শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটিও অনেকটা এমন ছিল। জিতলে সুপার এইট, নয়তো পথ কঠিন। সেই ভয় কাটিয়ে এখন সুপার এইটের পথ বাংলাদেশের জন্য অনেক স্পষ্ট। তবুও একটু ভাবনা আছে। সেই ভাবনাটা নেদারল্যান্ডস ম্যাচ নিয়ে। এই ম্যাচ হারলে আবার কঠিন হবে সুপার এইটের পথ।
নেদারল্যান্ডস নিয়ে ভয় কাজ করতেই পারে বাংলাদেশের। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে এই দলটির সঙ্গে হার হজম করতে হয়েছিল কলকাতায়। টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য এর আগের লড়াইয়ে (২০২২ বিশ্বকাপ) শেষ হাসি ছিল বাংলাদেশের। তাই বলে অতীতে তাকিয়ে নির্ভার হওয়ার সুযোগ নেই। সবশেষ লড়াইয়ে যে কারণে হার জুটেছিল সেই ভয় এখনও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশকে।
ব্যাটিং ব্যর্থতা মেনে নিলেন শান্ত
২০২৩ বিশ্বকাপের ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ২২৯ করেছিল ডাচরা। জবাবে ৪২.২ ওভারে ১৪২ রানে অলআউট হয়ে যায় সাকিব আল হাসানের দল। ব্যাটিং ব্যর্থতার পুরোনো রোগ এখনও বহন করে চলছে বাংলাদেশ দল। টপঅর্ডারের রানখরায় বিশ্বকাপের আগে থেকেই প্রতি ম্যাচে খুঁড়িয়ে চলছে বাংলাদেশের রানের চাকা। তাই আজকের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও নাজমুল হোসেন শান্তদের ব্যাটিং চিন্তা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
টপঅর্ডারের ব্যর্থতা অস্বীকার করার উপায় নেই অধিনায়কের। কারণ নিজেই ভুগছেন রান খরায়। ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে দায় মেনেও নিলেন শান্ত, “অবশ্যই আমার ব্যাটিং ভালো হয়নি। রান করতে হবে। বাড়তি চাপ অনুভব করছি না। যদি শুরু পাই অবশ্যই দলের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করব।”
তবে পরের উক্তিতে একটু ব্যতিক্রমই মনে হলো শান্তকে, “অধিনায়ক হয়েছি বলে এমন না যে প্রতিদিনই ভালো খেলতে হবে। এরকমও মনে হচ্ছে না আমার। ব্যাটার হিসেবে কতটুকু অবদান রাখতে পারি তা দেখার দায়িত্ব আমার। এটা নিয়ে আমি পরিশ্রম করছি এবং আশা করছি যে সামনে ভালো কিছু হবে।”
শুরু পেলে ভালো করতে চান, নিজেই বললেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইনিংসের শুরুটা পেয়েছিলেন। কিন্তু ভুল শটে আত্মাহুতি দেন। এরপর বলছেন অধিনায়ক হিসেবে প্রতিদিন ভালো করতে হবে, এই চাপ নিচ্ছেন না। কিন্তু শান্ত যুক্তরাষ্ট্র সফরে রান পেয়েছেনই একটি ম্যাচে, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে। পাশাপাশি সৌম্য সরকার, তানজিদ তামিমদের ব্যর্থতায় টপঅর্ডারের দুশ্চিন্তা থাকছেই।
সমীকরণ কি বলছে
ডাচদের সঙ্গে আজকের ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য অলিখিত ফাইনাল নয়। এই ম্যাচে উল্টো কিছু ঘটলেও শেষ ম্যাচে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষ নেপালের সঙ্গে ম্যাচ আছে। জয়ে নজর দেয়া যাবে সেই ম্যাচে। তাই বলে নেদারল্যান্ডস ম্যাচকে হালকা ভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। তারাও যে এই ম্যাচ জয়ে তাকিয়ে আছে।
ডি গ্রুপে দক্ষিণ আফ্রিকার পর এই দুই দলের পয়েন্ট সমান ২। ০.০৭ রান রেট নিয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ডাচদের রান রেট ০.০২। নেপালের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ায় তাদের সুপার এইটের সম্ভাবনা শেষ। তাই বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডসের মধ্যে আজকের ম্যাচের জয়ী দলেরই পরের রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ বেশি।
ডাচদের আত্মবিশ্বাস ও ডমিঙ্গো-কুক জুটি
ম্যাচের আগে বাংলাদেশকে হারানোর আত্মবিশ্বাস জানিয়ে রেখেছেন নেদারল্যান্ডস অলরাউন্ডার লোগান ফন ভিক। তার কারণও আছে। ২০২৩ বিশ্বকাপের জয়কে সামনে রাখছেন তারা। এর চেয়েও বড় ব্যাপার সবশেষ বাংলাদেশ কোচিং প্যানেলের দুই জন এখন এই দলের সঙ্গে আছেন। রাসেল ডমিঙ্গো উপদেষ্টা আর বাংলাদেশের সাবেক ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক হেড কোচ। তাদের থেকে সাকিব-মাহমুদউল্লাহদের দুর্বলতা জেনে নিচ্ছেন ফন ভিকরা।
ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এই ডাচ জানিয়েছেন, “আমি বলব এই ম্যাচ জেতার জন্য আমরাই ফেভারিট। বাংলাদেশের বিপক্ষে সবশেষ ২০২৩ বিশ্বকাপের জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস দেয়। তা আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) কাজে দেবে। আমরা বিশ্বাস করি, নিজেদের দিনে আমরা বাংলাদেশকে হারাতে পারব। আমাদের জন্য বড় সুবিধা হল রাসেল-রায়ান দুজনই ওদের কোচ ছিল। ওরা আমাদের ভালা ধারণা দিচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের নিয়ে। হয়তো কিছু গোপান পরিকল্পনা থাকবে ম্যাচে।”
নতুন ভেন্যু
সেন্ট ভিনসেন্টে সবশেষ টি-টোয়েন্টি হয়েছিল ২০১৩ সালে উইন্ডিজ ও পাকিস্তানের মধ্যে। তবে এই মাঠ বাংলাদেশের জন্য একেবারে অচেনা নয়। ২০০৯ সালে এই মাঠেই সাকিব আল হাসান নেতৃত্ব পান মাশরাফি বিন মর্তুজা ইনজুরিতে পড়ায়। ওই একাদশে ছিলেন মাহমুদউল্লাহও। ২০১৪ সালেও এ মাঠে টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। সেবার একাদশে ছিলেন শুধু মাহমুদউল্লাহ।
দুজনের থেকেই মাঠটি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারছেন শান্তরা। তার ওপর ভালো বিষয় মাঠেই অনুশীলন করা গেছে, যে সুবিধা নিউ ইয়র্কের ম্যাচের দিন ছাড়া পায়নি বাংলাদেশ। খেলার আগের দিন মূল পিচের পাশের অনুশীলন পিচগুলোতে ব্যাটিং-বোলিং করতে পেরেছেন শান্ত-তাসকিনরা।
স্বস্তির বিষয় নিউ ইয়র্কের মতো পিচ এখানে হচ্ছে না। তাই ব্যাটাররা রানের আশা করতেই পারেন। শান্তর কথায় এমনটা বোঝা গেল, “কন্ডিশন নিউ ইয়র্কের চেয়ে ভালো। বাতাস থাকায় মনে হচ্ছে বোলাররা সুবিধা পাবে। কিন্তু ব্যাটিং করে যতটুকু বুঝলাম ভালো উইকেটে খেলা হবে। তবে যেরকমই উইকেট হোক তা মানিয়ে নিয়েই আমাদের ভালো করতে হবে।”
নিউ ইয়র্কের মতো উইন্ডিজেও বড় স্কোরের আশা না করাই ভাল। কারণ গায়ানাতে লো স্কোরিং ম্যাচ হয়েছে। তবে সেন্ট ভিনসেন্টের পিচ কেমন আচরণ করে তা দেখার জন্য ম্যাচ শুরুর অপেক্ষা করতে হবে।
একাদশ ও শান্তর সুপার এইট ভাবনা
দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের একাদশ থেকে এই ম্যাচে পরিবর্তন আসার সম্ভবনা কম। আপাতত সৌম্য সরকারের একাদশে থাকার উপায় নেই। আবার একজন ব্যাটার কমিয়ে বোলার নেয়ার ঝুঁকিও নেবে না বাংলাদেশ। তাই জাকের আলি এই ম্যাচেও টিকে যেতে পারেন।
তবে যদি উইকেটের চরিত্র বিবেচনায় একজন বোলার নিতেই হয় তবে একাদশে শেখ মেহেদি হাসানের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ ডাচদের অফস্পিন দুর্বলতা আছে। তাই মেহেদিকে কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। পাশাপাশি দ্রুত রান তোলার সামর্থ্যও আছে তার। অবশ্য বুধবার নেটে ইনজুরি ফেরত শরিফুলকে পুরো দমে বোলিং করতে দেখা গেছে নেটে। আর ভালো ভাবেই বোলিং করেছেন মাহমুদউল্লাহ। তাই দক্ষিণ আফ্রিকার মতো এই ম্যাচেও তাকে বোলিং দায়িত্ব পালন করতে দেখা যেতে পারে।
চমক হলো সাকিব আল হাসানের অনুশীলন না করা। মানে স্টেডিয়ামের মূল পিচের পাশে অনুশীলন পিচগুলো ব্যাট হাতে নামেননি সাকিব। মূল বোলার তাসকিন-শরিফুল-তানজিম সাকিব বা রিশাদদের মুখোমুখি হননি সাকিব। তাহলে মাঠের বাইরের চাপে এই অলরাউন্ডারকে একাদশ থেকে বাদ দেয়া হবে ? এই মুহুর্তে এটা বলা খুব কঠিন।
একাদশ নিয়ে অবশ্য ম্যাচের আগের দিন কোন ইঙ্গিত দেয় না বাংলাদেশ। বরং নাজমুল শান্ত জানিয়ে রেখেছেন এই ম্যাচ জিতে সুপার এইটে যাওয়ার বিশ্বাস, “আমাদের ভালো সুযোগ আছে সুপার এইটে যাওয়ার। কিন্তু ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। অবশ্যই আমরা জেতার জন্যই খেলব। যাদি আমাদের শক্তি অনুযায়ী খেলি তাহলে আমাদের সুপার এইটে যাওয়া উচিত।”
পরিশেষে
সৌম্য শক্তি অনুযায়ী খেলার কথা বলেছেন। বাংলাদেশের শক্তিটা বোলিং। আর তাওহিদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং। সে জায়গায় বিশ্বকাপে পূর্ণ নম্বর পাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু টপঅর্ডার থেকে রান না এলে ম্যাচ জেতা কঠিন হয়ে যাবে। এ কথা অধিনায়ক ভালো করেই জানেন।