দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শুরু হয় ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা। তাদের মিত্ররাও এতে অংশ নেয়।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর উত্তেজনা থেমে যায়। চার দশকের বেশি সময় ধরে চলা প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের এই দ্বন্দ্ব স্নায়ুযুদ্ধ নামে পরিচিত।
সোভিয়েত ইউনিয়নকে মোকাবিলা করতে স্নায়ুযুদ্ধের শুরুতে ১৯৪৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয় সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন- ন্যাটো। স্নায়ুযুদ্ধে এই জোটের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও ন্যাটো তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যায়। সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দেশে দেশে সামরিক মহড়া পরিচালনা করে।
আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হচ্ছে ন্যাটোর এমনই এক সামরিক মহড়া। তবে এবার তাদের প্রস্তুতি ব্যাপক। বলা হচ্ছে, স্নায়ুযুদ্ধের পর এত বিশাল বহর নিয়ে ন্যাটোকে মহড়া করতে দেখা যায়নি।
রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরটি জানিয়েছে, ন্যাটোর ৩১টি সদস্যরাষ্ট্রই মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। এসব সদস্যরাষ্ট্র থেকে ৯০ হাজার সেনার অংশগ্রহণে কয়েক মাস ধরে চলবে এই মহড়া।
ন্যাটোর এই সামরিক মহড়ার নাম দেওয়া হয়েছে স্টেডফাস্ট ডিফেন্ডার ২০২৪।
ন্যাটোর দ্বিতীয় বৃহৎ সামরিক পদের নাম সুপ্রিম অ্যালাইড কমান্ডার ফর ইউরোপ। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের সেনা কর্মকর্তারা এই পদে নিয়োগ পান। বর্তমানে এই পদের দায়িত্বে আছেন ক্রিস্টোফার ক্যাভোলি।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সামনের সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া ন্যাটোর সামরিক মহড়া চলবে মে পর্যন্ত।
“স্টেডফাস্ট ডিফেন্ডার ২০২৪ হবে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় মহড়া। আনুমানিক ৯০ হাজার সেনা এতে যোগ দেবে। ন্যাটোর সব সদস্যই এতে অংশ নিচ্ছে। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার সুইডেনও মহড়ায় থাকবে।”
ক্যাভোলি আরও বলেন, “ন্যাটোর মহড়ায় কমপক্ষে ১ হাজার ১০০টি যুদ্ধযান অংশ নেবে। এসব যুদ্ধযানের মধ্যে আছে ১৩৩টি ট্যাংক, ৫৩৩টি পদাতিক যুদ্ধযান ও অর্ধশতাধিক নৌযান। প্রায় ৮০টি হেলিকপ্টার, ড্রোন ও যুদ্ধবিমানকে মহড়ায় দেখা যাবে।”
সামরিক মহড়ার বিষয়ে ন্যাটো বলেছে, “স্টেডফাস্ট ডিফেন্ডার ২০২৪-এর মাধ্যমে আমরা আমাদের শক্তি প্রদর্শন করব। বিশ্ব জানবে, ইউরোপের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে কত দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা উত্তর আমেরিকা ও জোটভুক্ত অঞ্চল থেকে সেনা ইউরোপে মোতায়েন করতে পারি।”
ন্যাটো এত বিশাল কলেবর নিয়ে শেষ সামরিক মহড়া করেছিল ১৯৮৮ সালে, স্নায়ুযুদ্ধের একেবারে উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সে সময় ১ লাখ ২৫ হাজার সেনা মহড়ায় অংশ নিয়েছিল। মহড়াটির নাম ছিল রিফোর্জার। এর অন্যতম লক্ষ্য ছিল পশ্চিম জার্মানিতে বিশাল বাহিনী মোতায়েন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ১৯৯৩ সালে রিফোর্জারের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে তার সীমান্তে ন্যাটোর সম্প্রসারণ কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এই জোটকে মস্কো বরাবরই তার অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনে হামলার আগে-পরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগ দেওয়ার তৎপরতা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অন্যতম কারণ।