দেশের ব্যাংক খাতে প্রথম বারের মতো খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকার বেশি।
গত জুন শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। যা ওই সময় পর্যন্ত ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
ওই সময় পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের এই তথ্য প্রকাশ করে।
ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যে শর্তগুলো দেয় তার মধ্যে অন্যতম হলো, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য সুদসহ ঋণের সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করা। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময় পর ঋণগ্রহীতা যদি তার নেওয়া ঋণ বা ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করেন বা করতে না পারেন তাহলে ঐ অনাদায়ী ঋণকে খেলাপি ঋণ বলা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এর আগে কখনওই ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ এত বেশি ছিল না। এর আগে মার্চ শেষে সর্বোচ্চ পরিমাণ খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।
এরপরের তিন মাসে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ৩৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা।
সেই দিক থেকে চলতি বছরের প্রথম দুই ত্রৈমাসিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬৫ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ত্রৈমাসিকে একবার করে খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষে দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা।
গত জুন শেষে মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৪৯ শতাংশ ছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৬ ব্যাংকে। এই ব্যাংকগুলো হলো, সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভোলপমেন্ট ব্যাংক। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণের ৪৭ শতাংশ ছিল বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৯৯ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতে ব্যাংক আছে ৪৩টি।
এছাড়া বিশেষায়িত দুই ব্যাংকে খেলাপি ঋণের প্রায় ৩ শতাংশ। এই ব্যাংক দুটি হলো বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। এই ব্যাংক দুটিতে খেলাপি ঋণ রয়েছে ৫ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা।
বাকি এক শতাংশ খেলাপি ঋণ বিদেশি ব্যাংকগুলোতে। যার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। বিদেশি খাতে ব্যাংক আছে ৯টি।