বিরল রোগ উইলসন্স। একটি ত্রুটিযুক্ত জিনের কারণে সৃষ্ট এই রোগ মানুষের শরীরে যায় উত্তরাধিকারসূত্রে। রোগটিতে আক্রান্ত হলে মস্তিষ্ক, যকৃত ও অন্যান্য অঙ্গে জমা হয় মাত্রাতিরিক্ত তামা।
এই রোগে আক্রান্তদের যেসব উপসর্গ দেখা দেয় তার মধ্যে রয়েছে ঢোক গিলতে সমস্যা, হাত-পা কাঁপা, হাত-পা শক্ত হয়ে যাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত ঘাড় মোচড়ানো, হাত-পা মোচড়ানো। সঠিক চিকিৎসায় রোগী সুস্থ হতে পারেন, তবে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেলে মৃত্যুও হতে পারে, বলছেন চিকিৎসকরা।
দেশে এই রোগটি বিরল হলেও চিকিৎসকদের হিসাবে ছয় হাজারের বেশি মানুষ এতে আক্রান্ত। সম্প্রতি উইলসন্স রোগের নতুন দুটি মিউটেশন শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিউরোলজি বিভাগ এবং অ্যানাটমি বিভাগের যৌথ গবেষণায় নতুন মিউটেশনের বিষয়টি ধরা পড়ে।
মঙ্গলবার বিএসএমএমইউ আয়োজিত ‘বাংলাদেশি উইলসন্স রোগীদের মধ্যে জেনেটিক পরিবর্তন এবং এর স্নায়বিক উপসর্গ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে রোগ সম্পর্কিত নানা তথ্য উঠে আসে।
গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আহসান হাবিব হেলাল এবং অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু।
লায়লা আনজুমান বানু জানান, মোট ৫০ জন রোগীর ওপর গবেষণা চালানো হয়। যার মধ্যে ২৮ জন পুরুষ, নারী ২২ জন। এদের ছয় জনের মধ্যে তিনটি মিউটেশন পাওয়া গেছে, যার মধ্যে দুইটিই বাংলাদেশে নতুন। এই রোগীদের টার্গেট জিন থেরাপির মাধ্যমে বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রতি ৩০ হাজার জনে একজন উইলসন রোগে আক্রান্ত। সেই হিসাবে রোগীর সংখ্যা ছয় হাজারের মতো। বিএসএমএমইউয়ে এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ২০০ জনের চিকিৎসা দিয়েছি। কারও মধ্যে এই রোগটি শনাক্ত হলে তাকে আজীবন চিকিৎসা নিতে হয়। সঠিকভাবে চিকিৎসা নিলে সারা জীবন ভালো থাকার সুযোগ রয়েছে। চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেলে এ রোগে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।”
পরিবারের একজনের শরীরে রোগটি শনাক্ত হলে দ্রুত অন্যদেরও পরীক্ষা করা উচিত বলে মনে করেন এই চিকিৎসক। কারণ, দ্রুত শনাক্ত করা গেলে ঝুঁকিমুক্ত থাকা সম্ভব।
ডা. আহসান হাবিব হেলাল বলেন, গবেষণার জন্য নিউরোলজি বিভাগের মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার ক্লিনিক এবং আন্তঃবিভাগীয় রোগীদের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। রোগীর শরীর থেকে তিন মিলিলিটার রক্ত সংগ্রহ করে অ্যানাটমি বিভাগের জেনেটিক ল্যাবে অ্যানালাইসিস করা হয়। সেই অ্যানালাইসিসেই পাওয়া যায় নতুন দুই মিউটেশনের তথ্য।
গবেষণায় অংশ নেওয়া রোগীদের বয়সসীমা নয় বছর থেকে ৬০ বছরের ভেতরে ছিল বলে জানান তিনি।
রোগীদের মধ্যে ঢোক গিলতে সমস্যা ছিল ২৭ জনের, হাত পায়ের কম্পন ছিল ২৮ জনের, হাত-পা শক্ত হয়ে যাওয়া ছিল ২১ জনের, অনিয়ন্ত্রিত ঘাড় মোচড়ানো সমস্যা ছিল ১৪ জনের, অনিয়ন্ত্রিত হাত-পা মোচড়ানোর সমস্যা ছিল ১১ জনের এভং নৃত্যের মতো অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়া ছিল চার জনের।
রোগটি কাদের হতে পারে জানতে চাইলে আহসান হাবিব বলেন, “যদি বাবা-মা দুজনের শরীরেই এই রোগের জিন থাকে, তাহলে সন্তানও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এজন্য আমরা নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে না করার পরামর্শ দিয়ে থাকি।”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. আতিকুর রহমানসহ অন্যরা।