আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্যে অগাস্টের ১৬ দিনে দেশজুড়ে ২ হাজার ১০টি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
এসব হামলার ঘটনায় তাদের হিসাবে নিহত হয়েছে নয়জন এবং ধর্ষণের শিকার হয়েছে চার নারী।
আগস্টের ৪ তারিখ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত ১৬ দিনের হিসাব নিয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে পরিষদ।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। তারপর বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতা, মন্ত্রী-এমপিদের বাড়ি ও কার্যালয়ের পাশাপাশি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে।
তিন দিন পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর এই ধরনের হামলা বন্ধে কঠোর বার্তা দেওয়া হলেও তার মধ্যেও ঘটনা ঘটে।
ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, ১৬ দিনের সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ১ হাজার ৭০৫টি। এর মধ্যে ১৫৭টি পরিবারের বাড়িতে হামলা, লুটপাট, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। কয়েকটি পরিবারের জমি জবরদখলও হয়েছে।
৬৯টি উপাসনালয়ে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
নির্মল রোজারিও বলেন, সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে খুলনা বিভাগে। সেখানে চারজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ দাবি করছে, হামলার হাত থেকে আদিবাসীরাও বাদ যায়নি। ৩৫টি পরিবারের বাড়ি-ঘর লুটপাট, ভাংচুর এবং আগুন দেওয়া হয়।
হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করার দাবি জানান নির্মল রোজারিও।
একইসঙ্গে ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করা, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অবসান ঘটানো এবং দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জন কর্মকার, ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয়, সাংগঠনিক সম্পাদক দীপঙ্কর ঘোষ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেওয়া হয়, দাবি আদায়ে শনিবার বিকাল ৪টায় ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
গত মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কাছে এই আট দফা দাবি পেশ করেছিল বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়, আট দফা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ তারা দেখতে পায়নি।
আট দাবি
১. সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হোক।
২. জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন করা হোক।
৩. অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ প্রয়োগে যাবতীয় আমলাতান্ত্রিক বাধা অপসারণ করে ট্রাইব্যুনালের রায়ের আলোকে জমির মালিকানা ও দখল ভুক্তভোগীদের বরাবরে অনতিবিলম্বে প্রত্যর্পণ করা হোক।
৪. জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সরকারে, সংসদে, জনপ্রতিনিধিত্বশীল সকল সংস্থায় অংশীদারত্ব ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হোক।
৫. দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন করা হোক (ইতোমধ্যে খসড়া বিল চূড়ান্তকৃত) ।
৬. বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন করা হোক (ইতোমধ্যে খসড়া বিল চূড়ান্তকৃত) ।
৭. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইনে যথাযথভাবে কার্যকর করা হোক।
৮. হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গাপূজায় অষ্টমী থেকে দশমী পর্যন্ত তিন দিন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমায় একদিন এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ইস্টার সানডেতে একদিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হোক।