Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’য় ১১.৫৬% ব্যয় বাড়িয়ে নতুন বাজেট

৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
[publishpress_authors_box]

বৈশ্বিক বাস্তবতা আর নানামুখী চাপের মধ্যে দাঁড়িয়েও ‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’য় নতুন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেছেন অশীতিপর অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা) চেয়ে ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।

এবারের বাজেটের টাকার এই অঙ্ক বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৪ দশমিক ২ শতাংশের সমান। বর্তমানে দেশের জিডিপির আকার ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা।  

বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের দেওয়া বাজেটের আকার ছিল ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের ১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি এবং জিডিপির ১৫ দশমিক ২১ শতাংশের সমান।

বৃহস্পতিবার বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী। তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থমন্ত্রী

একদিকে মূল্যস্ফীতি, আরেক দিকে রিজার্ভ সংকট; অর্থনীতির অন্য সূচকগুলোতেও আশা জাগানিয়া কিছু নেই- এই অবস্থার মধ্যে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তার নতুন সরকারের প্রথম বাজেট দিল।

৮০ বছর পেরুনো মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট এটা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম এবং দেশের ৫৪তম বাজেট।

এক সময়ের ঝানু কূটনীতিক মাহমুদ আলী তার প্রথম বাজেটের শিরোনাম দিয়েছেন ‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’।

প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। সংশোধন করে তা ৪ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

এবার এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে কর রাজস্ব থেকে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পরে ঘাটতির কারণে ২০ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়। ফলে সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছর পর্যাপ্ত তহবিল সংকট ও কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসেবে বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কাটছাঁট করা হয়। তারপরও কাঙ্ক্ষিত হারে বাস্তবায়ন হয়নি।

আসছে অর্থবছরেও সরকার প্রয়োজনের বাইরে কোনও প্রকল্প অনুমোদন দিতে চায় না। এমনকি বড় বড় প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রেও রক্ষণশীলতা বজায় রাখা হয়েছে। এমন বাস্তবতায় নতুন এডিপির আকার ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আগের মূল এডিপি থেকে যা মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা বেশি।

নতুন বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি (অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি) ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

বিদায়ী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরেছিল সরকার। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) হিসাব কষে প্রাথমিক যে তথ্য দিয়েছে, তাতে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ অর্জনের কথা বলা হয়েছে।

এবারের বাজেটে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছেন অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী। বিদায়ী বাজেটে ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। কিন্তু সে আশা পূরণ হয়নি। গত ১৫ মাস ধরে অর্থনীতির স্পর্শকাতর এই সূচক ৯ শতাংশের উপরে অবস্থান করছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরো সোমবার মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, ১২ মাসের গড় হিসাবে (২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের মে) দেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে (২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের মে) গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

প্রায় ২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটানোর পরিকল্পনা সাজিয়েছেন মাহমুদ আলী। এর মধ্যে ১ লাখ কোটি টাকার বিদেশি ঋণ এবং বাকি ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা দেশের ব্যাংকিং খাত ও অন্যান্য উৎস থেকে ঋণ দেওয়া হবে।

নতুন বাজেটে সরকারের পরিচালন ব্যয় ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৪ লাখ ৫৩ হাজার ২২৮ কোটি টাকা।

বিদায়ী অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি প্রাথমিকভাবে জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়েছিল। তবে সংশোধিত বাজেট ৭ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকায় নির্ধারণে ঘাটতি কমে জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ ঘাটতি জিডিপির সাড়ে ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ধরছেন অর্থমন্ত্রী।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত