Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
বিশ্বকাপ বাছাই

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে হারে গ্লানি নেই

WhatsApp Image 2024-06-06 at 18.10.45
[publishpress_authors_box]

উৎসাহ দেওয়ার জন্য গ্যালারিতে চেষ্টার কমতি ছিল না দর্শকদের। বিডি আলট্রাস তাদের চিরায়ত কালো পোশাক পরে বাদ্য-বাজনা নিয়ে উপস্থিত। ছিল রঙবাহারি নানা ব্যানার ও বাংলাদেশের পতাকা। এমনকি হামজা চৌধুরীকে স্বাগত জানানো একটা বড়সড়ো ব্যানারও চোখে পড়লো।

বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটিতে শুধু মাঠের লড়াইয়ের দরকার ছিল। সেই লড়াইটা বাংলাদেশ দুর্দান্তভাবেই করে দেখিয়েছে। এবার বাংলাদেশ চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছে এশিয়ান ফুটবল শক্তি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে। যদিও ম্যাচটা ২-০ তে হেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এই হারে লজ্জা নেই বরং মাথা উঁচুই থাকছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ফুটবলে এসেছে নতুন হাওয়া। বিপক্ষকে সহজে জিততে দেয় না এই দল। সঙ্গে সমশক্তির দলের বিপক্ষে জয়ও তুলে নেয়ার আত্মবিশ্বাস আছে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এর আগে ৭-০ গোলে হারের গ্লানি আছে। কিন্তু এই ম্যাচে গৌরব নিয়েই মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। আজ মাত্র একটি গোল করতে পেরেছে অস্ট্রেলিয়া। আর একটা গোল হয়েছে বাংলাদেশের ভুলে “আত্মঘাতী”।

গ্রুপের ৫ ম্যাচের সব কটিতে জয় অস্ট্রেলিয়ার। এশিয়ান কাপও নিশ্চিত করল তারা। আর ৪ হার ও ১ ড্রয়ে ১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতেই রইলো বাংলাদেশ।

জামাল ভূঁইয়াকে বাইরে রেখে এদিন একাদশ সাজিয়েছিলেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। জামালকে যদিও ৫২ মিনিটে বদলি হিসেবে নামান কোচ, চোট পেয়ে উঠে যাওয়া সোহেল রানা জুনিয়রের বদলে।

এই ম্যাচ দিয়ে চোট কাটিয়ে দলে ফেরেন শেখ মোরসালিন ও তারিক কাজী। কাবরেরা খেলিয়েছেন তিন সেন্টার ব্যাক-তপু বর্মন, মেহেদি হাসান ও তারিক কাজীকে। থ্রি-ম্যান ব্যাকলাইন কৌশলটা বেশ কাজেই দিয়েছে বলা যায়।

মেলবোর্নে গত বছর ১৬ নভেম্বর ৭-০ গোলে হারের ম্যাচে দ্রুত গোল হজম করে বাংলাদেশ। যা খেলার পরিকল্পনাই নষ্ট করে দিয়েছিল। কিন্তু এই ম্যাচে বাংলাদেশের কোচের পরিকল্পনাই ছিল দ্রুত গোল না খাওয়া। যে কারণে ৩-৫-২ ছকে খেলিয়ে বেশ সফলই হয়েছেন কাবরেরা।

এভাবে খেলার চেষ্টায় মোটামুটি সফলই বলা যায় বাংলাদেশকে। প্রথমার্ধে একের পর এক আক্রমণের পসরা সাজানো অস্ট্রেলিয়ানদের দারুণ দক্ষতায় সামলেছেন তপু বর্মণ, তারিক কাজীরা। এই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কখনও জেতেনি বাংলাদেশ। হেরেছে বড় ব্যবধানে। সেই তুলনায় এবারের স্কোরলাইন বেশ ভদ্রস্থই।

বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশ খেলেছে এশিয়ার ফুটবলের এমন একটা পরাশক্তি দলের বিপক্ষে যাদের ফিফা র‌্যাঙ্কিং ২৪। র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৬০ ধাপ পিছিয়ে তো আছেই বাংলাদেশ (১৮৪তম); ধারে, ভারে, গতি, উচ্চতা, টেকনিকে সব দিক দিয়েই পিছিয়ে।

আরও কিছু তথ্য জেনে রাখা যাক-এই অস্ট্রেলিয়া দলে গোলপোস্টের নিচে খেলেছেন গো গাউচি। অ্যাস্টন ভিলায় যিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন গোলরক্ষক আর্জেন্টিনার এমি মার্টিনেজের ছায়া হয়ে থাকেন। সেই গাউচি তো পারলে সারাক্ষণ মাঝ মাঠের ঠিক পেছনে এসে দাঁড়িয়ে রইলেন। তাকে অবশ্য কোনও পরীক্ষার মুখোমুখি করতে পারেননি শেখ মোরসালিন, রাকিব হোসেনরা।

এই অস্ট্রেলিয়ান দলে আছেন বুন্দেসলিগার দল বায়ার্ন মিউনিখের ফরোয়ার্ড নেসতরয় ইরানকুন্দা। যার অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে অভিষেক হয়ে গেল ঢাকায়। যদিও বেশ কয়েকবার বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেছেন ইরানকুন্দা। কিন্তু দুর্বল ফিনিশিংয়ে গোল করতে পারেননি।

লেস্টার সিটিতে খেলা হামজা চৌধুরীর সতীর্থ ডিফেন্ডার হ্যারি সাউতার মেলবোর্নে প্রথম গোলটাই পেয়েছিলেন। আজ যেখানে ৪টা কর্ণার পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া, সেখানে নিজের উচ্চতা কাজে লাগিয়ে একটাও গোলে করতে পারেননি সাউতার।

মাঠ ভেজা থাকায় বলা যায় বাড়তি সুবিধাই পেয়েছে বাংলাদেশ। এমন ভেজা মাঠে এবং প্রচণ্ড গরমে খেলে অনভ্যস্ত অস্ট্রেলিয়ানরা তাই খুব বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে খেলেছে সেটা বলা যাবে না।

ম্যাচের ১২ মিনিটে কর্ণার থেকে উড়ে আসা বল হেড করেন জ্যাকসন ইরভিন। ওই বলটা দারুণভাবে ফিস্ট করেন মিতুল মারমা। বারবার আক্রমণের ঢেউ তোলা অস্ট্রেলিয়া অবশ্য প্রথম গোলটি পেয়েছে ৩০ মিনিটে।

এই গোলে যতটা না কৃতিত্ব অস্ট্রেলিয়ান মিডফিল্ডার আদিন রাসটিচের, এর চেয়েও বেশি দায় বাংলাদেশ ডিফেন্ডার মেহেদি হাসানের। প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে শট নিলেন রাসটিচ। কিন্তু মেহেদি বলের দিক বদলাতে গিয়ে ঢুকিয়ে দেন নিজেদের জালেই!

আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ পরের গোলটি হজম করেছে ৬২ মিনিটে। বাম প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠা অস্ট্রেলিয়ার ডিফেন্ডার জর্দান বসের ক্রস থেকে হেডে কুসিনি ইয়েঙ্গির বল ঢোকে জালে (২-০)।

দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ কোচ বদলি হিসেবে নামিয়েছেন চন্দন রায়, শাকিল হোসেন ও রিমন হোসেনকে। যদিও এই বদলে খুব বেশি লাভ হয়নি বাংলাদেশের।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ আগের ৩ বারের মুখোমুখিতে বড় ব্যবধানেই হেরেছিল সব কটি ম্যাচেই। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর হার ০-৫ ব্যবধান। ওই বছরই ১৭ নভেম্বর হার ০-৪ গোলে। এরপর তো গত বছরে ৭ গোল হজম।

সেই তুলনায় এই স্কোর লাইনকে কি বলবেন? সত্যিই তো চমৎকার লড়াই করেই বাংলাদেশ হেরেছে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে। রাকিবদের কাছে যে চাওয়াটাই ছিল এ দেশের ফুটবলপ্রেমীদের।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত