গোয়ালিয়র শহরের সিটি সেন্টার থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরের স্টেডিয়ামে যাওয়ার কোনও সহজ পথ নেই। হয় অটোরিক্সা নিতে হবে, নয়তো নিজস্ব যান। এর ওপর হিন্দু মহাসভার ম্যাচ পণ্ডের হুমকিতে নিরাপত্তা নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত কড়াকড়ি। এত কিছু উপেক্ষা করেও স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হওয়া ম্যাচের গ্যালারি ভরে উঠলো ৫টার আগেই।
ম্যাচ ডে উপলক্ষ্যে স্টেডিয়ামে নিরাপত্তার দায়িত্বে ৫ হাজার পুলিশ। তাতে থোড়াই কেয়ার সমর্থকদের। ক্রিকেট উৎসবে গা ভাসিয়ে সবাই আনন্দে মেতেছেন বাংলাদেশ-ভারত টি-টোয়েন্টি ম্যাচে।
স্টেডিয়ামে ঢুকতে হলে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে পুলিশি ব্যারিকেডে জেরার মুখে পড়তে হয়। এরপর আধা কিলোমিটারের মতো দূরে রাখতে হয় মোটরসাইকেল বা স্কুটার। নির্ধারিত সেই জায়গায় কম করে হলেও ২০ হাজারের মতো দুই চাকার বাহন রাখা আছে।
এর কিছু আগে, স্টেডিয়ামের গেটের উল্টো দিকে নিজস্ব গাড়ি রাখার পার্কিং। সেখানেও অপেক্ষমান ১০ হাজারের মতো গাড়ি। আর এই বিশাল গাড়ি ও মোটরসাইকেলের বহর স্টেডিয়ামে ঢুকছে আড়াই কিলোমিটার দূরের লম্বা জ্যাম ঠেলে।
স্টেডিয়ামের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এডিশনাল এসপিদের একজন মানোজ ভাদোরিয়া। সকাল সন্ধ্যাকে স্টেডিয়ামের নিরাপত্তার বিষয়ে বলছিলেন, “আমরা শুধু আজকের জন্য স্টেডিয়াম এবং এই সংক্রান্ত সকল রাস্তায় মোট পাঁচ হাজার পুলিশ রেখেছি। আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে স্টেডিয়ামের প্রতিটি গেটে ১০০ জন করে সর্বক্ষণ দায়িত্বে থাকতে। মূল স্টেডিয়ামে ঢোকার গেটে ২০ জন করে উপস্থিত আছে। আর অন্যান্য দায়িত্বে আছে বাকিরা।”
স্টেডিয়ামে ঢুকতে সমর্থকদের জন্য খুব একটা বাধ্যবাধকতা রাখে না ভারতীয় পুলিশ। তবে আজকের জন্য পতাকার লাঠিও নিতে দেওয়া হচ্ছে না, একই সঙ্গে বোতলের মুখ, হেডফোনের কাভার, ব্যাগ সব নিষিদ্ধ। তারপরও যদি কোনও সমর্থক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া সরঞ্জাম নিয়ে গ্যালারিতে ঢোকে ….সেদিকে সতর্ক রাখতে ২ হাজার পুলিশ দায়িত্বে আছেন গ্যালারিতে।
২০১০ সালের পর প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ হচ্ছে গোয়ালিয়রে। ভারতের ৫৪তম ভেন্যুতে ম্যাচটি হতে যাচ্ছে অনেক নতুনের শুরুও। ভারতের যেমন বিরাট-রোহিত নেই বাংলাদেশের নেই সাকিব আল হাসান। নিজেদের দেশে এত বছর পর ক্রিকেট অথচ রোহিত-কোহলির খেলা দেখতে না পারার আক্ষেপ সবচেয়ে বড় ভারতীয় সমর্থকদের।
জীবনে প্রথমবার খেলা দেখতে আসা তরুণ বিকাশ রানা বলছিলেন, “আমরা খুব আনন্দিত যে জন্মের পর নিজেদের এলাকায় ভারতের খেলা দেখবো। আমার খুব ইচ্ছা ছিল বিরাট কোহলির খেলা দেখবো। কিন্তু হলো না। উনি আগেই অবসর নিলেন। আর আমি আগে অন্য কোনও রাজ্যে গিয়ে খেলাও দেখিনি।”
খেলা দেখতে আসা আরেক কিশোর আমান পতিদার বলছিলেন জমজমাট লড়াই দেখার কথা, “আমরা জানি বাংলাদেশ খুব ভালো ক্রিকেট খেলে। আমাদের দলে কোহলি ও রোহিত নেই আবার অনেক বড় ক্রিকেটারও নেই। এখন বাংলাদেশ ভালো খেললে জিতবে। আমরা চাইবো ভারত জিতুক। তবে যেই জিতুক আমরা উপভোগ্য ক্রিকেট দেখতে চাই।”
ভারতীয় ক্রিকেটে পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলোর একটি গোয়ালিয়র। এখানে ঘরোয়া ক্রিকেটের খেলাও তেমন হয় না। আন্তর্জাতিক ম্যাচ বা আইপিএল তো দূরের কথা। তাই রবিবারের ম্যাচটি গোয়ালিয়রবাসীর জন্য অনেক আনন্দের মুহূর্ত এনে দিয়েছে। নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থেকেও তারা এই আনন্দ উপভোগ করছেন।