প্রতি বছরই কিছু সিনেমা আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা নিয়ে মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রপ্রেমীরা অধীর অগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন সেইসবের মুক্তির আশায়। কিন্তু সব সিনেমা তো আর প্রত্যাশা পুরণ করতে পারেনা। হতাশও হতে হয় দর্শকদের। ২০২৪ সালেও কিছু সিনেমা দর্শকদের হতাশ করেছে।
জেনে নেওয়া যাক বছরের এমন ১০ সিনেমা সম্পর্কে-
সিভিল ওয়ার
সিভিল ওয়ার এক ‘ডিস্টোপিয়ান’ ভবিষ্যতের গল্প বলে। যেখানে দেখানো হয়েছে, গৃহযুদ্ধে জেরবার এক বিভক্ত আমেরিকা।গল্পে অভিজ্ঞ যুদ্ধ সাংবাদিক (ক্যার্স্ট্যান ডান্সট) লি স্মিথ, একদল সাংবাদিকের একটি দল নিয়ে নিউ ইয়র্ক সিটি থেকে রওনা দেন ওয়াশিংটন ডিসি-এর পথে। তার আশা, প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকার হয়তো নেওয়া যাবে। বিপদজনক এই যাত্রা। কারণ দেশ পার করছে এক ভয়াবহ সহিংস সময়।
ব্লকবাস্টার সিনেমার সমস্ত সম্ভাবনা নিয়েও সিভিল ওয়ার চরিত্র এবং গল্পের গভীরে যেতে পারেনি। সমালোচকদের মতে অ্যালেক্স গারল্যান্ড নির্মিত সিনেমাটি নিঃসন্দেহে ‘ভালো’, তবে একে ঘিরে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল তা পূরণ করতে পারেনি।
গ্ল্যাডিয়েটর টু
সিনেমার গল্পে দেখা যায়, মার্কাস অরেলিয়াসের মৃত্যুর ষোল বছর পর, এক নিপীড়ক শাসকের কবলে পড়ে রোম। একসময় লুসিয়াস (পল মেসকাল) ধরা পড়ে এবং বন্দি হয়। তাকেও বাধ্য করা হয় গ্ল্যাডিয়েটর হতে। কিন্তু বিদ্রোহের জন্য ফুসতে থাকা রোমের নায়ক হয়ে ওঠে এই লুসিয়াস।
গ্ল্যাডিয়েটর টু সিনেমার সবচেয়ে বড় শক্তি রিডলি স্কটের পরিচালকের আসনে ফিরে আসা। তবে একটি ক্লাসিক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা নিয়েও সিক্যুয়েলটি চরিত্রে এবং গল্পে যথাযথ আবেগ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ট্র্যাপ
পরিবার অন্তঃপ্রাণ কুপার (জশ হার্টনেট) তার মেয়ে রাইলিকে নিয়ে এক হাউসফুল পপ কনসার্টে নিয়ে যায়। কিন্তু কনসার্টে অংশ নেওয়া কেউই জানতো না এটি ছিল এফবিআই-এর পাতা ফাঁদ। এক সিরিয়াল কিলারকে ধরতেই এই কনসার্টের আয়োজন।
চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের মতে এম নাইট শ্যামালানের এই সিনেমাটি সেরা হতে গিয়েও দুর্বল অভিনয় আর চিত্রনাট্যের কারণে হতাশ করেছে অনেককেই।
ম্যাক্সিন
হলিউড এক উচ্চাশার শহর। স্বপ্নের এই শহরেই নিজেকে খুঁজে পান চলচ্চিত্র তারকা ম্যাক্সিন মিনক্স (মিয়া গথ)। তারকা হতেই তার সমস্ত সংগ্রাম।
নির্মাতা টি ওয়েস্টের ‘ম্যাক্সিন’ উপভোগ্য হলেও, সন্তোষজনক সমাপ্তি টানতে একেবারেই ব্যর্থ। তবে এর নির্মাণশৈলী বেশ দৃষ্টিনন্দন।
ড্রাইভ-অ্যাওয়ে ডলস
জীবনের যাবতীয় চাপ থেকে মুক্তি পেতে জেমি (মার্গারেট কোয়ালি) তার বন্ধু মেরিয়ানকে (জেরাল্ডিন বিশ্বনাথন) নিয়ে বের হয় রোড ট্রিপে। কিন্তু এক আকস্মিক ভুলের কারণে তারা একটি স্যুটকেসের মালিক বনে যায়। যার ভেতরে আছে অমূল্য সব জিনিসপত্র। আর তাদের পেছনে তাড়া করছে একদল অপরাধী।
ইথান কোয়েন নির্মিত ড্রাইভ-অ্যাওয়ে ডলস -এ ছিল মজাদার কমেডি ফিল্ম হয়ে ওঠার সমস্ত উপাদান। কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ততার অভাবে গল্পটি আর জমে ওঠেনি।
হরাইজন: অ্যান আমেরিকান সাগা
পুরোদস্তুর ওয়েস্টার্ন সিনেমা হরাইজন: অ্যান আমেরিকান সাগা-চ্যাপটার ওয়ান । সিনেমাটি তুলে ধরে আমেরিকার গৃহযুদ্ধ চলাকালীন সংগ্রামের গল্প। আমেরিকার ইতিহাসের এক অনুসন্ধানী ভঙ্গি আছে সিনেমার গল্পে।
নামী অভিনেতা কেভিন কস্টনার পরিচালিত সিনেমাটি গল্পের চাহিদা অনুযায়ী রস সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে। টেনশনের স্থায়ীত্বও বেশ কম।
দ্য ফল গাই
এক শারীরিক আঘাত পাওয়ার পর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির স্টান্টম্যান কোল্ট সিভার্স ( রায়ান গসলিং)- এর সামনে আচমকা এক সুযোগ এসে ধরা দেয়। (রায়ান গসলিং) এক সিনেমার প্রধান চরিত্র হঠাৎ উধাও হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গল্প এগুতে থাকে।
দ্য ফল গাই-এর পরিচালক ডেভিড লিচ। সিনেমাটির হাস্যরস কোন কোন ক্ষেত্রে আরোপিত। যা কিনা সিনেমাটির অন্যতম দুর্বলতা। বেশ কিছু ক্যারিশম্যাটিক চরিত্রের উপস্থিতি থাকলেও, এই সিনেমা খুব বেশি মানুষ মনে রাখবে না।
কুং ফু পান্ডা ফোর
কুংফু কিংবদন্তি পো (জ্যাক ব্ল্যাক) দীর্ঘদিন ধরেই পিস ভ্যালির নাগরিকদের রক্ষা করে আসছে। তবে, এই ড্রাগন ওয়ারিওর খুঁজে বেড়াচ্ছেন এক নতুন ড্রাগন ওয়ারিয়র। যাকে সে নিজেই প্রশিক্ষণ দেবে। এই অনুসন্ধানে পো এক বুদ্ধিমান শিয়াল, জেন (অওকও ফিনা) এর সাথে দেখা করে।
দুঃখজনকভাবে, কুংফু পান্ডা ফোর তার আগের সিনেমার আকর্ষণ ধরে রাখতে পারেনি। দারুণ অ্যানিমেশন সত্ত্বেও, গল্পটি প্রাপ্ত বয়স্কদের টানতে ব্যর্থ হয়েছে। আর গল্পের ধারাবাহিকতা থেকেও ছিটকে গিয়ে হারিয়েছে নিজস্বতা।
জোকার: ফোলি আ দ্যুঁ
বিদ্রোহের প্রতীক হয়ে ওঠা ক্লাউন, আর্থার ফ্লেক (জোআকিন ফিনিক্স) কে আর্কহাম স্টেটের হসপিটালে বন্দী করে রাখা হয়। সেখানেই তার লি কুইনজেল (লেডি গাগা)-এর সঙ্গে পরিচয় ঘটে।
গল্পে সিক্যুয়েলের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে না পারায় দর্শকদের বেশ হতাশ হয়েছে সিনেমাটি দেখে। টড ফিলিপ্স নির্মিত এই সিনেমাটি মুক্তির আগে এতই আলোচনায় ছিল যে অনেকেই ধারণা করেছিলেন এটি অস্কারের দৌড়ে চলে আসবে।
মেগালোপোলিস
সিনেমার গল্পের সিজার কাতালিনা (অ্যাডাম ড্রাইভার) রোমকে একটি আধুনিক ইউটোপিয়ান সমাজে পরিণত করার স্বপ্ন দেখেন। তবে তার এই চাওয়াকে সবাই স্বাগত জানায় না। শীঘ্রই, মেয়র ফ্র্যাঙ্ক সিসেরো (জিয়ানকারলো এসপোসিতো) এবং কিছু দুর্বৃত্ত নিউ রোমকে নিজেদের জন্য দখল করার উদ্দেশ্যে উঠে পড়ে লাগে।
তবে মেগালোপোলিস এর ব্যর্থতা ইতিহাসে একটি বড় ঘটনাই হয়ে থাকবে। ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার নাম দুর্দান্ত কিছু সিনেমার সঙ্গে যুক্ত। তাই এই সিনেমা নিয়ে প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, মেগালোপোলিস কোন প্রত্যাশাই পূরণ করতে পারেনি। উলটো একটি খারাপ সিনেমার উদাহরণ হয়েই থাকবে এটি।