নারায়ণগঞ্জে অটোরিকশা থেকে নেমে যাওয়ায় এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে সোনারগাঁওয়ের প্রভাকরদী মাঝেরচর স্ট্যান্ডে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া (৪০)। তিনি উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের চরনোয়াগাঁও গ্রামের সুবেদ আলী ভূঁইয়ার ছেলে। নজরুল নোয়গাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের সহসাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, মাঝেরচর স্ট্যান্ডের লাইনম্যান ও অটোরিকশাচালকরা নজরুলকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
এ নিয়ে দুইদিনের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জে দুটি পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটল। গত সোমবার সিদ্ধিরগঞ্জের চার নম্বর ওয়ার্ডের আটিগ্রাম এলাকায় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে মিলন নামে ডাকাতিসহ চার মামলার এক আসামিকে হত্যা করা হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পরিবারের সদস্যরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে ভূলতার সাপ্তাহিক হাটে যাচ্ছিলেন নজরুল ইসলাম। এজন্য প্রভাকরদী মাঝেরচর স্ট্যান্ড থেকে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ওঠেন। কিন্তু অটোরিকশা ছাড়তে দেরি হচ্ছিল। নজরুল চালককে দ্রুত যাওয়ার জন্য তাড়া দিলে তার সঙ্গে কথাকাটাকাটি শুরু হয়।
এরপর নজরুল অটোরিকশা থেকে নেমে চলে যেতে চাইলে এক লাইনম্যান তার সঙ্গে তর্কে জড়ায়। এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতি শুরু হয়। এসময় আরও কয়েকজন লাইনম্যান ও অটোরিকশা চালক এতে যোগ দেন। নজরুল অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে ফেলে চলে যায় তারা।
স্থানীয়রা অজ্ঞান অবস্থায় নজরুলকে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার মরদেহ পাঠানো হয় নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতাল থেকে নজরুলের মরদেহ নিতে এসেছিলেন বড়ভাই মোহাম্মদ আলম।
তিনি সকাল-সন্ধ্যাকে বলেন, “বাড়ির রান্নাঘরের জন্য দা-বটি কিনতে রূপগঞ্জের ভূলতার সপ্তাহিক হাটে যাওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন নজরুল। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে খবর আসে, তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে।”
মোহাম্মদ আলম জানান, নজরুল পেশায় ব্যবসায়ী ছিলেন। গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে সরিষা কিনে তা মেশিনে ভাঙিয়ে তেল বের করে তা বিক্রি করতেন। এছাড়া নজরুল পিকআপ ভ্যানও ভাড়া দিতেন। তার পরিবারে রয়েছেন, স্ত্রীসহ দুই ছেলে ও এক মেয়ে।
নজরুলকে যখন পেটানো হচ্ছিল তখন ঘটনাস্থল পার হচ্ছিলেন তার বন্ধু নবী হোসেন। তিনি বলেন, “আমি অটোরিকশায় করে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। মাঝেরচর স্ট্যান্ড পার হওয়ার সময় দেখি কিছু মানুষ কাকে যেন মারছে। প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন হবে। কয়েকজনের হাতে মোটা কাঠ ছিল। একটু সামনে অটোরিকশা থামিয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করি যে কি হয়েছে। তখন জানতে পারি, তাড়াতাড়ি অটোরিকশা ছাড়তে বলায় একজনকে মারা হচ্ছে। তখন আমি চলে আসি।”
মারধরের শিকার যে তারই বন্ধু সেটি তখনও বুঝতে পারেননি নবী হোসেন। পরে খবর পান যে, নজরুল ইসলামকেই পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আড়াইহাজার উপজেলা হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা ডা. আশরাফুল আমীন বলেন, “হাসপাতালে আনার আগেই নজরুলের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের পরে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।”
নজরুলকে যারা হত্যা করেছে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে বলে জানিয়েছেন সোনারগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান।
তিনি বলেন, “ঘটনার পরপরই জড়িতরা পালিয়ে গেছে। তাদের ধরতে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। নিহতের দাফন শেষে পরিবার মামলা করবে।”
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) চাউলাউ মারমা সকাল-সন্ধ্যাকে জানান, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ধরতে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দারাও কাজ করছেন। দ্রুতই জড়িতদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।