Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

শতবর্ষে রাজ কাপুর : ভারতীয় সিনেমার ‘শোম্যান’

raj-kapoor-151224-01
[publishpress_authors_box]

দর্শক-বোদ্ধাদের কাছে ভারতীয় সিনেমার স্বর্ণযুগ আর রাজ কাপুর একই অর্থ বহন করে। কারণ রাজ কাপুর শুধুই অভিনেতা নন, তিনি ভারতীয় সিনেজগতের একজন পথপ্রদর্শক।

সেসময় একজন অভিনেতা, পরিচালক এবং প্রযোজক রাজ কাপুরের এই ইন্ডাস্ট্রিতে একছত্র অবদান ছিল। দূরদর্শী ভাবনা ও কাজে পর্দায় অসামান্য প্রতিভার ছাপ রাখা রাজ কাপুর তাই একজন কিংবদন্তি।

১৯২৪ সালে ১৪ ডিসেম্বর কাপুর পরিবারে জন্ম হয়েছিল রাজ কাপুরের। সিনেমায় নাম লেখানোই যেন তার নির্ধারিত ভবিষ্যত ছিল। বাবা পৃথ্বীরাজ কাপুর ততদিনে ভারতের মঞ্চ এবং সিনেমায় বিশেষ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন। রাজ কাপুর নিশ্চয়ই বাবার কাজ দেখেও অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তবে পর্দায় অভিনয় ও গল্পবলার ঢঙ্গে তিনি একেবারে নিজের মতো উদ্ভাসিত হয়ে ওঠেন।    

১৯৪৭ সালে রাজ কাপুরের প্রথম সিনেমা নীল কমল মুক্তি পায়। এতে তিনি মুখ্য চরিত্রে ছিলেন। আর এখান থেকে তার শোম্যান হওয়ার যাত্রা শুরু হলো। এরপর ১৯৪৯ সালে বারসাত সিনেমায় অভিনয় তাকে তারকাখ্যাতি এনে দেয়।

পরিচালক রাজ কাপুরের অভিষেক সিনেমা ছিল আগ যা ১৯৪৮ সালে মুক্তি পায়। পর্দায় গল্প পরিবেশনায় নতুনত্ব আনার দৃঢ় ছাপ রেখেছিলেন তিনি শুরুতেই। এই সিনেমা বাণিজ্য সফল না হলেও, বোদ্ধাদের কাছে তার আগামীর ভিত্তি গড়ে দিয়েছিল। এখান থেকেই সিনেমা নির্মাণের প্রথাগত ধারা ভাঙ্গার পথে হাঁটতে শুরু করেন রাজ কাপুর।

হাস্যরসের সঙ্গে সামাজিক বার্তা দেয়ার অসামান্য ধরন ছিল রাজ কাপুরের নির্মাণ শৈলীর বিশেষত্ব। ১৯৫১ সালের ‘আওয়ারা’ তার ‘ম্যাগনাম ওপাস’ অর্থ্যাৎ মহান সৃষ্টির একটি। এই সিনেমার গল্প এবং সুমধুর গানে মেতেছিল দর্শকরা। আবার এই সিনেমায় উঠে আসা দারিদ্র, ন্যায় এবং সামাজিক রীতি গভীর ভাবে ভাবিয়েছে সবাইকে।

কান ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রশংসা কুড়ানো আওয়ারা দিয়ে রাজ কাপুর আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের নাম লেখান।    

এরপর ১৯৫৫ সালে আসে শ্রী । আরও একবার প্রমাণিত হয় রাজ কাপুর কতটা চৌকষ। এই সিনেমার বিশেষ করে মেরা জুতা হ্যায় জাপানি এই প্রজন্মের জাতীয় সংগীত হয়ে উঠেছিল।  স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে আশা এবং সহনশীলতার উদাহরণ হয়ে ওঠে এই গান। সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে লড়াই করা সাধারণ মানুষের চরিত্রে রাজ কাপুর দর্শকের খুব কাছের একজন হয়ে উঠেছিলেন ক্রমশ।

পর্দায় অভিনয় ও চিত্রায়নের বিশদ ধরণ পরিবেশনের দক্ষতা ও ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতা ছিল রাজ কাপুরের।

রাজ কাপুরের ১৯৭০ সালের চলচ্চিত্র মেরা নাম জোকার অবশ্য বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু একজন শিল্পীর সামর্থ ও আবেগের গভীরতার নিদর্শন হয়ে আছে এই সিনেমায় তার কাজ। রাজ কাপুরের কাছে এই সিনেমা ছিল নিজের অভিজ্ঞতা এবং জীবন দর্শনের প্রতিফলন; যা নির্মাণ করতে ছয় বছর লেগেছিল।

শুধু বড় পর্দায় অভিনয়-পরিচালনা করেই একজন রাজ কাপুর সিনেমা জগতের মহান ব্যক্তি হয়ে ওঠেননি; তিনি ছিলেন নবাগতদের পথ সুগম করে দেয়ার কারিগর। এরমধ্যে একজন ছিলেন অভিনেত্রী নার্গিস। এই দক্ষ অভিনেত্রী নার্গিসই আবার রাজ কাপুরের প্রেরণা হয়ে ওঠেন।

রাজ কাপুরের আরকে স্টুডিও অনেকের কাছেই ভারতীয় সিনেমার সৃজনশীলতা এবং বিবর্তনের সূতিকাগার হয়ে আছে। মোট কথা দর্শক এবং সিনেমার মাঝে আবেগের সেতুবন্ধন গড়ে দিতে রাজ কাপুরের সমকক্ষ আর কেউ নেই; এ কারণেই ভারতীয় সিনেমা জগতের ‘সর্বশ্রেষ্ঠ শোম্যান’ খেতাব রাজ কাপুরের নামের সঙ্গে জ্বলজ্বল করছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত