Beta
রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪

২৬ দিনেই এল প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স

ss-remittence-gfx-200624
[publishpress_authors_box]

দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ঊর্ধ্বগামী ধারা অব্যাহত রয়েছে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের পর চলতি অক্টোবর মাসেও বেশি বেশি রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংক রবিবার রেমিটেন্স প্রবাহের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবরের প্রথম ২৬ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৯৫ কোটি (প্রায় ২ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।

বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১২০ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে যা ৯০০ কোটি টাকা।

মাসের বাকি ৫ দিনে (২৭ থেকে ৩১ অক্টোবর) এই হারে এলে মাস শেষে এই অঙ্ক ২৩২ কোটি ৫০ লাখ (২.৩২ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে ঠেকবে। একক মাসের হিসাবে যা হবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।

গত বছরের অক্টোবরে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ (১.৯৭ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ২৬০ কোটি (২.৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল গত জুনে ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ (২.৫৪ বিলিয়ন) ডলার।

চলতি অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছিল। প্রতিদিনের গড় হিসাবে যা ছিল ৮ কোটি ডলার; টাকার হিসাবে ছিল ৯৬২ কোটি টাকা।

দ্বিতীয় মাস আগস্টে এসেছিল ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন)।

অর্থবছরের প্রথম তিন মাস (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৬৫৪ কোটি ২৭ লাখ (৬.৫৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি।

সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তিন মাস ২৬ দিনে ৮৪৪ কোটি ২০ লাখ (প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার) রেমিটেন্স এসেছে দেশে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জুলাইয়ে রেমিটেন্স প্রবাহে যে ধাক্কা লেগেছিল তা কেটে গেছে; এখন প্রতি মাসেই বাড়ছে দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপটে জুলাই মাসে রেমিটেন্স কমেছিল।

ওই সময় আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার জন্য সরকারকে দায়ী করে দেশে রেমিটেন্স না পাঠাতে সোশাল মিডিয়ায় কেউ কেউ প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম চলে মাত্র এক দিন। শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা দমনে ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করেছিল শেখ হাসিনার সরকার। এরপর ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল।

ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেনও বন্ধ ছিল। কয়েক দিন লেনদেন বন্ধের পর ২৪ জুলাই ব্যাংক চালু হয়। ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ১৯ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই বৈধ পথে তথা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে কোনও প্রবাসী আয় আসেনি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রেমিটেন্স প্রবাহে ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকারের; রেমিটেন্স প্রবাহেও গতি ফেরে।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) চেয়ে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি।

রিজার্ভ কমেছে

রেমিটেন্স প্রবাহে গতি আসায় গত দেড় মাস অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক রিজার্ভ ঊর্ধ্বগামী ধারায় ছিল। কিন্তু সেই রিজার্ভ ফের নিম্মগামী হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।

এক সপ্তাহ আগে ১৬ অক্টোবর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমেছে ১৩ কোটি ডলার।

গত ৯ সেপ্টেম্বর আকুর জুলাই-আগস্ট মাসের ১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা শোধের আগে ৫ সেপ্টেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার।

রেমিটেন্স বাড়ায় এবং আমদানি ব্যয় কমায় গত দেড় মাসে রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। কিন্তু এই সপ্তাহে সেই রিজার্ভ কমে ফের নিম্মগামী হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে রিজার্ভের পাশপাশি অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকের হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়।

‘সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদনে দেখা যায়, এক মাস আগে ২৫ সেপ্টেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।

এক বছর আগে গত বছরের ২৩ অক্টোবর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৬ দমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।

আমদানি ব্যয় কমায় ২০২১ সালের আগস্টে বাড়তে বাড়তে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত