কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাতের মধ্যে পুলিশ হত্যামামলায় ১৭ বছর বয়সী কলেজছাত্র হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে রিমান্ডে পাঠিয়েছিল ঢাকার আদালত।
ব্যাপক সমালোচনার পর তা নিয়ে রিট আবেদন হলে হাইকোর্ট রিমান্ডের সেই আদেশ বাতিল করেছে।
রবিবার বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
ফাইয়াজকে পুলিশ সদস্য হত্যাকাণ্ডের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে চেয়ে শনিবার ঢাকার আদালতে পাঠানো হয়েছিল। তখন এক হাকিম তাকে ৭ দিন রিমান্ডের আদেশ দেন।
নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে এবারই ঢাকা কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন ফাইয়াজ।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গত ১৫ জুলাইয়ের পর সহিংসতায় গড়ালে কয়েকদিনে দেড়জুড়ে ২ শতাধিক মানুষ নিহত হয়।
এরমধ্যে যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার রায়েরবাগে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে লাশ ফুটব্রিজে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।
ওই পুলিশ সদস্য হত্যামামলায় ফাইয়াজকে গ্রেপ্তার করে হাতে রশি বেঁধে আদালতে নিয়েছিল পুলিশ, যে খবর সংবাদমাধ্যমে আসার পর সোশাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
এরপর রবিবার ‘পুলিশ হত্যা মামলায় ১৭ বছরের কিশোরকে ৭ দিনের রিমান্ড’ শিরোনামে সংবাদ প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট আবেদন হয়, যার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহদীন মালিক।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতীকার চাকমা।
হাইকোর্ট শুনানি শেষে রিমান্ডে থাকা ওই কিশোরকে দ্রুত তার বাবা-মাকে খুঁজে বের করে তাদের কাছে হস্তান্তর করতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেয়। নইলে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে আদালতে ডাকা হবে বলেও হুঁশিয়ার করা হয়।
এ সময় বিচারক বলেন, “অনেক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, কিন্তু এমন ২/১ ঘটনার জন্য পুরো বিষয়টিই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। বিচারকের এমন অপকর্মের কারণে বিচারও প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।”
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, “আপনার ছেলে হলে কি করতেন?”
শাহদীন মালিক পরে সাংবাদিকদের বলেন, “বিভিন্ন পত্রিকায় ছবি দেখি যে একজন শিশুকে এভাবে দড়ি বেঁধে পুলিশ ভ্যানে তুলছে, এটি দেখে সকাল বেলাই আমরা বিচারপতিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। তখন আদালত বলেছেন, পিটিশন আকারে নিয়ে যেতে। পরে আমরা পিটিশন নিয়ে গেলাম।
“শিশু আইন ২০১৩ যেটি আছে, এই আইনের কতগুলো স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। কাউকে যদি গ্রেপ্তার করতে হয়, তাহলে পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে তার বয়স ১৮ বছরের বেশি কি না? রিমান্ডের বিষয়ে অনেক নিয়ম আছে। আইনে স্পষ্ট করে বলা আছে, কোনও শিশুকে হাতকড়া পরানো যাবে না। এবিষয়গুলো আদালতে উপস্থাপন করেছি।”
আদালত শুনানি নিয়ে মৌখিকভাবে আদেশ দিয়েছে জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, সোমবার রিট আবেদনটি শুনানির জন্য তালিকায় আসবে।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি, আটক ব্যক্তি মাইনর, তাকে রিমান্ডে নিতে পারে না। হাইকোর্ট বলেছেন, তার রিমান্ড বাতিল করে বাবা-মার হেফাজতে দিতে। তাকে রিমান্ডে নেওয়ার সুযোগ নাই।”
জন্ম নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী ফাইয়াজের বয়স ১৭ বছর হলেও পুলিশ মামলার এজাহারে তাকে ১৯ বছর বয়সী বলে দাবি করে। বিচারিক আদালত সেই তথ্য বিবেচনায় নিয়েই কিশোর ফাইয়াজকে পুলিশ রিমান্ডে পাঠিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের শিশু আইন অনুযায়ী, ১৮ বছর বয়সকাল পর্যন্ত সবাই শিশু হিসাবে গণ্য হবে।
এদিকে হাইকোর্টের আদেশের পরপরই ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত ফাইয়াজকে শিশু হিসেবে দাবির স্বপক্ষে বয়স প্রমাণক নথিপত্র দেখে রিমান্ডের আদেশ স্থগিত করে।
ফাইয়াজের বয়স নির্ধারণ বিষয়ে শুনানি ও আদেশের জন্য শিশু আদালতে পাঠানো হয় তার বিরুদ্ধে মামলা। পরে শিশু আদালত রবিারই শুনানি নিয়ে ফাইয়াজকে শিশু ঘোষণা করে তার রিমান্ড বাতিল করে এবং তাকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেয়।