Beta
শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

সিলেটে উপজেলায় পরিস্থিতির উন্নতি, নগরে ঢুকছে পানি

সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে বন্যার পানি। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে বন্যার পানি। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের উপজেলাগুলোয় সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে সিলেট নগরীর সুরমা নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা। সব মিলিয়ে এখনও সাত উপজেলায় ৫ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক) মোবারক হোসেন সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত জেলার সাত উপজেলার ৪২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন ৫ লাখ ৩৩ হাজার ২০২ জন বাসিন্দা।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় ১৩ উপজেলায় ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এখন পর্যন্ত এসব কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন মোট ৪ হাজার ৮০২ জন।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের শুক্রবার বিকাল ৩ টার তথ্য অনুযায়ী, কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের অমলসিদে পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০৩ সেন্টিমিটার ও বিয়ানীবাজারের শেওলায় বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়া কানাইঘাটে সুরমার পানি বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ অবস্থায় সিলেট নগরীর মাছিমপুর, মেন্দিবাগ, উপশহর, সোবাহানীঘাট, তোপখানাসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি উঠে গেছে। 

সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েন, নগরের ৪২ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ছয়টির কিছু এলাকায় বন্যার পানি উঠেছে। সিটি করপোরেশন এলাকায় চার হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে।

এরই মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারিদের ছুটি বাতিল করেছে। করপোরেশন এলাকায় খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।

বৃষ্টির কারণে নগরীর বন্যা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক দিলীপ বৈষ্ণব জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা৬ টা পর্যন্ত জেলায় ৫ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

অন্যদিকে শুক্রবার সিলেটের গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড  সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেছেন, এখন উজানে ভারি বৃষ্টি বা পাহাড়ি ঢল না নামলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে না।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানান, গোয়াইনঘাটের তিনটি নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচে বইছে। উঁচু এলাকা থেকে পানি নামতেও শুরু করেছে। তবে এখনও উপজেলায় ২ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫০ জন মানুষ পানিবন্দী। 

উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নই বন্যা কবলিত হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ২ হাজার ৩৫৬ জন। সেখানে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণও দেওয়া হচ্ছে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, কালভার্টগুলো মেরামত ও সংস্কার করে জনচলাচলে উপযোগী করতে এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। 

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ভারতের মেঘালয় ও আসামের পাহাড়ি এলাকায় টানা ভারি বৃষ্টি হয়। যার ফলে সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জে বন্যা দেখা দেয়। সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, লোভা, ধলাই ও পিয়াইন নদীর বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে ওই পাঁচ উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হয়।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রবেশ করতে থাকে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থান দিয়ে। ফলে এ দুই উপজেলাও বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের সাত উপজেলার ৫ লাখ ৩৩ হাজার ২০২ জন মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছেন। এর মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের ২ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫০ জন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৩ ইউনিয়নের ৯৩ হাজার জন, কানাইঘাট উপজেলার ৯ ইউনিয়নের ৮০ হাজার ৬০০ জন, জৈন্তাপুরের ৩ ইউনিয়নের ৬৫ হাজার জন, জকিগঞ্জের ৮ ইউনিয়নের ৩৯ হাজার ৮৫২ জন, বিয়ানীবাজারের ৫ ইউনিয়নের ৫ হাজার ৫০০ জন ও গোলাপগঞ্জের ১ ইউনিয়নের ৩৫০০ জন পানিবন্দী হয়েছেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলায় প্লাবিত গ্রামের সংখ্যা বেশি। এ পাঁচ উপজেলায় অন্তত ৭০০ গ্রাম এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে।

এ ছাড়া বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলোও প্লাবিত হয়েছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, বন্যা পরিস্থিতির আপাতত কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সীমান্তবর্তী উপজেলা থেকে পানি নামতে শুরু করায় অন্যান্য উপজেলা নতুন করে প্লাবিত হতে পারে। আমরা সার্বিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। সব উপজেলার জন্যই আমরা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করে রেখেছি।

বন্যা কবলিতদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে এবং বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত