Beta
রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

খালেদা জিয়ার নামে রাষ্ট্রদ্রোহ-নাশকতার ১১ মামলা বাতিল

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
[publishpress_authors_box]

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে রাষ্ট্রদ্রোহ ও নাশকতার অভিযোগে করা ১১ মামলা বাতিল করেছে হাইকোর্ট।

এসব মামলা নিয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বুধবার বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বক্তব্যের জেরে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ একটি এবং নাশকতার অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১০টি মামলা করা হয়েছিল। নাশকতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রাজধানীর দারুস সালাম থানায় ৭টি ও যাত্রাবাড়ি থানায় ৩টি মামলা করা হয়েছিল।

বুধবার আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। এ সময় আদালতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীমসহ আরও বেশ কয়েকজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানান, ২০১৫ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় নাশকতার অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাজধানীর দারুস সালাম ও যাত্রাবাড়ী থানায় এসব মামলা করা হয়। এগুলোর এফআইআরে খালেদা জিয়ার নাম ছিল না, কিন্তু চার্জশিটে তার নাম ঢোকানো হয়। হাইকোর্টের আদেশে দীর্ঘদিন ধরে এসব মামলার কার্যক্রম স্থগিত ও রুলও ছিল।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে মন্তব্যের জেরে ২০১৬ সালে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন মেহেদী রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন।

আদালতের আদেশের বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, “সবগুলো মামলায় রুল যথাযথ ঘোষণা করে মামলাগুলোর কার্যক্রম বাতিল করে দিয়েছেন আদালত। সরকারপক্ষকেও আদালত শুনেছেন।”

বাতিল হওয়া ১১টির মামলার মধ্যে একটিতে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “এ মামলাতে বেগম খালেদা জিয়াকে যে সম্পৃক্ত করা হয়েছে… আমরা আদালতকে বলেছি, কোনও প্রধানমন্ত্রীর নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা যায় না। এছাড়া ওই মামলা দায়েরের আগে সরকারের অনুমতি ছিল না।

“অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও বেগম খালেদা জিয়াকে এ মামলায় সম্পৃক্ত করে চার্জশিট দিয়েছে। এ মামলার ক্ষেত্রেও রুল দেওয়া হয়েছিল। আদালত শুনানি নিয়ে এ মামলার কার্যক্রম বাতিল করেছেন।”

আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এবং তাকে রাজনৈতিকভাবে মাইনাস করতে এসব মামলা করেছিল। কিন্তু খালেদা জিয়াকে তখন বালির ট্রাক দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। সেসব মামলা থেকে খালাস দেওয়া হলো।”

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া একটা বক্তব্য দিয়েছিলেন যে, স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা ৩০ লক্ষ, এটা নিয়ে বিতর্ক আছে। তিনি শুধু এটা বলেছিলেন। এটা কোনও অপরাধ ছিল না, রাজনৈতিক বক্তব্য ছিল।

“সেই বক্তব্য নিয়ে একজন আইনজীবী মামলা করেছিলেন। সে মামলা স্থগিত ছিল ও রুলও ছিল। কিন্তু সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সে মামলা চালিয়ে গেছে। আজকে সেই মামলার কার্যক্রম বাতিল করেছেন আদালত।”

খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, “আমরা ১৫ বছর যাবৎ বলে আসছি যে, দেশে আইনের শাসন নেই। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো ছিল বেআইনি। অর্থাৎ যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মামলাগুলো করেনি। আমাদের সেই বক্তব্য আজকে প্রমাণিত হয়েছে।”

নাশকতার মামলাগুলো মিথ্যা এবং আইন মেনে হয়নি, তাই বাতিল হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এসব মামলা ছিল প্রাইভেট প্রপার্টি ধ্বংস নিয়ে, সেগুলো নিয়ে এ ধরনের মামলা হয় না। পাবলিক প্রপার্টি হলে এ ধারায় মামলা হয়। সেগুলো জেনেও তারা এমন মামলা দিয়েছে।

“গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এ ধরনের মামলা হতে হলে শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে হবে। ম্যাডাম জিয়া সেই সময় গুলশানে অবরুদ্ধ ছিলেন। তারপরও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে, সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে শেখ হাসিনা সরকার মামলাগুলো দায়ের করেছিলেন।”

খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির দুই মামলায় কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় ছিলেন কারাগারে। এরপর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা থেকে তাকে রেহাই দেওয়া হয়।

ছয় মাস পারপর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছিল তৎকালীন সরকার। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে পরদিন ৬ আগস্ট খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত