বিশ বছর আগে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে দলটির নেতা-কর্মীসহ ২৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় করা দুই মামলার (হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা) ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় রবিবার দেবে হাই কোর্ট।
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকার ৫৪ এবং ৫৫ ক্রমিকে রায়ের জন্য রাখা হয়েছে মামলা দুটি।
ছয় বছর আগে বিচারিক আদালতে ৪৯ জনকে দেওয়া দণ্ড বহাল থাকছে কি থাকছে না, তা জানা যাবে হাই কোর্টের এই রায়ে।
দণ্ডিত ৪৯ জনের মধ্যে ১৯ জনের সাজা মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনের সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বাকি ১১ জনের সাজা বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর তৎকালীন বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন রায় দিয়েছিলেন।
রায়ে মৃত্যুদণ্ডের দণ্ডিতদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু। এছাড়া রয়েছেন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর (হুজি) নেতারা।
রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ১৯ জনের একজন বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে থাকা তারেককে পলাতক দেখিয়েই এই বিচার হয়েছিল।
২০১৮ সালে রায়ের পর বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলা দুটির নথিপত্র হাই কোর্টে এসে পৌঁছায়, যা সংশ্লিষ্ট শাখায় ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
এরপর ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল শুনানি শুরু হয়।
বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চে মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল।
এ অবস্থায় ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভের মুখে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতি পদত্যাগ করেন। এরপর নতুন প্রধান বিচারপতি হিসাবে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত ১১ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর হাই কোর্ট বিভাগের বেঞ্চ পুনর্গঠন করেন তিনি।
পরে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ মামলা দুটি পাঠানো হয়। এ আদালতে গত ৩১ অক্টোবর থেকে মামলা দুটি শুনানি শুরু হয়ে ২১ নভেম্বর শেষ হলে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়।
বিচারিক আদালত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় ৫২ আসামির মধ্যে ৪৯ জন আসামিকে দণ্ড দেয়। তাদের মধ্যে ৭ জন রাজনীতিক, ৮ জন পুলিশ কর্মকর্তা, ৫ জন সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা এবং ২৯ জন জঙ্গি ছিলেন। অন্যান্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া বাকি ৩ আসামির নাম বাদ দেওয়া হয়।