Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

আট মাসে এডিপির ২৪ শতাংশ বাস্তবায়ন

চলতি অর্থ বছরের এডিপি বাস্তবায়নে মন্থরগতি দেখা দিয়েছে। ফাইল ছবি।
চলতি অর্থ বছরের এডিপি বাস্তবায়নে মন্থরগতি দেখা দিয়েছে। ফাইল ছবি।
[publishpress_authors_box]

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আট মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ৬৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা ব্যয় করতে পেরেছে সরকার।

এই ব্যয় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের মোট বরাদ্দের মাত্র ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ।

এর আগে প্রথম আট মাসে এতো কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়নি। গত অর্থ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল ৩১ দশমিক ১৭ শতাংশ।

সোমবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এই বিভাগে সদ্য নিয়োগ পাওয়া সচিব মো. তাজুল ইসলাম কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

আইএমইডির সদ্য অবসরে যাওয়া সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমাদের দীর্ঘ দিনের প্র্যাকটিস এডিপি বাস্তবায়ন প্রথম দিকে কম হবে দ্বিতীয়ার্ধে বেশি বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে সময়ের সাথে অর্থ বছরের শেষের দিকে বিশেষ করে ডিসেম্বর মাসের পর থেকে বাস্তবায়নের গতি বেড়ে যায়।”

তিনি বলেন, “আইএমইডি প্রতিবছর বাস্তবায়ন পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। সেই প্রতিবেদনে বাস্তবায়ন কম বা অর্থ বছরের শেষের দিকে গিয়ে তাড়াহুড়া করে বাস্তবায়নের কারণগুলো চিহ্নিত করে তুলে ধরা হয়।

“কিন্তু সরকার সেসব সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় না। তাই বছরের পর বছর এডিপি বাস্তবায়ন পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয় না।”

আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে চলমান প্রকল্পগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী অর্থ দিতে না পারায় এডিপি বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ে।

আইএমইডির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আসলে অন্তর্বর্তী সরকার উন্নয়নের চেয়ে রাজনীতিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশেষ করে প্রকল্প বাছাই করে অর্থায়নে মনোযোগী বর্তমান সরকার। তাই অর্থ বছরের আট মাসেও এক চতুর্থাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি।”

গত বছরের মে মাসে শেখ হাসিনার সরকার ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দিয়েছিল। বাজেট দেওয়ার পর অভ্যুত্থানে পতনের আগে এক মাস হাতে পেয়েছিল ওই সরকার।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার অর্থ বছরের শেষ ভাগে এসে এডিপি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। প্রায় সাড়ে ১৮ শতাংশ কমানোয় সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকার।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, সরকারি অর্থায়ন অংশে বাস্তবায়ন হার সবচেয়ে কম। এক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হয়েছে ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ বা ৩৪ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। এটি প্রথম আট মাসের গড় বাস্তবায়নের চেয়ে কম।

বৈদেশিক সহায়তা অংশে বাস্তবায়িত হয়েছে ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ বা ২৭ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। আর সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন অংশে বাস্তবায়িত হয়েছে ৩৯ দশমিক ৩১ শতাংশ বা পাঁচ হাজার ২২৪ কোটি টাকা।

৭ মন্ত্রণালয়/বিভাগের বাস্তবায়ন ১০ শতাংশের কম

মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক বাস্তবায়ন বিশ্লেষণে দেখা যায়, অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে সাত মন্ত্রণালয় ও বিভাগ উন্নয়ন কাজে ব্যয় করতে পেরেছে বরাদ্দের ১০ শতাংশের কম অর্থ।

বাস্তবায়নে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। ৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভাগটি ব্যয় করেছে ২০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বা শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ।

বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়। ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার বরাদ্দের বিপরীতে আট মাসে তারা ব্যয় করেছে ২ দশমিক ১৮ শতাংশ।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জন্য ৭৫৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার বরাদ্দ ছিল, বিভাগটি ব্যয় করেছে মাত্র ৩ দশমিক ৭২ শতাংশ।

এছাড়া স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ, ভূমি মন্ত্রণালয় ৬ দশমিক ৪১ শতাংশ, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ বরাদ্দ ব্যয় করেছে।

বাস্তবায়নে এগিয়ে থাকা মন্ত্রণালয়/বিভাগ

বাস্তবায়নে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে জ্বালানি ও খনি সম্পদ বিভাগ। বিভাগটির জন্য ৪ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ। প্রথম আট মাসে তারা ৩ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ৮৪ দশমিক ৩০ শতাংশ ব্যয় করেছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রথম আট মাসে ব্যয় করেছে বরাদ্দের ৭৮ দশমিক ০৬ শতাংশ। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের বাস্তবায়নের হার ৭২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। বাস্তবায়ন পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের বাস্তবায়ন হার ৪৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

বেশি বরাদ্দের ১৫ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন ২৬ শতাংশ

বেশ বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৪২ শতাংশ ব্যয় করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ৩৭ শতাংশ বরাদ্দ ব্যয় করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ ব্যয় করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

এছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগ বরাদ্দের প্রায় ৩৫ শতাংশ, কৃষি মন্ত্রণালয় প্রায় ৩০ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রায় ২৭ শতাংশ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ২৪ শতাংশ, রেলপথ মন্ত্রণালয় ২২ শতাংশ, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ ১৯ শতাংশ এবং সেতু বিভাগ প্রায় ১৯ শতাংশ ব্যয় করেছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত