Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

সেন্ট মার্টিনের যাত্রীবাহী ট্রলারে আবার গুলি  

মিয়ানমারে চলা সংঘাতের জেরে সেন্ট মার্টিন-টেকনাফ চলাচলে বিকল্প নৌপথ ব্যবহার করা হচ্ছে।
মিয়ানমারে চলা সংঘাতের জেরে সেন্ট মার্টিন-টেকনাফ চলাচলে বিকল্প নৌপথ ব্যবহার করা হচ্ছে।
[publishpress_authors_box]

সেন্ট মার্টিন থেকে টেকনাফগামী যাত্রীবাহী দুইটি ট্রলার লক্ষ্য করে মিয়ানমার থেকে গুলি চালানো হয়েছে।

বুধবার দুপুর ২টার দিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ বদরমোকাম এলাকা অতিক্রমের সময় ট্রলার দুটি লক্ষ্য করে গুলি করা হয় বলে জানিয়েছেন সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ।

তিনি বলেন, দুপুর ১২টার দিকে সেন্ট মার্টিন ঘাট থেকে ৭৫ জন যাত্রী নিয়ে টেকনাফের ‍উদ্দেশে যাত্রা দেয় এফবি নাইম ও এফবি রাশেদ নামের দুইটি ট্রলার। একসঙ্গে যাত্রা দেওয়া ট্রলার দুইটি বিকল্প নৌপথ ব্যবহার করে বঙ্গোপসাগর অতিক্রম করে নাফনদীর মোহনায় প্রবেশ করছিল দুপুর ২টার দিকে। এ সময় মিয়ানমার থেকে ট্রলার দুটি লক্ষ্য করে একের পর এক গুলি করা হয়। টানা আধা ঘণ্টা ধরে এই গুলি চলে।  

এ সময় চালকরা কৌশলে ট্রলার চালিয়ে যাওয়ায় কোনও হতাহত হয়নি, তবে ট্রলারে গুলি লেগেছে বলে জানান আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, দুপুর আড়াইটার দিকে ট্রলার দুইটি নিরাপদে শাহপরীর দ্বীপের জেটিতে অবতরণের সুযোগ পায়। ট্রলার দুইটি ঘাটে পৌঁছা পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে গুলি চলে। এ ঘটনায় দ্বীপবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

কারা গুলি করেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুর রশিদ বলেন, যতটুকু জানা গেছে মিয়ানমারের ওপারের অংশটি নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে, তারাই গুলি করেছে।

এ বিষয়ে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, “মিয়ানমার থেকে সেন্ট মার্টিনের দুইটি ট্রলারে আবারও গুলি চালানোর বিষয়টি জেনেছি। এ ব্যাপারে ঊধ্বর্তন মহলকে অবহিত করা হয়েছে। ঊধ্বর্তন মহলের সিদ্ধান্তের পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এর আগে মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের জেরে গত ১ জুন বিকালে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে রওনা হওয়া পণ্যসহ ১০ যাত্রীর এক ট্রলারকে লক্ষ্য করে মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে গুলি করা হয়।

এছাড়া গত ৫ জুন সেন্ট মার্টিনের স্থগিত হওয়া একটি কেন্দ্রে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদের ফল নির্ধারণের জন্য ভোট হয়। আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফেরার পথে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ট্রলারকে লক্ষ্য করে একই এলাকা থেকে ফের গুলি করা হয়। 

গত ৮ জুন আরও এক ট্রলারকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয় একই এলাকা থেকে। সর্বশেষ ১১ জুন একটি স্পিড বোটকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ হয়।

প্রতিবারই নৌযানগুলো গুলির শিকার হয়েছে বাংলাদেশের জলসীমায়। এসব ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দ্বীপে খাদ্য সংকট ও জরুরি আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।

গত ১২ জুন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের জরুরি সভায় বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে যাত্রীদের আসা-যাওয়া ও পণ্য নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১৩ জুন থেকে টেকনাফের সাবরাং মুন্ডার ডেইল উপকূল ব্যবহার করে শুরু হয় যাত্রীদের আসা-যাওয়া।

গত ১৪ জুন কক্সবাজার শহর থেকে দ্বীপে পণ্য নিয়ে যায় জাহাজ। আর বিকল্প পথ হিসেবে শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্ট মার্টিনে সীমিত পরিসরে কিছু নৌযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়।

এরপর থেকে কিছু দিন পর পর বিকল্প নৌপথ ব্যবহার করে সেন্ট মার্টিনে আসা-যাওয়া চলে আসছে। 

কক্সবাজারে ৫ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ

মিয়ানমার থেকে ট্রলারযোগে বঙ্গোপসাগর অতিক্রম করে ২ নারীসহ ৫ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।

কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালীপাড়া সমুদ্র উপকূলে পৌঁছার পর এই ৫ জনকে বুধবার বেলা ৩টায় আটক করেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।

বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নোয়াখালীপাড়ার ঘাটে এসে এই ৫ জনকে আটক করা হয়। বিষয়টি ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অবহিত করা হয়েছে।

চেয়ারম্যান বলেন, অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের আলিপাড়ার বাসিন্দা। এরা মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ট্রলারে ওঠে। ঘাটে পৌঁছার পর ট্রলার রেখে দালালরা পালিয়ে গেছে।

আটক হওয়া রোহিঙ্গারা হলেন, আলিপাড়ার হারুনের ছেলে এনামুল হাছান, একরাম উল্লাহর ছেলে মোশাররফ, একরামের স্ত্রী ওমমুল কাইর, একরামের ছেলে মোফশ্শর ও আবু বক্করের স্ত্রী শাহনাজ।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যান বিষয়টি তাকে অবহিত করেছেন। ৫ রোহিঙ্গাকে বিজিবি হেফাজতে নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে ট্রলারটি জব্দ করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক ছমি উদ্দিন জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ৫ রোহিঙ্গাকে আটকের বিষয়টি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
 

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত