Beta
রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫
Beta
রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫

বাংলাদেশে ২৯ মিলিয়ন ডলার গেছে নাম না জানা প্রতিষ্ঠানে : ট্রাম্প

হোয়াইট হাউসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্প।
[publishpress_authors_box]

ডোনাল্ড ট্রাম্পের জারি করা নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা স্থগিতের ফলাফল নিয়ে যখন চলছে আলোচনা, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর বাজেটে চলছে কাঁটছাঁট ঠিক তখনই বাংলাদেশে সহায়তা সম্পর্কে নতুন তথ্য দিলেন তিনি।

নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলছেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার জন্য নেওয়া একটি প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছিল। তার দাবি অনুযায়ী, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ এমন প্রতিষ্ঠানের কাছে গেছে যেখানে কাজ করেন মাত্র দুজন।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করতে ২৯ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে এমন এক ফার্মকে, যার নাম আগে কেউ শোনেনি।”

শুক্রবার হোয়াউট হাউসে দেশটির গভর্নরদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠান ‘গভর্নরস ওয়ার্কিং সেশন’-এ এসব কথা বলেন তিনি। সেখানে ভারত, নেপাল, সার্বিয়াসহ অন্যান্য দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা দেওয়ার প্রসঙ্গেও কথা বলেন ট্রাম্প।

এরই মধ্যে তার সেই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভিডিওতে ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, “(তারা)২৯ মিলিয়ন ডলার (২ কোটি ৯০ লাখ) পেয়েছে। তারা একটি চেক পেয়েছে। আপনি কল্পনা করুন যে, আপনার একটি ছোট প্রতিষ্ঠান আছে যেটির জন্য এখান থেকে ১০ হাজার, ওখান থেকে ১০ হাজার ডলার জোগাড় করছেন। তারপর একদিন তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে ২৯ মিলিয়ন ডলার পেয়ে গেলেন। অথচ ওই প্রতিষ্ঠানে মাত্র দুজন কাজ করে।

“দুজন লোক, আমার মনে হয় তারা এখন খুবই আনন্দিত। কারণ তারা অনেক ধনী। দুর্দান্ত এই প্রতারণার জন্য শিগগিরই হয়ত তারা কোনও ব্যবসায়িক ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদেও ঠাঁই পাবে।”

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল যে, নির্বাচিত হলে তিনি বৈদেশিক সহায়তা বাতিল করবেন। নির্বাচিত হওয়ার পর ঠিক সেটাই করেছেন তিনি।

সরকারের ব্যয় কমানো এবং কর্মী ছাঁটাইয়ে ধনকুবের ইলন মাস্কের নেতৃত্বে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডিওজিই)’ নামে একটি নতুন দপ্তর চালু করেন ট্রাম্প। মূলত এই দপ্তরের সুপারিশেই বাংলাদেশসহ মোট ১৭টি আন্তর্জাতিক সাহায্য কর্মসূচি বাতিল করা হয়।

১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যেসব রাজনৈতিক-সামাজিক প্রকল্পে অর্থায়ন করে আসছিল, তার একটি তালিকা দিয়ে এসবে আর ডলার খরচ না করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র।

সেই তালিকাতেই পাওয়া যায় বাইডেন প্রশাসনের আমলে গ্রহণ করা ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট শক্তিশালীকরণ’ কর্মসূচির নাম, যেটিতে দেওয়া হতো ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

নিজের বক্তৃতায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কথা বলার ঠিক আগ মুহূর্তেই ভারতেও যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া একই ধরনের সহায়তা নিয়ে কথা বলেন ট্রাম্প।

যে কর্মসূচিতে অর্থায়ন

যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সংস্থা- ইউএসএআইডি এবং যুক্তরাজ্যের সহায়তা সংস্থা- ডিএফআইডির অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছিল ‘স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ প্রোগ্রাম (এসপিএল) বা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট শক্তিশালীকরণ কর্মসূচি।

এটি বাস্তবায়ন করছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল (ডিআই)। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি বিশ্বে নির্বাচনী গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষে কাজ করে আসছে।

বাংলাদেশে এসপিএল কর্মসূচির আওতায় রাজনৈতিক দলের সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাজনৈতিক সহিংসতা কমানোর পাশাপাশি দল ও নির্বাচনী এলাকার মধ্যে সংযোগ জোরদার করার জন্য কাজ করা হতো।

এর আগে গ্রহণ করা ‘ডেমোক্রেটিক পার্টিসিপেশন অ্যান্ড রিফর্ম’ বা গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও সংস্কার কর্মসূচির ওপর ভিত্তি করে এই এসপিএল গ্রহণ করা হয়।

এসপিএলের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক দলের কর্মী এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন নাগরিকদের সমর্থন অব্যাহত রাখা; যাতে তারা কার্যকর নেতা হওয়ার জন্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির পক্ষে সমর্থন করার জন্য এবং সংঘাত প্রশমনের জন্য একে অপরের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে জড়িত হওয়ার প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে।

এসপিএলের অধীনে গ্রামীণ, বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারী, যুব ও তৃণমূল স্তরের কর্মীদের অন্তর্ভুক্তিকে আরও ভালোভাবে সমর্থন করার জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে সাতটি বিভাগীয় অফিস পরিচালনা করা হতো।

এসপিএলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক কাঠামো উন্নত করতে, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রতিনিধিত্বমূলক নেতৃত্ব গড়ে তুলতে, তাদের নির্বাচনী এলাকার চাহিদা বোঝার জন্য দলগুলোর ক্ষমতা উন্নত করতে এবং প্রান্তিক নারী ও যুব সমাজের কাছে আরও কার্যকরভাবে পৌঁছাতে কাজ করে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্বচ্ছ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া জোরদার করার জন্য জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ে স্বাধীনভাবে দলীয় সম্মেলন করার জন্য দলগুলোর ক্ষমতা তৈরিতে কবাজ করেছে এসপিএল।

রাজনৈতিক দল, তৃণমূল স্তরের কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সম্পৃক্ত করে শান্তিপূর্ণ প্রচার করে রাজনৈতিক সহিংসতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার বিষয়টিও এসপিএলের লক্ষ্য ছিল। 

এছাড়া ইউএসএইডের ইয়ং লিডার্স ফেলোশিপ প্রোগ্রাম (ওয়াইএলএফপি) এসপিএলের অন্যতম উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম, যা তরুণ রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বলে কর্মসূচির বিবরণে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত