দেড় বছর পর আবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার জাহাজ। বিশ্বের শীর্ষ শিপিং লাইন মেডিটেরেনিয়ান শিপিং কোম্পানির (এমএসসি) দুটি জাহাজের একটি গেছে যুক্তরাজ্যের ব্যস্ততম ফিলিক্সটো বন্দরের দিকে; যেটি পৌঁছাতে সময় লাগবে ৩০ দিন।
আরেকটি রওনা হয় পর্তুগালের সাইন্স বন্দরের উদ্দেশে। এটি গন্তব্যে পৌঁছাবে ৩৩ দিনে। দুটি জাহাজই রপ্তানি পণ্য নিয়ে গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রওনা দেয়।
সাধারণত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেইনার জাহাজ সরাসরি ইউরোপ বা আমেরিকার বন্দরে যায় না। জাহাজ প্রথমে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে পৌঁছে সেখানে কন্টেইনার নামানো হয়।
এরপর ইউরোপ-আমেরিকাগামী বড় জাহাজে সেই কন্টেইনার তুলে রওনা দেয়। এতে কন্টেইনার জাহাজ পৌঁছতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ বাড়তি সময় লাগে। আর ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে যদি জট থাকে, তাহলে অপেক্ষমান সময় আরও বেশি হয়।
বিদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর এবং চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জটের কারণে বাংলাদেশি বেশ কিছু রপ্তানি পণ্য সম্প্রতি আটকা পড়েছিল।
সেগুলো দ্রুত রপ্তানিকারকদের কাছে পৌঁছাতে এমএসসির দুটি জাহাজ ইউরোপের উদ্দেশে রওনা দেয়।
এর আগে ২০২১ সালে বিদেশি ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারের সহায়তায় চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপের বিভিন্ন রুটে ছোট জাহাজে সরাসরি কন্টেইনার জাহাজ সার্ভিস চালু করা হয়। এক বছরের মাথায় সে সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়।
এমএসসি অবশ্য বলছে, সম্প্রতি চালু হওয়া সার্ভিস নিয়মিত হবে না। বাংলাদেশে আটকে থাকা রপ্তানি পণ্যভর্তি কন্টেইনার দ্রুত বিদেশি ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে এই উদ্যোগ নিয়েছে তারা। আপাতত দুটি জাহাজে এই রপ্তানি পণ্য পাঠানো হয়েছে। একে এডহক সার্ভিস বলে।
শিপিং লাইন এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্মকর্তারা জানান, ইউরোপগামী এমএসসির ‘এলবিনসেল’ জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রওনা দেয় ১৪ সেপ্টেম্বর। জাহাজটিতে রপ্তানি পণ্যের কন্টেইনার আছে ৮৯৪ একক। সেটি সুয়েজ খাল হয়ে যুক্তরাজ্যের ফিলিক্সটো বন্দরে পৌঁছবে ১৫ অক্টোবর। জাহাজটিতে থাকা সব রপ্তানি পণ্যই বাংলাদেশি পোশাক প্রস্তুতকারকদের। তবে পণ্যগুলো কোন কোম্পানির, তা জানা যায়নি।
এমএসসির আরেকটি জাহাজ ‘এমএসসি তেইরিম’ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রওনা দেয় ১৩ সেপ্টেম্বর। এতে রপ্তানি পণ্যের কন্টেইনার আছে ১ হাজার ১৪২ একক।
জাহাজটি ভারতের তামিলনাড়ুর টুটিকোরান বন্দরে পৌঁছবে ১৮ সেপ্টেম্বর। কিছু পণ্য সেখানে নামিয়ে এরপর সরাসরি যাত্রা করবে পর্তুগালের সাইন্স বন্দরের উদ্দেশে।
সাইন্স বন্দরে পণ্য নামিয়ে জাহাজটি আরও তিনদিন সাগর পাড়ি দিয়ে যাবে স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া বন্দরে। দুদিন পর পৌঁছবে আলজেরিয়ার বেজাইয়া বন্দরে। সেখানে জাহাজটির যাত্রা শেষ।
২০২১ সালে চালু হওয়া চট্টগ্রাম-ইউরোপ রুটে পণ্য চলাচল কেন এক বছর পর বন্ধ করে দিতে হয়, এ বিষয়ে রিলায়েন্স শিপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাশেদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “তখন সমুদ্রপথে জাহাজভাড়া অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। আর ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোতে অনেক বেশি জট ছিল। এসব এড়াতে ছোট জাহাজে করে ইউরোপের বিভিন্ন বন্দরে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কন্টেইনার জাহাজ চালু করেছিলাম। পরে জাহাজজট না থাকায় আর সমুদ্রপথে জাহাজভাড়া কমে এলে এই রুট চাহিদা হারায়।”
তিনি বলেন, “এখন এমএসসি যে সার্ভিস চালু করেছে, তা হয়তো বিশেষ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে। প্রিমিয়াম ভাড়া দিয়েই হয়তো দুটি এডহক জাহাজ চালু করেছে তারা।
“এতে বিদেশি ক্রেতা এবং জাহাজ পরিচালনাকারী দুপক্ষেরই লাভ। উড়োজাহাজে করে জরুরি ভিত্তিতে এসব কার্গো নিতে গেলে অনেক বেশি খরচ গুনতে হতো বিদেশি ক্রেতাদের। তার চেয়ে কিছু প্রিমিয়াম দিয়ে এক জাহাজেই সব কার্গো নিতে পারলে অনেক টাকা সাশ্রয় হয়। তাছাড়া বাড়তি ভাড়া পেয়ে জাহাজ মালিকরা লাভবানও হয়েছেন।”