আইপিএল জেতার পর থেকেই বেঙ্গালুরুজুড়ে বিজয়োল্লাস চলছে। বুধবার শহরে একটি রোড-শো হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা প্রশাসন বাতিল করে যানজটের কথা ভেবে।
এর বদলে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে বিজয়োল্লাসের আয়োজন করে কর্ণাটক ক্রিকেট সংস্থা। সেখানেই ঘটল মর্মান্তির দুর্ঘটনা। আনন্দ উদযাপনে মারা যান ১১ জন, আহত হয়েছে অসংখ্য বেঙ্গালুর ভক্ত।
বিজয়োল্লাসের জন্য কয়েক লাখ সমর্থক এসেছিলেন স্টেডিয়ামের বাইরে। স্টেডিয়ামে ঢোকার জন্য আলাদা পাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্টেডিয়ামের আসন সংখ্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ ছিলেন বাইরে। রাস্তায় তৈরি হয় যানজট।
পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে বিশৃঙ্খলা আরও বাড়ে। প্রাণে বাঁচতে সমর্থকরা একে-অপরকে টপকে পালাতে যান। তাতে পদপিষ্ট হয়ে মারা গেছেন ১১ জন। আহত হন ১০০ জনের বেশি। এই ঘটনায় শোক জানিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
একের পর এক সমর্থকদের যখন হাসপাতালে নিয়ে ছুটছে পুলিশ, গ্যালারিজুড়ে তখন ভিকট্রি ল্যাপ করলেন বিরাট কোহলিরা। অথচ এই আনন্দে শামিল হতে গিয়ে যাঁদের প্রাণ গেল, যাঁরা আহত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন, তাঁদের জন্য একটি শব্দও খরচ করল না আরসিবি কর্তৃপক্ষ।
প্রশ্ন উঠেছে কর্ণাটক সরকারের ভূমিকা নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া পদপিষ্ট হওয়ার খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু উপমুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমার পদপিষ্ট হওয়ার খবর শুনে স্টেডিয়ামে যেয়ে বলেছেন “পরিস্থিতি সামলানোর জন্য ৫০০০ নিরাপত্তারক্ষী ছিল। কিন্তু আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।” এমনকি ক্ষমাও চাইলেন তিনি। তারপর নিজেই স্টেডিয়ামে ঢুকে বিরাটদের সেলিব্রেশনের মধ্যমণি হয়ে রইলেন। যেন কিছুই হয়নি। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে শিবকুমারের বক্তব্য, “দুর্ঘটনার কথা ভেবে আমরা সেলিব্রেশন ১০-১৫ মিনিটেই শেষ করে দিয়েছি।”
বেঙ্গালুরু কর্তৃপক্ষের পাশে অবশ্য দাঁড়িয়েছেন বোর্ড কর্তারা। আইপিএল চেয়ারম্যান অরুণ ধুমল বলেছেন, ‘‘অত্যন্ত দুঃখজনক। স্টেডিয়ামের বাইরের ঘটনা সম্পর্কে আরসিবি কর্তৃপক্ষ কিছু জানতেন না। তাঁরা জানার পরই অনুষ্ঠান ছোট করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আমরাও বিজয় উৎসব বন্ধ করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। কর্ণাটক সরকারের কাছে পরিস্থিতি সম্পর্কে খবর ছিল কিনা, বলতে পারব না।’’
বোর্ড সচিব দেবজিৎ শইকিয়া বলেছেন, ‘‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এটা জনপ্রিয়তার নেতিবাচক দিক। ভক্তেরা প্রিয় ক্রিকেটারদের দেখার জন্য পাগলের মতো আচরণ করেন। আরসিবির আইপিএল জয়ের উৎসবের আয়োজন আরও ভাল ভাবে করা উচিত ছিল আয়োজকদের। মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘‘বেঙ্গালুরুর দুর্ঘটনা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। এই শোকের আবহে স্বজনহারাদের পাশে আছি আমি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’’
এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। কর্ণাটকের রাজ্য সরকারকে দোষী করছেন অনেকে।