Beta
শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

নিবন্ধিত ২৩ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ কীভাবে, উত্তর খুঁজছে পুলিশ

রোহিঙ্গা
ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের মধ্যে অস্ত্রসহ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা মিয়ানমারের সেই ২৩ নাগরিকই রোহিঙ্গা। যারা সবাই উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালংসহ বিভিন্ন রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের নিবন্ধিত বাসিন্দা। এদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী, এদের বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতেই অবস্থান করার কথা। কিন্তু মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশের সময় এদের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কীভাবে এরা সীমান্তের ওপারে গেল, কেনই বা আবার অনুপ্রবেশ করল; এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। আর সে উত্তর মেলাতেই ২৩ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান তদন্ত কর্মকর্তা।

অস্ত্রসহ অনুপ্রবেশের পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) করা মামলায় শনিবার বিকালে গ্রেপ্তার ২৩ জনকে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ফাহমিদা সাত্তারের আদালতে হাজির করা হয়েছিল। তদন্ত কর্মকর্তা প্রত্যেক আসামীর জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তবে কোনও রায় না দিয়ে বিচারক রবিবার শুনানির পরবর্তী তারিখ ঠিক করে দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উখিয়ার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাছির উদ্দিন মজুমদার বলেন, “মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশ করার সময় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ২৩ জনই উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালংসহ বিভিন্ন ক্যাম্পের বাসিন্দা। স্বাভাবিক কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে তাদের মিয়ানমারের যাওয়ার কথা না। কীভাবে তারা মিয়ানমারে গেল, তাদের হাতে অস্ত্র কোথা থেকে এল, এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া জরুরি।”

প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানান, অস্ত্র আইনে মামলা হওয়া ২৩ জনই রোহিঙ্গা। এদের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে।

তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ক্যাম্পের অনেক সন্ত্রাসীই অপরাধের পর মিয়ানমারে আত্মগোপনে চলে যায়। এরাও হয়ত তেমন কিছুই করেছিল। ফলে এদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। রিমান্ডে নিলেই এদের সম্পর্কে তথ্য জানা যাবে, এটা কোনও সংগঠনের সদস্য কিনা তাও জানা যাবে।”

গ্রেপ্তার এই ২৩ জনই শীর্ষ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেনের গ্রুপের সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, উখিয়া থানার ওসি, কক্সবাজারের পুলিশ সুপারসহ একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কমিউনিটি নেতা (মাঝি, সাব-মাঝি), ক্যাম্পগুলোয় বসবাসরত রোহিঙ্গা এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি, সীমান্ত এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।

অস্ত্রসহ অনুপ্রবেশ : মিয়ানমারের ২৩ নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা

বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের পালংখালী বিওপির নায়েব সুবেদার মো. শহিদুল ইসলামের করা অস্ত্র মামলার এজাহারে ২৩ জনের নাম-ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে।

সেই তথ্য অনুযায়ী আসামীরা হলেন-উখিয়ার বালুখালী ৮ নম্বর ক্যাম্পের মো. হোসেন আহমদ (৩০), একই ক্যাম্পের মো. রফিক (২৩), আয়াতুল্লাহ (৩০), ৯ নম্বর ক্যাম্পের মো. জুনাইদ (১৯), একই ক্যাম্পের মো. হারুন (২৩), মো. কায়সার (১৯), মো. সাবের (১৯), ১০ নম্বর ক্যাম্পের ওসামা (১৯), একই ক্যাম্পের ওমর ফারুক (১৯), মো. সাদেক (১৯), হারুন অর রশিদ (২৪), ইয়াসিন আরাফাত (১৯), মো. ইসমাইল (১৯), মো. রহিম (১৯), ১১ নম্বর ক্যাম্পের নজু মোল্লা (৩৮), ১৫ নম্বর ক্যাম্পের সৈয়দ উল্লাহ (১৯), একই ক্যাম্পের হাফেজ আহমেদ (১৯), ২০ নম্বর ক্যাম্পের মো. জোবায়ের (১৯), কুতুপালং এলাকার ৬ নম্বর ক্যাম্পের আব্দুল্লাহ (২০), একই এলাকার ৩ নম্বর ক্যাম্পের এনামুল হাসান (২২), ২ ক্যাম্পের মো. রফিক (২৪), একই ক্যাম্পের সৈয়দুল ইসলাম (২৪), ৭ নম্বর ক্যাম্পের মো. আরমান (২১)।

এদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১২টি অস্ত্র। যার মধ্যে রয়েছে এসএমজি পাঁচটি, জি-৩ রাইফেল একটি, পিস্তল দুইটি, রিভলভার চারটি। এছাড়া ১৯৮ রাউন্ড এসএমজি গুলি, ৯৮ রাউন্ড এমজি গুলি, ২৭৬ রাউন্ড রাইফেলের গুলি, ১০৩ রাউন্ড জি-৩ রাইফেলের গুলি, ১৯৩ রাউন্ড পিস্তলের গুলি ইত্যাদি।

যা বলছেন রোহিঙ্গা নেতা ও স্থানীয়রা

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নে অবস্থিত বালুখালী। সেখানে ৮, ৯, ১০ ও ১৪ নম্বর ক্যাম্প ঘিরে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন গ্রুপ।

জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের ঢেকিবনিয়ার বাসিন্দা নবী হোসেন বালুখালী ৮ নম্বর ক্যাম্পের বি ব্লকের ৪১ নম্বর ঘর বাস করতেন। তার নেতৃত্বে নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার পর একাধিক মামলা, রোহিঙ্গাদের আরও দুটি গ্রুপ আরসা ও আরএসও’র সঙ্গে বিরোধের জের ধরে নবী হোসেন তার চিহ্নিত সদস্যদের নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান।

ফলে দীর্ঘদিন চেষ্টা করলেও তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। এমনকি নবী হোসেনকে গ্রেপ্তারে তথ্য প্রদানকারিকে ১০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল বিজিবি।

পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “বিভিন্ন সময় সীমান্তের মানুষ নবী হোসেন এবং গ্রুপের সদস্যদের রহমতবিল সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে আস্তানা তৈরি করে থাকতে দেখেছেন। সেখানে মাদক মজুদ, বিভিন্ন সময় মানুষকে জিম্মি করে নির্যাতন করার অভিযোগও পাওয়া যায় নবী হোসেনের বিরুদ্ধে।”

আত্মগোপনে থাকা সেই সদস্যদেরই একটি বড় অংশ সীমান্তে সংঘাতের জেরে অস্ত্রসহ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে দাবি এই ইউপি চেয়ারম্যানের।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আলতাজ হোসেনেরও দাবি, গ্রেপ্তার ২৩ জন নবী হোসেন গ্রুপের সদস্য।

অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার জুনাইদ, ওমর ফারুক, সাবের ও জোবায়েরকে চিহ্নিত সন্ত্রাসী উল্লেখ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কমিউনিটি নেতা নুরুল হুদা জানান, এরা নবী হোসেনের বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন, “ক্যাম্পে চাঁদাবাজি, অপহরণের ঘটনার নেতৃত্ব দিতেন এরাই। এদের বিরুদ্ধে মামলাও আছে।”

ব্লকভিত্তিক রোহিঙ্গা মাঝি নেজাম মৌলভী জানান, রহিম, আরাফাত এবং নজুও নবী হোসেন গ্রুপের সন্ত্রাসী। এরা সাধারণ রোহিঙ্গাদের কাছে আতঙ্কের নাম।

নবী হোসেন গ্রুপের আধিপত্য ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ৮ এপিবিএনের সহঅধিনায়ক পুলিশ সুপার খন্দকার ফজলে রাব্বি।

তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নবী হোসেন ও তার গ্রুপের সদস্যদের গ্রেপ্তারে তৎপর।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত