নতুন কোচ ফিল সিমন্স বাংলাদেশের এমন পরিকল্পনা দেখে নিশ্চিত অবাক হয়েছেন। তিনি পেসারদের দেশের লোক। টেস্টে নতুন বল হাতে পেসাররা বল করবেন এটাই জানেন। কিন্তু মিরপুরে দেখলেন নতুন বল হাতে মেহেদীে হাসান মিরাজ।
সিমন্সের খেলোয়াড়ি জীবনের সময় নতুন বলে পেসারদের বল করা ব্যাকরণগত নিয়ম ছিল। সেটা টেস্ট বা ওয়ানডে যাই হোক। কিন্তু বাংলাদেশের হয়ে কোচিং ক্যারিয়ারের শুরুতেই সিমন্সকে ভিন্নতার অভিজ্ঞতা নিতে হলো। মিরপুর টেস্টে তার অধীনে একজন পেসার নিয়ে খেললো বাংলাদেশ।
টেস্টে স্পিনার দিয়ে বোলিং ওপেন করা খুব সম্ভব বাংলাদেশ শুরু করেছে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সময়। বাংলাদেশের কোচ হিসেবে প্রথম মেয়াদে অফস্পিনার সোহাগ গাজিকে দিয়ে বোলিং ওপেন করিয়েছিলেন উইন্ডিজের বিপক্ষে। ক্রিস গেইল অফস্পিনে দুর্বল ছিলেন। সোহাগ গাজি বলে আউট হয়েছেন। হাথুরুসিংহেও পরিকল্পনায় সফল ছিলেন।
সেই পরিকল্পনা থেকে এক টেস্টে সৌম্য সরকারকে একমাত্র পেসার হিসেবে খেলিয়ে দিয়েছিলেন হাথুরু। সেই সময়টা গত কয়েক বছরে অতীত হয়েছে। বাংলাদেশ বোলিং পরিকল্পনায় পেসারদের সামনে রেখেই একাদশ সাজায়। হাথুরুর পরিকল্পনা আবারও ফিরে আসার তার দ্বিতীয় মেয়াদে।
গত বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে এক পেসার নিয়ে দল সাজিয়েছিলেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাও উপমহাদেশের স্পিনিং পিচে অনভ্যস্ত। তাই মিরপুরের চলতি টেস্টে হাথুরুর পরিকল্পনা মতো এক পেসার নিয়েই খেলতো বাংলাদেশ। হাথুরু না থাকলেও ঠিক সে কাজটাই হয়তো করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও টিম ম্যানেজমেন্ট! সেখানে মাত্র চারদিন আগে বাংলাদেশ দলে যোগ দেওয়া কোচ ফিল সিমন্সের অবদান সামান্যই!
হাথুরুর ওই পরিকল্পনায় খেলতে গিয়েই চলতি টেস্টে পিচ পড়তে ভুল করে ফেলে বাংলাদেশ দল। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা এই ভুল করেনি। তারা তিন পেসারের মধ্যে দুজনকে খেলিয়েছে। নিয়মিত সদস্য লুঙ্গি এনগিডিকে না রাখলেও তার চেয়ে গতিতে পিছিয়ে থাকা উইয়ান মুলডারকে একাদশে রাখে। মিডিয়াম পেস বোলিংয়ের সঙ্গে হালকা সুইংয়েই বাজিমাত করে দিলেন এই পেসার।
মিরপুরের উইকেট এমনিতেই স্পিন সহায়ক। এখানে মিডিয়াম পেসের সঙ্গে হালকা সুইং করাতে সক্ষম বোলাররা ভালো করেন। তাই বলে ম্যাচের প্রথম দিনই উইকেট বোলারদের দিকে হাত বাড়াবে তা ভাবা ভুল। বাংলাদেশ ব্যাটাররা নিয়মিতই মিরপুরের উইকেটে খেলেন। এ উইকেট সম্পর্কে প্রোটিয়াদের চেয়ে ভালো ধারণা তাদের। তবুও ব্যাটিংয়ে নেমে প্রোটিয়াদের চেয়ে উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাটারদেরই ধারণা কম মনে হলো।
শান্তরা ভালো ভাবেই জানেন মিরপুরের উইকেটে প্রথম ইনিংসে ২৫০ করলেও ভালো স্কোর। কিন্তু নিজেদের ইনিংসে ভুল শটের অভ্যাস বানিয়ে যেভাবে উইকেট দিয়ে ফিরলেন তাতে ২৫০ করা অসম্ভব। এর সঙ্গে উইকেট ভুল পড়ারও সম্পর্ক আছে।
টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে টেস্টের প্রথম ঘণ্টায় ধৈর্য নিয়ে ব্যাট করতে ব্যর্থ হন শান্তরা। সাদমান-শান্ত আগে ভাবেই শট নিতে ব্যাট চালিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। উইকেটে টিকে থাকার লড়াইয়ে নতুন বল ফেস করতে গিয়ে পরাস্ত হলেন মুমিনুল-মুশফিক-লিটনরা। তাই শুরুর ৫ বাংলাদেশি উইকেটের সবাই ফিরলেন পেসারদের বলে এবং দিনের প্রথম ৩০ মিনিটের মধ্যেই। অথচ বাংলাদেশ দলে একজন পেসার।
দক্ষিণ অফ্রিকার ইনিংসে হাসান মাহমুদ দিনের শেষদিকে নতুন বলে উইকেট থেকে যেমন সুইং আদায় করে নিয়েছেন তাতে স্পষ্ট এই পিচে তাসকিন বা শরিফুল বল করলে সফল হতেন। যেমনটা নতুন বল হাতে প্রথম ওভারেই এইডেন মারক্রামের উইকেট নিয়েছেন হাসান মাহমুদ।
প্রোটিয়া ইনিংসের পরের দিকে অবশ্য স্পিনাররাই উইকেট এনে দিয়েছেন। কিন্তু পিচ ভুল পড়ে আগের মতো স্পিনারদের দিকে অসহায় তাকিয়ে থাকা আসলে ভুল-ই। গত কয়েক বছরের পেস বিপ্লব তৈরি করে ভালো পেসার তুলে আনার পরও তাদের ভরসা করতে না পারাও ভুল। নতুন কোচ সিমন্স হাথুরুর এই ভুল পরিকল্পনার প্রচলন থামাতে পারবেন কি?