Beta
বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ঘটনার দিন দেশে না থেকেও পুলিশের মামলার আসামি তারা

ss-jagannathpur-thana-sunamganj-2025
[publishpress_authors_box]

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর স্বরূপ চন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি শপিং কমপ্লেক্সের অফিস রুম থেকে গত অক্টোবরে এক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।

গ্রেপ্তার নেতার নাম আজিজুল হক সুমন। তিনি জগন্নাথপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি।

নিষিদ্ধ ঘোষিত এই সংগঠনটির সদস্যরা সেখানে গোপন বৈঠক করছিলেন এমন অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার নেতাকে এক নম্বর আসামি করে মামলা করে পুলিশ। যেখানে নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয় মোট ৫২ জনকে, যারা সবাই ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি পুলিশের। আর অজ্ঞাত আসামি করা হয় ৫০ থেকে ৬০ জনকে।

যে ৫২ জন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দাবি করে মামলা করেছে পুলিশ, তাদের মধ্যে ১২ জন ঘটনার দিন দেশেই ছিলেন না। এরা সবাই প্রবাসী, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাস করছেন।

এরা সবাই দেশে থাকার সময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এবং অভিযুক্তদের পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত করেছেন।

জগন্নাথপুর থানার তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গোপন বৈঠক করছিলেন। যেখান থেকে কেবল আজিজুল হক সুমনকে গ্রেপ্তার করা যায়।  

পরদিন ২৯ অক্টোবর ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে জগন্নাথপুর থানায় মামলা করেন উপপরিদর্শক শাহীন মিয়া।

১২ প্রবাসীর পরিবারের সদস্যদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মামলার আসামিদের মধ্যে তানিউর রহমান শাওন ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে যুক্তরাজ্যে, মিটুন দেব ওই বছরের জুন থেকে কানাডা, হুমায়ুন খাঁন ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে যুক্তরাজ্যে, সাইদুল হক পাপ্পু ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে রোমানিয়া, ফরহাদ আহমেদ ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে যুক্তরাজ্যে, লিপন আহমেদ ২০২৩ সালের মে মাস থেকে যুক্তরাজ্যে, আমির খান সাব্বির ২০২৩ সালের মার্চ মাস থেকে যুক্তরাজ্যে, রুহেল আহমেদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে যুক্তরাজ্যে, সৈয়দ আরিফ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাজ্যে, মিনহাজ আফ্রিদি ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে যুক্তরাজ্যে ও আমিনুল ইসলাম মিজু ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।

আসামিদের নাম উল্লেখ করে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, উল্লেখিত আসামিসহ অজ্ঞাত আসামিরা নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। ১১০ থেকে ১১৫ জন নেতাকর্মী জগন্নাথপুর স্বরূপ চন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি শপিং কমপ্লেক্সের অফিস রুমে গত ২৮ অক্টোবর রাতে গোপন বৈঠকে মিলিত হন। খবর পেয়ে পুলিশের দুটি টহল দল আসামিদের ধরার চেষ্টা করলে অন্য সবাই পালিয়ে গেলেও একজনকে পুলিশ আটক করে। আটক আসামি জগন্নাথপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আজিজুল হক সুমন।

এ ঘটনায় আজিজুল হক সুমনকে এক নম্বর আসামি করে ৫২ জনকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত উল্লেখ করে মামলা করে পুলিশ। 

অভিযোগে বলা হয়, এজাহারভুক্ত আসামিরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকারের পতন ও দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও ক্ষয়ক্ষতি করতে গোপন বৈঠক করে অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রমের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

আসামিরা ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (৩) ও ২৫ (ডি) ধারায় অপরাধ করেছে উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ।

এই ৫২ জনের মধ্যে ১২ প্রবাসী জগন্নাথপুর উপজেলা ছাত্রলীগ ও বিভিন্ন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “বছর-দেড় বছর ধরে তারা প্রবাসে অবস্থান করলেও উপজেলা ছাত্রলীগ ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটিতে এখনও তাদের নাম রয়েছে। ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটি দেখে আসামি করায় প্রবাসীদেরকেও আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

“১২ প্রবাসীকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত দেখিয়ে মামলার আসামি করায় বুঝতে অসুবিধা হয় না এটি একটি মিথ্যা,  সাজানো মামলা। অথচ এই মামলায় নিরপরাধ নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। একজনকে বিনা বিচারে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে রাখা হয়েছে।”

কারাগারে থাকা আজিজুল হক সুমনের চাচাতো ভাই আব্দুল কাইউম সকাল সন্ধ্যাকে জানান, কয়েকবার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও জজ আদালতে জামিন চাওয়া হলেও সুমনের জামিন নামঞ্জুর হয়েছে। তাকে রাখা হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে।

মামলার পাঁচ নম্বর আসামি তানিউর রহমান শাওন। দেশে থাকতে তিনি তিনি জগন্নাথপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি জানান, ২০২৩ সালের ২০ জানুয়ারি লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। এরপর থেকে যুক্তরাজ্যের কান্ট শহরে অবস্থান করছেন। ঘটনার দিন দেশে না থাকলেও মামলার আসামি হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। মামলার কারণে পরিবারের সদস্যদের আতঙ্কিত হওয়ার কথাও জানালেন।

মামলার নয় নম্বর আসামি, যুক্তরাজ্যে বসবাসরত হুমায়ূন খানের সঙ্গে কথা বলেছে সকাল সন্ধ্যা।

তিনি জানান, শিক্ষার্থী ভিসা নিয়ে ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে যান তিনি। এরপর থেকে সেখানেই আছেন। তবে ২০২১ সালে গঠিত জগন্নাথপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে তিনি ছিলেন বলেও জানান।

প্রবাসীদের মামলার আসামি করার বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জগন্নাথপুর থানার এসআই মো. সাকিব হোসেন কোনও কথা বলতে চাননি।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি কেবল বলেন, “আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত