Beta
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫

ওরা ১১ জন কী করবেন?

জাপা
[publishpress_authors_box]

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী ছিল ২৬৪ জন। কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছিল ২৬টি আসনে। আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া ২৬ সংখ্যাটিকেও চূড়ান্ত ফলাফলে কাজে লাগাতে পারেনি জাতীয় পার্টি। নির্বাচন শেষে জয় পেয়ে সংসদ সদস্য হতে যাচ্ছেন মাত্র ১১ জন।  

যারা জিতেছেন তারা সবাই সমঝোতার আসনের প্রার্থী। বাকিরা কেবল হেরেই যাননি, দুই শতাধিকের বেশি প্রার্থী জামানতও হারিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী ঢাকা-১৮ আসনের প্রার্থী শেরিফা কাদেরও। সমঝোতায় ঢাকায় এই একটি আসনই পেয়েছিল জাপা।

এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ওরা ১১ জন কী করবেন?  

ওরা ১১ জন  

বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী জাপার মোট ১১ জন নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন, দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। তারা যথাক্রমে রংপুর, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও পটুয়াখালী থেকে নির্বাচনে অংশ নেন।

এর বাইরে প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী (ফেনী-৩), হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (ঠাকুরগাঁও-৩), গোলাম কিবরিয়া (বরিশাল-৩), একেএম সেলিম ওসমান (নারায়ণগঞ্জ-৫), মো আশরাফুজ্জামান (সাতক্ষীরা-২), একেএম মোস্তাফিজুর রহমান (কুড়িগ্রাম-১) ও শরিফুল ইসলাম (বগুড়া-২) নির্বাচিত হয়েছেন। রুহুল আমিন হাওলাদার ও আশরাফুজ্জামান ছাড়া বাকিরা বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদেরও সদস্য। 

একাদশ সংসদে ছিলেন জাপার ২৩ জন। এর মধ্যে ঢাকায় সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, গাইবান্ধায় শামীম হায়দার পাটোয়ারি, ময়মনসিংহে ফখরুল ইমাম, সুনামগঞ্জে পীর ফজলুর রহমান, কুড়িগ্রামে পনির উদ্দিন আহমেদ, নীলফামারীতে আহসান আদেলুর রহমান ও রানা মোহাম্মদ সোহেল, বগুড়ায় শরিফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে লিয়াকত হোসেন খোকা, বরিশালে রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী নাসরিন জাহান রত্না, বগুড়ায় নুরুল ইসলাম তালুকদারসহ ১৪ জন নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি।

সরকার কথা রাখেনি, মন্তব্য জি এম কাদেরের

নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার যে কথা দিয়েছিল তা রাখেনি বলে উল্লেখ করেছেন জাপার চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

নির্বাচনের পরদিন সকালে রংপুরে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাসে আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। সরকার আমাদের যে কথা দিয়েছিলেন, সে কথা রাখেনি।”

সরকারের নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই নির্বাচন সরকার যেখানে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে চেয়েছে, সেখানে সুষ্ঠু করেছে। আর যেখানে তাদের লোকজনকে জেতাতে চেয়েছে সেখানে আমাদের লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও জোর করে সিল মেরে হারিয়ে দিয়েছে। সার্বিকভাবে এই নির্বাচন ভালো হয়নি।”  

জিএম
নিজের নির্বাচনী এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন জিএম কাদের

এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না বলেও মন্তব্য করেন জি এম কাদের। তারপরও ভোট প্রত্যাখ্যানের কোনও কারণ দেখেন না তিনি। জি এম কাদের বলেন, “নির্বাচনে অংশ নেওয়া ভুল না সঠিক এখনই বলা যাবে না। সময় সব বলে দিবে। সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিব। তবে ভোট প্রত্যাখ্যানের কিছু নাই। যারা জয়ী হয়েছি, আমরা ভোটের মাধ্যমে জয়ী হয়েছি।” 

কৌশলী মজিবুল হক চুন্নু 

চেয়ারম্যানের মতো এতটা খুলে কথা তিনি বলেননি জাতীয় পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু। মুঠোফোনে নির্বাচন নিয়ে সার্বিক মূল্যায়ন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে সারা বাংলাদেশের তেমন যোগাযোগ নেই। নিজের আসন নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম, ফলে সার্বিক অবস্থা জানি না।”

যদিও নিজের আসনে ভোট সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়েছে বলেই মন্তব্য তার। নির্বাচনের দিনে প্রার্থীদের বর্জন বা সমঝোতার আসনেও হেরে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দলীয় সিদ্ধান্তে কেউ বর্জন করেননি। সবাই ব্যক্তিগত জায়গা থেকে করেছে।”  

ইশতেহার প্রকাশের দিনে মজিবুল হক চুন্নু বলেছিলেন, “আমরা আওয়ামী লীগের থেকে বেশি আসনে নির্বাচন করছি। জনগণ চাইলে আমরা সরকার গঠন করব।”  

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

সেদিনের সেই বক্তব্য স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ বা তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেভাবে টাকা খরচ করেছে, তার সামনে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। আমাদের প্রার্থীরা এত টাকা খরচ করার মতো অবস্থায় ছিল না। যেসব জায়গায় সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে, সেখানেই আমরা জয়লাভ করেছি।”

তৃণমূলে থাকা ক্ষোভের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরাও কেন্দ্রীয়ভাবে কোনও ফান্ড তৈরি করতে পারিনি। আমাদের প্রার্থীদের সাহায্য করতে পারিনি। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হওয়ার এটি একটি কারণ।”

ভবিষ্যতের করণীয় বিষয়ে তিনি জানান, বুধবার তিনি এবং জি এম কাদের ঢাকায় ফিরবেন, তারপর সবাইকে নিয়ে বসে ভবিষ্যৎ করণীয় ঠিক করবেন। 

ভোটে অনিয়ম, জাল ভোটের অভিযোগ জাপা প্রার্থীদের  

ভোটে অনিয়ম, জাল ভোট, এজেন্টদের মারধর ও ভয়ভীতির অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছেন টাঙ্গাইল- ১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী, লালমনিরহাট-২ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন, লালমনিরহাট-৩ সদর আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জাহিদ হাসান, চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাজ্জাদ রশিদ, কুড়িগ্রাম-৪ আসনের (রৌমারী, চর রাজিবপুর এবং চিলমারী) জাতীয় পার্টির প্রার্থী একেএম মো, সাইফুর রহমান, জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী মীর সামছুল আলম লিপ্টন।

কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের অভিযোগ এনে নির্বাচন প্রত্যাখান করেছেন সিলেট-২ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী (লাঙ্গল) ইয়াহইয়া চোধুরী এহিয়া। সুনামগঞ্জ-৪ আসনের অন্তত ১৫ কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। ময়মনসিংহের ফুলপুরে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এনায়েত হোসেন মন্ডল ভোট বর্জন করেছেন। 

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত