ম্যাচের দুই ঘটনা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের অসহায় হারের কারণ। ওই দুই ঘটনায় বাংলাদেশ জিতলে ম্যাচে আশা করার মতো পথ তৈরি হতো। এর মাঝে কোনটিকে এগিয়ে রাখা যায় তা তর্কসাপেক্ষ।
৩৫ বলে অপরাজিত ৫৩ রান করা ওয়ার্নারকে ৬ রানে আউট করার সুযোগ হাতছাড়া করাটাই বেশি আক্ষেপে পোড়াতে পারে। তানজিম হাসান সাকিবের বলে ৬ রানে থাকা ওয়ার্নারের ক্যাচ ফেলেছিলেন তাওহিদ হৃদয়। এর আগে ৫৮ রানের জুটি আর বাড়তে পারেনি লিটনের আউটে।
শান্ত-লিটনের তৃতীয় ফিফটি জুটি
নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাসের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সর্বশেষ পঞ্চাশোর্ধ রান ছিল মিরপুরে। গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে ৮৪ করেন দুই ব্যাটার। যা এ জুটির সর্বোচ্চ রান। এর আগে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে অ্যাডিলেডে এ জুটির রান পঞ্চাশ ছাড়িয়েছিল। ওই ম্যাচে উদ্বোধনী জুটিতে ৬৮ রান করেন দুই ব্যাটার। এবার ৫৮ রানের জুটিতে তৃতীয়বারের মতো শান্ত-লিটন জুটি পঞ্চাশ রান করল।
টার্নিং পয়েন্ট
লিটন দাসের আউট বাংলাদেশকে দেড়শ রানের লক্ষ্য থেকে ছিটকে দেয়। অ্যাডাম জাম্পার লেগ স্ট্যাম্পের ডিলেভারিকে স্লগ সুইপে বাউন্ডারি ছাড়া করতে গিয়ে ২৫ বলে ১৬ রানে বোল্ড হন লিটন। স্কোর বোর্ডে রান তোলার আগেই উইকেট হারানোর পর শান্তর সঙ্গে ৫৮ রানের জুটিতে ১০ ওভারে ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু লিটনের বিদায়ের পর ৯ থেকে ১৩ ওভারে মাত্র ২৭ রান এসেছে। এই সময়ে তিন উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দেয়া থেকে অনেকটা দূরে ছিটকে যেতে হয়।
ক্যাচ মিস
অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ডেভিড ওয়ার্নারকে আউট করার সুযোগ এসেছিল। পয়েন্টে সেই ক্যাচটি ধরতে পারেননি তাওহিদ হৃদয়। তানজিম হাসান সাকিবের বলে ওই কাট শট খেলার সময় মাত্র ৬ রানে ব্যাট করছিলেন ওয়ার্নার।
সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই ওপেনারই অস্ট্রেলিয়াকে জয় এনে দেন। ৩৫ বলে ৩ ছক্কা ও ৫ চারে ৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন ওয়ার্নার। অথচ শুরুতেই তাকে ফেরানো গেলে ম্যাচে বেশ ভালোভাবে লড়াইয়ে থাকতো বাংলাদেশ। ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস প্রবাদটা এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য সত্যি হলো।
লিটনের কচ্ছপ গতির ইনিংস
২৫ বলে ১৬ রান করে বাংলাদেশের ইনিংসকে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছেন লিটন দাস। ওপেন করতে নেমে সাবলীল খেলতে ব্যর্থ হন। মাত্র ৬৪ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করে দলের রানের গতি কমিয়ে দেন। ইনিংসের শুরুতে নতুন বল হাতে জস হ্যাজেলউড, মিচেল স্টার্কদের খেলা সবসময়ই কঠিন। লিটন তাই ছিলেন সাবধানী।
সেই সাবধানতা একটু বেশিই দৃষ্টিকটু হয়। প্রতি বলে সিঙ্গেল নিয়েও ইনিংস দাঁড় করাতে পারতেন লিটন। কিন্তু শুরুর কয়েক ওভারে একেবারে ডট বল খেলে কাটিয়েছেন। হ্যাজেলউডের একটি ওভারে মেডেনও দেন। তাতে ৪ ওভারে মাত্র ১৭ ও পাওয়ার প্লেতে ৩৯ রান ওঠে বাংলাদেশের বোর্ডে।
শান্তর স্বস্তির রানে ফেরা
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারলেও একটি বিষয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলতে পারে বাংলাদেশ। দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত রানে ফিরেছেন। আগের তিনটি ম্যাচে তার ইনিংস ছিল যথাক্রমে ৭, ১ ও ৪। অধিনায়ককে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হয়। কিন্তু শান্তর ওই ইনিংসগুলো বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার কারণ ছিল। অবশেষে বিশ্বকাপেই রানের দেখা পেলেন অধিনায়ক। দারুণ কিছু শটে হারানোর আত্মবিশ্বাসও ফিরে পেয়েছিলেন। ৩৬ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৪১ রানে আউট হওয়ায় হাফসেঞ্চুরির সুযোগ মিস করেন।
কামিন্সের হ্যাটট্রিক
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৬০তম বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করলেন প্যাট কামিন্স। আর বিশ্বকাপে এই কীর্তি গড়া সপ্তম বোলার হয়েছে অস্ট্রেলিয়ান পেসার। ২০২১ বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত ছোট ফরম্যাটেই আইসিসি ইভেন্টে মাত্র একটি হ্যাটট্রিক ছিল। সেখানেও বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া। ২০০৭ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ব্রেট লি।
এরপর ২০২১ বিশ্বকাপে তিনটি হ্যাটট্রিক হয়। আয়ারল্যান্ডের কার্টিস ক্যাম্ফার নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে, শ্রীলঙ্কার ভানিন্দু হাসারাঙ্গা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাদা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন। সর্বশেষ ২০২২ বিশ্বকাপে আরব আমিরাতের কার্তিক মেয়াপ্পান শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ও আয়ারল্যান্ডের জস লিটল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন।