গুম সংক্রান্ত দেড় হাজারের বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারিতে।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে আটকের পর গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে গত ২৭ আগস্ট গঠিত হয় এই কমিশন।
এর দুই মাস আট দিনের মাথায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানালেন, এ পর্যন্ত পাওয়া ১ হাজার ৬০০ অভিযোগের মধ্যে ৩৮৩টি যাচাই করে দেখা গেছে, ১৭২টি অভিযোগই র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার ঢাকার গুলশানে গুম কমিশনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ঘটনার বিষয়ে এরইমধ্যে ১৪০ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি মইনুল ইসলাম বলেন, “পুলিশ আসামিদের কীভাবে গ্রেপ্তার করবে, তার বিস্তারিত দিক-নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সেটা অনুসরণ করা হয়নি। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে নেওয়ার কথা থাকলেও মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর আইনের তোয়াক্কা না করে আটকে রাখা হতো।”
রাজনৈতিক কারণেই বেশিরভাগ ব্যক্তিকে গুম করা হয়েছে জানিয়ে কমিশন সভাপতি বলেন, আবার রাজনৈতিক কারণ ছাড়া স্বপ্রণোদিত হয়ে অভিযোগের বাইরেও অনেককে গুম করা হয়।
গুমের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কত সদস্য জড়িত তা জানতে চাইলে কমিশন সভাপতি বলেন, “সেই সংখ্যাটা এখনও বলা যাবে না। ৭ তারিখ থেকে বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হবে। আমরা সমন ইস্যু করে দিয়েছি। প্রথম দিন সাতজনকে ডাকা হয়েছে। তারপর তিনজন, সাতজন, পাঁচজন এভাবে চলতে থাকবে।
“এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ডিজিএফআই’র সদস্য রয়েছে। প্রাথমিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ডিজিএফআই, র্যাব, ডিবি, সিটিটিসি, সিআইডি ও পুলিশের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।”
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ৬০০ এর বেশি গুম হওয়া মানুষকে এখনও শনাক্ত করা যায়নি বলেও জানান তিনি।
গুমের ঘটনা তদন্তে গত ২৭ আগস্ট হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিশন গঠন করে সরকার।
কমিশন গঠন সম্পর্কে গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থার (পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সিআইডি, বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, এনএসআই, ডিজিএফআই, কোস্টগার্ড) কোনও সদস্য দ্বারা গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে সরকার এই কমিশন গঠন করে।
“গুমের ঘটনায় ভুক্তভোগী নিজে অথবা পরিবারের কোনো সদস্য বা আত্মীয়স্বজন বা গুমের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যেকোনো ব্যক্তি অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। সশরীর কমিশনের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে, ডাকের মাধ্যমে অথবা কমিশনের ই-মেইলে লিখিতভাবে অভিযোগ করতে পারবেন।”
সে অনুযায়ী অভিযোগ দাখিল করতে শুরু করেন ভিকটিম ও তাদের স্বজনরা। এমনকি দীর্ঘদিন ভারতে অবস্থান করা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদও তাকে গুম করার অভিযোগ কমিশনে জমা দিয়েছেন।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮ আগস্ট দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারে উদ্যোগ নেয়। গঠিত হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় গঠিত হয় গুম কমিশনও।