কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। শিবিরগুলোর প্রায় ২০ শতাংশ বাসিন্দার শরীরে ভাইরাসটির সংক্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ)।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সংক্রান্ত জরিপের ফলাফল জানিয়েছে সংস্থাটি।
সেখানে বলা হয়, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের প্রায় ২০ শতাংশ শরণার্থীর মধ্যে সক্রিয় হেপাটাইটিস-সি সংক্রমণ রয়েছে।
রক্তবাহিত ভাইরাস হেপাটাইটিস-সি এমন একটি রোগ যা সংক্রমিতদের মধ্যে দীর্ঘ সময়ের জন্য কোন লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই নীরব থাকতে পারে। যদি চিকিৎসা না করা হয়, এটি লিভারকে আক্রমণ করতে পারে এবং গুরুতর বা এমনকি মারাত্মক জটিল স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। যেমন সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হতাশা এবং ক্লান্তি।
এমএসএফ বলছে, ক্যাম্পে মানুষের রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার সুযোগ খুবই সীমিত। এখানের সাতটি ক্যাম্পের ৬৮০ টি পরিবারকে নিয়ে জরিপে দেখা গেছে এখানে প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ তাদের জীবনের কোনও না কোনও সময়ে হেপাটাইটিস সংক্রমণের সংস্পর্শে এসেছিল, যার মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশের রয়েছে সক্রিয় সংক্রমণ।
বাংলাদেশে এমএসএফের মিশন প্রধান সোফি বেলাক বলেন, “কয়েক দশক ধরে নিজ দেশে স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপদ চিকিৎসা পদ্ধতির অভাবের মূল্য দিতে হচ্ছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে। যে স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জামগুলি জীবাণুমুক্ত করা হয়নি, যেমন সিরিঞ্জ। এটির ব্যাপক ব্যবহার হেপাটাইটিস সি-এর উচ্চ প্রাদুর্ভাবের কারণ হতে পারে।”
সীমিতভাবে করা এই জরিপের সঙ্গে পুরো রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের তুলনা করে এমএসএফ বলছে, প্রায় পাঁচ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন বর্তমানে এইচসিভি সংক্রমণের সঙ্গে বসবাস করছে, যার আনুমানিক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮৬ হাজার।
সোফি বেলাক জানান, এমএসএফের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থেকে অনেক হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত রোগীকে ফিরিয়ে দিতে হয়। কারণ এত মানুষকে চিকিৎসা নিশ্চিতের মতো সামর্থ সংস্থার নেই।
শরনার্থীদের জন্য কোনও বিকল্প পদ্ধতি এবং সাশ্রয়ী মূল্যের চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “ক্যাম্পে আমাদের ক্লিনিকের বাইরে হেপাটাইটিস সি-র চিকিৎসা খুব কমই করা হয়। যার ফলে রোহিঙ্গারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।”
সরাসরি কার্যকর অ্যান্টিভাইরাল ওষুধগুলি ৯৫ শতাংশ আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে উল্লেখ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কক্সবাজারে জনবহুল শরণার্থী শিবিরে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস (এইচসিভি) নির্ণয় ও চিকিৎসার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। এমএসএফ গত চারবছর ধরে এর চিকিৎসা নিশ্চিত করলেও প্রয়োজন আরও বেশি।
শরণার্থীদের আইনত কাজ করার বা শিবির ছেড়ে বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই উল্লেখ করে সোফি বেলাক বলেন, “মূলত এজন্যই বেশিরভাগ শরণার্থীর রোগ নিরাময় করা যায় না এবং তাদের জন্য বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিও অবলম্বন করা যায় না; এতে তাদের ঝুঁকিও বাড়ছে।”