ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার ঘন কুয়াশার মধ্যে দেশটির উত্তর-পশ্চিমে যে দুর্গম এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে, সেই সম্ভাব্য জায়গা চিহ্নিত হয়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। কে কী অবস্থায় আছেন, তা এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিশ্চিত নয় দেশটির কর্তৃপক্ষ।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পর ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান ও অন্যদের খোঁজ এখনও পাওয়া যাযনি।
উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে তুষার পড়ার কারণে, তা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো–এ মন্তব্য এক সেনা কমান্ডারের।
রাইসির হেলিকপ্টার খুঁজে বের করার প্রচেষ্টার বিষয়ে ইরানের সেনাবাহিনীর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সদর দপ্তরের এক কমান্ডার বলেছেন, “আমরা তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখছি, কিন্তু আবহাওয়া খুব ঠান্ডা, কুয়াশাচ্ছন্ন ও বৃষ্টি পড়ছে। আর বৃষ্টি ধীরে ধীরে তুষার হয়ে পড়ছে।”
ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বলেছে, পূর্ব আজারবাইজানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার স্থানটি শনাক্তে সাহায্য করার জন্য তারা আরও দল পাঠিয়েছে।
৬৩ বছর বয়সী রাইসি দ্বিতীয় দফার চেষ্টায় ২০২১ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তাকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনির সম্ভাব্য উত্তরসূরি মনে করা হয়।
রবিবার বিকালের দিকে পূর্ব আজারবাইজান ও ইরান সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। সেখানে ভারি বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশার কারণে ১৫ ফুটের বেশি দূরত্বেও কিছু দেখা যাচ্ছিল না।
তবে সোশাল মিডিয়া এক্সে গ্লোব আই নিউজ নামের একটি হ্যান্ডেল থেকে করা পোস্টে বলা হয়েছে, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য সিয়াসাত ডেইলির সাংবাদিক মুবাশশির খুররমও তার এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে বলেছেন, যেকোনও সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিহতের ঘোষণা আসতে পারে।
হেলিকপ্টারে ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পূর্ব আজারবাইজানের প্রদেশের গভর্নর মালেক রহমতি এবং এ প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেমও ছিলেন।
প্রেসিডেন্টের বহরের সঙ্গে আরও দুটি হেলিকপ্টার ছিল। সেগুলো নিরাপদেই গন্তব্যে পৌঁছেছে বলে ইরনা জানিয়েছে।
ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ ভাহিদি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকারী দলের দুর্গম ওই এলাকায় পৌঁছতে সময় লাগতে পারে।
ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে থাকা কর্মকর্তারা সদরদপ্তরে ফোন করেছিলেন। ফলে এ দুর্ঘটনায় কেউ হতাহত হননি বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বিমান দুর্ঘটনার পরে প্রেসিডেন্ট রাইসি ও তার সফরসঙ্গীদের ফিরে পেতে প্রার্থনা করছেন।
ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার হোসেন সালামি ও অন্যান্য কয়েকজন সামরিক কমান্ডার বিমান দুর্ঘটনাস্থলে রয়েছেন। তারা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে জরুরি সংকট মোকাবিলায় আলোচনা করছেন।
রাইসি ও তার সঙ্গীদের উদ্ধারে তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে সহায়তা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি ও তার সফরসঙ্গীদের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।