১৫-২০ বছর পর রাজনীতির ময়দানে নিজেকে আপনি কোথায় দেখতে চান?
সাকিব : আমি ১৫-২০ বছর পর কিছুই দেখছি না এখন। আপাতত ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দেখছি। এটা পার হওয়ার পরের পরিকল্পনা করব।
সকাল সন্ধ্যা : নির্বাচিত হয়ে গেলে উন্নয়ন, ঐক্য ও জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তখন কেমন সাকিবকে দেখা যাবে?
সাকিব : এটাও এখন বলা মুশকিল। তবে মোটাদাগে একটা কথা বলতে পারি, আমার জন্মস্থান মাগুরার ভালোর জন্য যখন যেটা দরকার সেটা আমি করব। কঠিন হলেও আমাকে করতে হবে।
সকাল সন্ধ্যা : কোনো বিশৃঙ্খলা দেখলে মাশরাফি যেমন সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে শৃঙ্খলা ফেরাতে চেষ্টা করেন। আপনিও কি সেরকম কিছু করবেন?
সাকিব : আসলে দেখানোর কিছু নাই। আমি নির্বাচিত হলে এই জায়গায় আমার যে কাজ এবং দায়িত্ব থাকবে, সেগুলো ঠিকঠাক করার চেষ্টা করব অবশ্যই।
সকাল সন্ধ্যা : ক্রিকেট থেকে রাজনীতিতে এসে রাষ্ট্রনায়ক ইমরান খানকে আমরা সবাই চিনি। এই ক্রিকেট কিংবদন্তি কি আপনাকে অনুপ্রেরণা জোগায়?
সাকিব : না, সেভাবে না। তবে উনি (ইমরান খান) তার দেশের জন্য যথেষ্ট ভালো কাজ করেছেন। পাকিস্তানের মানুষ তাকে অনেক পছন্দ করে। আমি শেষবার যখন পাকিস্তানে যাই, তখনও দেখেছি মানুষ তাকে সমর্থন করে, অনেক পছন্দ করে। ইমারন খানের মতো ভালো কিছু করতে পারলে সবাই চাইবেই একটা মানুষকে। আমার ইচ্ছা ইতিবাচক কিছু করার।
সকাল সন্ধ্যা : ইমরান খান রাজনীতির অন্য দিকটাও দেখছেন। জেল খেটেছেন, সমালোচনার শিকার হয়েছেন- এই ব্যাপারটা কিভাবে দেখেন?
সাকিব : দেখুন, এগুলো নিয়ে আমার একদমই চিন্তা নেই। এগুলো পরের বিষয়, অনেক দূরের বিষয়। আপনারা অনেক দূরের চিন্তা করছেন এখনই। আপনি কালকে বাঁচবেন, নাকি মরবেন, তা নিজেই জানেন না। তাহলে এত দূরের চিন্তা করব? প্রতিটা দিন বাঁচি, ভালোভাবে বাঁচার চেষ্টা করি, অন্যকে সাহায্য করার চেষ্টা করি এখন পর্যন্ত এতটুকু চিন্তা আমার।
সকাল সন্ধ্যা : ক্রিকেট থেকে রাজনীতিতে আসা মাশরাফি নিজের এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। মাগুরা-১ আসনে নিজেকে রাজনীতিবিদ হিসাবে কতটা জনপ্রিয় করে তুলতে পারবেন?
সাকিব : এটা এখনই বলা কঠিন। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর ভালো কাজ করতে পারলে এবং তাতে এখানকার মানুষ ভালো থাকে, তাহলে নিজেকে সার্থক মনে হবে। তখন মানুষের আমাকে ভালো লাগা বা আমার জনপ্রিয়তার জায়গাটা তৈরি হবে।
সকাল সন্ধ্যা : নির্বাচনে আসার আগে অবশ্যই পরিবারকে জানিয়েছিলেন। তাদের প্রথম প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
সাকিব : সবাই খুব সমর্থন দিয়েছে এবং এখনও পাশে আছে।
সকাল সন্ধ্যা : যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসে আপনার স্ত্রী কি প্রচারে নামবেন?
সাকিব : কীসে আসবেন? রাজনীতিতে? (হাসি)